নিজস্ব প্রতিবেদক : বাগেরহাটের চারটি সংসদীয় আসনের মাঝে দুটি সংসদীয় আসনে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে বিএনপি। বাগেরহাট-২ (সদর ও কচুয়া) আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছেন বাগেরহাট জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার শেখ মোহাম্মদ জাকির হোসেন। অপরদিকে বাগেরহাট-৩ (রামপাল–মংলা) আসনে বিএনপির দলীয় প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছেন বাগেরহাট জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম। শনিবার (২০ ডিসেম্বর) দুপুরে মনোনয়নপ্রাপ্ত এই দুই নেতা তাদের ব্যক্তিগত ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডি থেকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তবে বাগেরহাট-১ ও বাগেরহাট-৪ আসনের প্রার্থী চুড়ান্তের ব্যাপারে কোন তথ্য জানা না গেলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাগেরহাট-১ আসনের হয়ে মনোনয়ন সংগ্রহের রশিদ বই ও শনিবার (২০ ডিসেম্বর) বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে মতবিনিময় সভায় কপিল কৃষ্ণ মন্ডলের উপস্থিতি দেখে ফকিরহাট-মোল্লাহাট-চিতলমারী তথা বাগেরহাট-১ আসনের নেতাকর্মীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। অনেকেই বলছেন, এই আসনে আওয়ামী লীগের কোন দোসরকে এ অঞ্চলের মানুষ কোনভাবেই গ্রহণ করবেনা। আশা করি দল সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করবে না। কপিল কৃষ্ণ মন্ডলকে কেউ চিনেনা।
দল যদি সাবেক এই আওয়ামী লীগ নেতাকে দলীয় নমিনেশন দেন তবে এ অঞ্চলের রাজনীতি থমকে যাবে এবং দলের উপর সাধারণ মানুষের যে আস্থা সেটি আর থাকবেনা। এমডি আকতার নামের আইডি থেকে ইঞ্জিঃ মাসুদ রানা'র দলের আন্দোলনে সক্রিয় থাকার একটি ছবি এবং কপিল কৃষ্ণ মন্ডললের সাথে পতিত আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের হ্যান্ডশেকের ছবি শেয়ার করে মাসুদ রানাকে উদ্দেশ্য করে লিখেন, এই রক্ত না ঝড়িয়ে হ্যান্ডশেখ করাই ভাল ছিল ভাই। সোহেল মাহমুদ নামের এক ব্যক্তি ভিডিও পোশট করে ক্যাপশনে লিখেন, বাগেরহাট-১ আসন থেকে কোন আওয়ামী লীগ ফ্যাসিস্টকে আমরা সমর্থন করবনা। এমডি মনিরুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি কপিল কৃষ্ণ মন্ডলের সাথে ওবায়দুল কাদের হ্যান্ডশেকের ছবি, বাগেরহাট-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও পতিত সরকারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার চাচাতো ভাই শেখ হেলাল উদ্দিনের সাথে বসে থাকা ছবি এবং চিতলমারী উপজেলার ২নং কলাতলা ইউনিয়নের ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিতব্য ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ত্রি বার্ষিক সম্মেলনে সহ-সভাপতি পদে বিজয়ী হওয়া কপিল কৃষ্ণ মন্ডলের নাম মার্ক করে দিয়ে ক্যাপশনে লিখেন, আমরা কোন দালালকে জনপ্রতিনিধি করতে চাইনা, মানিনা, মানব না।
স্থানীয় বিএনপির একাধিক নেতা জানান, বাগেরহাট-১ আসনে সৈরাচার শেখ হাসিনার আমলে যদি কোন নেতা এই অঞ্চলের নেতাকর্মীদের খোঁজ রেখেছেন সে হচ্ছে ইঞ্জিঃ মাসুদ রানা। রাজপথে থেকে দলের সকল আন্দোলনে সংগ্রামে সামনে থেকে নের্তৃত্ব দিয়েছেন। নেতাকর্মীরা হামলা-মামলার শিকার হলে তিনি নিজে সকল দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। ১৭ বছর মানুষের সেবা করে যদি সে মনোনয়ন না পেয়ে দল কোন সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা ও কোন ফ্যাসিস্ট সরকারের দালালকে এই আসনে মনোনয়ন দেয় তবে কেন তাকে সাধারণ মানুষ মেনে নিবে? দলের, দলের নেতাকর্মীর জন্য যার কোন অবদানই নেউ তাকে এই অঞ্চলের মানুষ মেনে নিবেনা।
তারা আরও বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান যদি এবিষয়ে হস্তক্ষেপ না করে তবে এই আসন বিএনপি হারাবে এটি নিশ্চিত আমরা। এই আসনে ইঞ্জিঃ মাসুদ রানা'র জনপ্রিয়তার কাছে অন্যরা পিছে পরে আছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চিতলমারী উপজেলার একজন কর্মী জানান, কপিল কৃষ্ণ মন্ডলকে আমরা চিনিইনা।এখন দেখছি সে কলাতলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি ছিলেন। এই আসনে এত জনপ্রিয় ও বিএনপির পদধারী নেতা থাকতে কেন আওয়ামী লীগ নেতাকে মনোনয়ন দিচ্ছে সেটাই বুজে আসছেনা। নিশ্চয়ই এর পিছনের আর্থিক লেনদেন আছে। নাহলে এমন প্রার্থী যাকে কেউ চিনেইনা, তার উপর সে সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা। তাকে কেন দল নমিনেশন দিবে। এদিকে যোগাযোগ মাধ্যমে কপিল কৃষ্ণ মন্ডলের নামে নিজের স্ত্রীর থেকে যৌতুক দাবী করে হুমকি ও নির্যাতনের অভিযোগও উঠে এসেছে। দেখা যায়, গত বছরের ১৬ জুলাই কপিল কৃষ্ণ মন্ডলের স্ত্রী চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, বাগেরহাট-এ ২০১৮ সালের যৌতুক নিরোধ আইনের ০৩ ধারায় একটি মামলা দায়ের করেন। যার সিআর নং: ১৫৭/২৪।

