নিউইয়র্কের আকাশে শরতের হালকা শীত, শহরের রাস্তায় উজ্জ্বল আলোর ঝলকানি—এরই মধ্যে দীপাবলির দীপ্তি ছড়িয়ে পড়েছে এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে। বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) রাতে নিউইয়র্ক সিটির মেয়র এরিক অ্যাডামস তাঁর সরকারি বাসভবনে আয়োজন করলেন এক বর্ণিল দিওয়ালি উদ্যাপন অনুষ্ঠান। শতাধিক ভারতীয় বংশোদ্ভূত নাগরিক, ব্যবসায়ী, শিল্পী, কূটনীতিক ও কমিউনিটি নেতাদের উপস্থিতিতে রাতটি হয়ে ওঠে এক মিলনমেলা।
মেয়র অ্যাডামস শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, “নিউইয়র্ক হলো সংস্কৃতির মিলনমেলা। ভারতীয় সম্প্রদায় এই শহরের প্রাণ—তাদের অবদানেই নিউইয়র্ক আজ বিশ্বের সবচেয়ে জীবন্ত শহর।” তিনি ঘোষণা করেন, আগামী বছর থেকে দিওয়ালি নিউইয়র্ক সিটির সরকারি ছুটির দিন হিসেবে পালিত হবে—যা ভারতীয় ও দক্ষিণ এশীয় জনগোষ্ঠীর বহুদিনের দাবি ছিল।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ভারতীয় দূতাবাসের ডেপুটি কনসাল জেনারেল বিশাল জে. হর্ষ, যিনি বলেন, “দীপাবলি কেবল ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি মানবতার উৎসব—যেখানে আলো জ্বেলে আমরা ঘৃণা ও অন্ধকারকে পরাজিত করি।”
তিনি মেয়রকে ধন্যবাদ জানান ভারতীয় সংস্কৃতি ও বহুজাতিক ঐক্যের প্রতি তাঁর শ্রদ্ধাশীল মনোভাবের জন্য।
মেয়র ভবনের বাগানজুড়ে সাজানো হয়েছিল হাজারো প্রদীপ, রঙোলি, ও আলোকসজ্জায়। অনুষ্ঠানে পরিবেশিত হয় ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীত ও বলিউড নৃত্য। স্থানীয় নিউইয়র্কবাসীরাও অংশ নেন এই উৎসবে, উপভোগ করেন ভারতীয় মিষ্টি, চা, ও ঐতিহ্যবাহী পোশাকের প্রদর্শনী।
এদিকে, এ বছরের দীপাবলি ও শ্রীশ্রী শ্যামা পূজার তিথি পড়েছে সোমবার (২০ অক্টোবর)।
বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা অনুসারে—
অমাবস্যা আরম্ভ: ২০ অক্টোবর, সোমবার দুপুর ৩টা ৪৬ মিনিটে
নিশীথকালীন পূজা: রাত ১০টা ৫৮ মিনিট থেকে ১১টা ৪৬ মিনিটের মধ্যে
অমাবস্যা শেষ: ২১ অক্টোবর, মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৫টা ৫৫ মিনিটে
অন্যদিকে, গুপ্তপ্রেস পঞ্জিকা অনুসারে তিথি শুরু সোমবার দুপুর ২টা ৫৫ মিনিটে এবং শেষ মঙ্গলবার বিকেল ৪টা ২৫ মিনিটে।
দশ মহাবিদ্যার প্রথম দেবী দেবী কালী। শাস্ত্রমতে, অসুর শুম্ভ-নিশুম্ভের নিধনের জন্য দেবী পার্বতী নিজ শরীর থেকে এক ভয়ঙ্করী রূপ ধারণ করেন—যিনি মা কালীর আদি রূপ।
অশুভ শক্তির বিনাশ ও শুভের জয়ই এ পূজার মূল বার্তা।
মেয়র অ্যাডামসের ভাষায়, “নিউইয়র্ক হলো বিশ্বের প্রতিটি সংস্কৃতির ঘর। দিওয়ালি আমাদের শেখায়—ভিন্ন ধর্ম, ভাষা ও সংস্কৃতি সত্ত্বেও আমরা সবাই এক আলোয় আলোকিত হতে পারি।”
দীপাবলি তাই শুধু ধর্মীয় উৎসব নয়—এটি এক মানবিক ও সাংস্কৃতিক ঐক্যের উৎসব, যার আলো এবার জ্বলে উঠেছে নিউইয়র্কের হৃদয়ে।

