logo
ads

রুমার পাহাড়ে প্রবরণার রঙিন ঢেউ: ফানুসের আলোয় রথের বিদায়

বান্দরবান প্রতিনিধি

প্রকাশকাল: ৮ অক্টোবর ২০২৫, ০৭:৩৬ পি.এম
রুমার পাহাড়ে প্রবরণার রঙিন ঢেউ: ফানুসের আলোয় রথের বিদায়

বর্তমান বাংলা

বান্দরবানের রুমা উপজেলার পাহাড়ি আকাশ যেন প্রবরণা পূর্ণিমার আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে উঠেছে—বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের এই প্রধান উৎসব তিন দিনব্যাপী ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক আয়োজনের মধ্য দিয়ে এক অপূর্ব মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে, যেন পাহাড়ের বুকে জেগে উঠেছে শান্তির সেই অমর সুর, যা হৃদয়ে জাগিয়েছে ভালোবাসা ও ঐক্যের অপার আনন্দ। বুধবার সন্ধ্যায় রথ বিসর্জন ও ফানুস উড়ানোর মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে এই বর্ণাঢ্য উৎসব, যেন সাঙ্গু নদীর ঢেউয়ে মিশে গেছে শহীদের স্মৃতির সেই নরম আলিঙ্গন, আর আকাশে উড়ে গেছে সহস্র ফানুসের রঙিন স্বপ্ন, যা পাহাড়ি জনপদকে আতশবাজির ঝলকে আলোকিত করে তুলেছে এক অদম্য উল্লাসে।

রুমা মারমা ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের মাঠ প্রাঙ্গণে দিনব্যাপী ধর্মীয় অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে উৎসবের সূচনা হয়েছে, যেন এই প্রাঙ্গণ এক জীবন্ত মন্দিরে রূপ নিয়েছে। কেন্দ্রীয় উৎসব উদযাপন পরিষদের সভাপতি উক্যসিং মারমার সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য কে এস মং উদ্বোধন করেন, যেন তাঁর উপস্থিতি উৎসবকে এক গভীর আধ্যাত্মিকতার ছোঁয়া দিয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, বৌদ্ধ ভিক্ষু ও বিভিন্ন সম্প্রদায়ের গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত হয়ে এই মিলনকে আরও উজ্জ্বল করে তুলেছেন, যেন প্রতিটি মুখে ফুটে উঠেছে ঐক্যের সেই উষ্ণ হাসি, যা ধর্মের সীমানা ছাড়িয়ে মানবতার হৃদয়ে পৌঁছে গেছে।

অনুষ্ঠানের শুরুতে মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক পরিবেশনা যেন পুরো প্রাঙ্গণকে এক মায়াময় জগতে নিয়ে গেছে—নাচের তালে মাতোয়ারা হয়ে ওঠে সবাই, যেন পাহাড়ের বাতাসে মিশে গেছে সেই আনন্দের ঢেউ। পরে রুমা অগ্রবংশ অনাথালয়ের নির্বাহী পরিচালক ও বৌদ্ধ ধর্মীয় গুরু নাইন্দিয়া থেরো ভান্তের দেশনা প্রবরণা পূর্ণিমার তাৎপর্যকে আলোকিত করে—বর্ষাকালীন তিন মাসের ধর্মীয় সাধনা ও বর্ষাবাস শেষে ভিক্ষুরা বিহার থেকে গৃহে ফিরে যান, শীল পালনকারীরা আত্মশুদ্ধির প্রতীক হিসেবে নতুন অঙ্গীকার করেন, যেন এই দেশনা হৃদয়ে জাগিয়েছে শান্তির সেই গভীর অনুভূতি, যা প্রত্যেকের মনে বেজেছে এক অমর ধর্মীয় সুর।

আলোচনা সভা শেষে প্রধান অতিথির হাতে রথের ফিতা কাটা যেন উৎসবের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা—বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে রথ উপজেলার প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে, যেন পাহাড়ের প্রতিটি কোণে ছড়িয়ে পড়েছে ধর্মের সেই উজ্জ্বল আলো। সন্ধ্যায় সাঙ্গু নদীতে রথের বিসর্জন যেন এক বিদায়ের মধুর কান্না, যা উৎসবকে এক আধ্যাত্মিক সমাপ্তির ছোঁয়া দিয়েছে। রথ বিসর্জনের পরপরই আকাশজুড়ে উড়তে থাকে সহস্রাধিক রঙ-বেরঙের ফানুস, যেন প্রতিটি ফানুস এক স্বপ্নের বাহক, আতশবাজির ঝলকে আলোকিত হয়ে ওঠে পুরো পাহাড়ি জনপদ—সব সম্প্রদায়ের মানুষ একসঙ্গে অংশ নিয়ে এই উৎসবকে পরিণত করেছে এক অনন্য সম্প্রীতির মিলনমেলায়, যেন রুমার পাহাড়ে জেগেছে ভালোবাসার সেই অপার জোয়ার, যা ধর্মের সীমানা ছাড়িয়ে সকলের হৃদয়ে মিশে গেছে।

প্রবরণা পূর্ণিমা বৌদ্ধদের কাছে শুধু এক দিন নয়, বরং আত্মশুদ্ধি ও নতুন শুরুর প্রতীক—বর্ষাবাসের শেষে ভিক্ষুদের গৃহে প্রত্যাবর্তন এবং শীলধারীদের নতুন অঙ্গীকার যেন এক আধ্যাত্মিক জাগরণের ডাক। রুমার এই রঙিন উৎসব শুধু ধর্মীয় আনন্দ নয়, বরং পারস্পরিক শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও ঐক্যের এক উজ্জ্বল প্রতিচ্ছবি—যেন পাহাড়ের এই মিলনে জেগেছে সেই গভীর অনুভূতি, যা আমাদের সকলকে মনে করিয়ে দেয় মানবতার অটুট বন্ধনের সৌন্দর্য, এবং ফানুসের আলোয় আলোকিত হয়ে উঠেছে এক নতুন যাত্রার আশা, গর্বিত এবং অমর।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর

হাইলাইটস

বিশেষ সংবাদ