গাজায় অন্তর্বর্তীকালীন সময়ে নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখবে হামাস, এবং এখনই অস্ত্র সমর্পণ করা সম্ভব নয়—এমন মন্তব্য করেছেন সংগঠনটির রাজনৈতিক ব্যুরোর জ্যেষ্ঠ সদস্য মোহাম্মদ নাজ্জাল। শুক্রবার কাতারের দোহা থেকে রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “অস্ত্র কার কাছে হস্তান্তর করব? বিষয়টি নির্ভর করছে ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক কাঠামোর ওপর।”
এই অবস্থান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনার বাস্তবায়নে বড় বাধা হিসেবে দেখা হচ্ছে, যেখানে হামাসকে নিরস্ত্রীকরণ ও গাজার শাসন একটি আন্তর্জাতিক ট্রানজিশন কমিটির হাতে তুলে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
নাজ্জাল বলেন, এই সময় গাজায় বেসামরিক প্রশাসন পরিচালনা করবে একটি প্রযুক্তিবিদ (টেকনোক্র্যাট) সরকার, কিন্তু নিরাপত্তা পরিস্থিতি সামলাবে হামাস।“এটি একটি রূপান্তরকালীন ধাপ। aid ট্রাক, খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তার নিরাপত্তা রক্ষার জন্য হামাসের উপস্থিতি প্রয়োজন।”
তিনি আরও জানান, সংগঠনটি ৩ থেকে ৫ বছরের যুদ্ধবিরতি চায়, যাতে গাজা পুনর্গঠনের সময় পাওয়া যায় এবং ফিলিস্তিনিদের ভবিষ্যতের জন্য “আশা ও দিগন্ত” তৈরি হয়।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় এক বিবৃতিতে জানায়, “হামাসকে অস্ত্র সমর্পণ করতেই হবে। এ বিষয়ে কোনো শর্ত নেই। তারা সময় শেষ করে ফেলছে।” ইসরায়েল আরও দাবি করেছে, যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপে হামাস এখনো সব অপহৃত ব্যক্তির মৃতদেহ ফেরত দেয়নি, যা চুক্তিভঙ্গের শামিল। এ পর্যন্ত হামাস ২৮ জন মৃতদেহের মধ্যে ৯টি ইসরায়েলকে ফেরত দিয়েছে। বাকি দেহ উদ্ধারকাজে যুক্ত হবে তুরস্ক, যুক্তরাষ্ট্র, কাতার ও মিশর, বলে জানায় কূটনৈতিক সূত্রগুলো।
ডোনাল্ড ট্রাম্প ২৯ সেপ্টেম্বর ঘোষিত পরিকল্পনায় বলেছেন, হামাসকে অবিলম্বে সব বন্দি ফেরত দিতে হবে, এরপর নিরস্ত্রীকরণ ও প্রশাসনিক হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরু হবে। তিনি বৃহস্পতিবার এক বক্তব্যে বলেন, “আমরা তাদের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি পেয়েছি, এবং আমি আশা করি তারা সেটি রাখবে।” মার্কিন প্রেসিডেন্ট হামাসকে অস্থায়ীভাবে গাজার অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা রক্ষার অনুমতি দেওয়ারও ইঙ্গিত দিয়েছেন।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের হামলায় হামাস ইসরায়েলে প্রায় ১,২০০ মানুষকে হত্যা করে এবং ২৫১ জনকে অপহরণ করে। প্রতিউত্তরে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর অব্যাহত বোমা হামলায় এখন পর্যন্ত ৬৮,০০০-রও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে গাজার স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। নাজ্জাল বলেন, হামাস যুদ্ধ নয়, বরং “একটি ন্যায়সঙ্গত রাজনৈতিক সমাধান” চায়। “আমরা ভবিষ্যতের যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছি না। আমরা চাই পুনর্গঠন, স্থিতিশীলতা এবং স্বাধীন ফিলিস্তিন।”
মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশ্লেষকরা বলছেন, হামাসের এই অবস্থান নিরস্ত্রীকরণের আলোচনায় অচলাবস্থা তৈরি করতে পারে, এবং ট্রাম্পের ঘোষিত “২০ দফা শান্তি পরিকল্পনা” বাস্তবায়ন বিলম্বিত হতে পারে। বৈরুতভিত্তিক বিশ্লেষক রামি দাউদ বলেন, “হামাসের জন্য অস্ত্র ত্যাগ মানে রাজনৈতিক আত্মসমর্পণ, যা তারা কোনোভাবেই মেনে নেবে না।”
সূত্র: রয়টার্স, আল জাজিরা, ওয়াশিংটন পোস্ট, বিবিসি।

