চট্টগ্রামে ধারাবাহিকভাবে শিশু খুন হওয়ার ঘটনায় সারা দেশে নিন্দা, প্রতিবাদের ঝড় উঠেছিল। ঘাতকের হাতে আরিয়ান, আয়াত, সুরমা, বর্ষারা অকালে প্রাণ হারায়। সেই তালিকায় ছিল আরেক শিশু নুসরাত জাহান তরী। তরীকে ২৭ জুন ২০২১ চট্টগ্রাম নগরের চান্দগাঁও থানার বাহির সিগন্যাল মোড়ের নিজ বাসায় রেখে প্রতিদিনের মতো কর্মস্থলে যান মা ফাতেমা বেগম।
দুপুরে ফিরে খাটের নিচে সন্তানের লাশ পান ফাতেমা। চার বছর অপেক্ষার পর অবশেষে খুনি রাসেল হোসেন শেখ চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবু বক্কর সিদ্দিকের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। শনিবার (৭ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় বিষয়টি নিশ্চিত করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইতে কর্মরত পুলিশ পরিদর্শক মর্জিনা আক্তার মরজু। তিনি বলেন, আসামি রাসেল হোসেন শেখ শনিবার বিকেলে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। জবানবন্দিতে তরীকে হত্যার বিষয়টি স্বীকার করেছে। তরী হত্যার দুই দিনের মাথায় ইমন নামে এক কিশোরকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। কিন্তু পিবিআই তদন্তে নেমে ডিএনএ প্রোফাইল করে। ডিএনএ প্রোফাইলে ইমনের ডিএনএর সঙ্গে না মেলায় পুলিশের তদন্তে নেয় ভিন্ন মোড়। দীর্ঘ তদন্ত শেষে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন রাসেল হোসেন শেখকে গ্রেপ্তার করলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তরীকে ধর্ষণ ও হত্যার বিষয়টি স্বীকার করে।
অপরদিকে একই বছর ১৮ সেপ্টেম্বর নগরীর বন্দর থানা পুলিশ পোর্ট কলোনির একটি পরিত্যক্ত ভবন থেকে শিশু সুরমার মরদেহ উদ্ধার করে। ১৩ অক্টোবর রাতে শিশু সুরমার খুনের দায়ে টিম বন্দর থানা রিকশাচালক ওসমান হারুন মিন্টুকে গ্রেপ্তার করে। মিন্টু বিরিয়ানির লোভ দেখিয়ে শিশু সুরমাকে ধর্ষণ ও খুন করেছিল বলে স্বীকার করে। ২৪ অক্টোবর ২০২২ বাসা থেকে ২০ টাকা নিয়ে বিস্কুট কিনতে বের হয়ে আর ঘরে ফেরেনি নগরীর জামালখানস্থ কুসুমকুমারী স্কুলের প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী মারজানা হক বর্ষা।
তিন দিন পর শিকদার হোটেলের পেছনের নালা থেকে শিশু বর্ষার বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। প্রভাবশালীরা বর্ষার খুনের ঘটনা ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করা চেষ্টা করলেও তৎকালীন এসি কোতোয়ালি মুজাহিদুল ইসলামের বিচক্ষণতায় টিম কোতোয়ালির হাতে ওই রাতেই গ্রেপ্তার হয় খুনি লক্ষ্মণ। ১৫ নভেম্বর ইপিজেড থানার বন্দরটিলার নয়ারহাট বিদ্যুৎ অফিস এলাকার বাসা থেকে পার্শ্ববর্তী মসজিদে আরবি পড়তে যাওয়ার সময় নিখোঁজ হয় আলিনা ইসলাম আয়াত। পরদিন এ ঘটনায় ইপিজেড থানায় নিখোঁজের ডায়েরি করেন তার বাবা সোহেল রানা। ইপিজেড থানার পাশাপাশি তদন্তে নামে পিবিআই। পিবিআই গত ২৪ নভেম্বর রাতে আবিরকে আটকের মাধ্যমে হত্যার রহস্য উন্মোচনের পাশাপাশি সপ্তাহব্যাপী সাগরপাড়ে তল্লাশি চালিয়ে উদ্ধার করে শিশু আয়াতের শরীরের বিভিন্ন অংশ। আয়াতকে ফুসলিয়ে নিয়ে তার দেহ ৬ টুকরো করেছিল খুনি আবির আলী।
সারা দেশে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করা চট্টগ্রামের পাঁচ শিশু হত্যার চারজনের হত্যা-রহস্য উদঘাটন হলেও ২০২০ সালের ২৭ অক্টোবর খুন হওয়া ৬ বছরের শিশু মেহেরাজ ইসলাম আরিয়ান হত্যার কারণ এখনো রহস্যেঘেরা। আরিয়ান পাহাড়তলী থানার শাপলা আবাসিক এলাকার বায়তুল হুদা হাজী সুফিয়ান সাবেরা মাদরাসা গলি থেকে নিখোঁজ হয়েছিল এবং পরদিন পাশের ডোবায় তার লাশ পাওয়া যায়। ময়নাতদন্তে উঠে আসে তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছিল। সেই মামলাটিও তদন্ত করছে পিবিআই।

