logo
ads

চিলমারীতে অধ্যক্ষের ‘বাসস্থান’ কলেজের কন্ট্রোল রুমে!

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি

প্রকাশকাল: ১৭ অক্টোবর ২০২৫, ১২:২৯ পি.এম
চিলমারীতে অধ্যক্ষের ‘বাসস্থান’ কলেজের কন্ট্রোল রুমে!

বর্তমান বাংলা

কুড়িগ্রামের চিলমারী সরকারি ডিগ্রি কলেজের প্রশাসনিক ভবনের দ্বিতীয় তলায় উঠে যেন একটা অদ্ভুত দৃশ্য চোখে পড়ে—যেখানে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণের কক্ষ হওয়ার কথা, সেখানে বিছানা, কাপড়ের দড়ি, জগ-থালা আর পর্দার আড়ালে লুকিয়ে আছে একটা বাসস্থানের ছবি! এই ভয়াবহ অসংগতির মাঝে অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. মো. মজিবল হায়দার চৌধুরীর দীর্ঘদিনের বাসাহারা জীবন যেন কলেজের হৃদয়কে ক্ষতবিক্ষত করেছে, শিক্ষক-কর্মচারীদের কণ্ঠে উঠেছে ক্ষোভের গর্জন—কল্পনা করুন, প্রশ্নপত্রের আলমারির পাশে রাত কাটানোর এই নির্লজ্জ দৃশ্য কতটা অপমানজনক, যেন আইনের চোখ বন্ধ হয়ে গেছে এই অবিশ্বাসের জালে!

এপ্রিল মাস থেকে অধ্যক্ষ এই কন্ট্রোল রুমে রাত্রিযাপন করছেন, সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে যেন একটা নিষিদ্ধ স্বর্গ তৈরি করেছেন—পরীক্ষার সময় কাগজপত্র যাচাইয়ের দরকার পড়লে শিক্ষকরা সংকোচে পড়ে যান, কারণ সেখানে অধ্যক্ষের ব্যক্তিগত জিনিসপত্র ছড়িয়ে আছে, আর নৈশপ্রহরী লাল মিয়া নিয়মিত খাবার সরবরাহ করে বুধবার রাতে বাড়ি যাওয়ার অভ্যাস! শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক এ কে এম গোলাম ফারুকের কণ্ঠে ভয়ের ছায়া, “দেয়াল ভাঙার বিরুদ্ধে কথা বলায় অবসরের কাগজপত্র আটকে হুমকি দিয়েছেন স্যার, যেন একটা অন্ধকারের জালে ফাঁসা পড়েছি আমরা!” আর কোষাধ্যক্ষ জিয়াউর রহমান জিয়া বলেন, “একাডেমিক কাউন্সিলের অনুমোদন ছাড়াই একাদশ শ্রেণির দেয়াল ভেঙে বড় করা শুরু, পরে জাল রেজুলেশন দেখিয়ে ভয় দেখানো—এটা কি শিক্ষার প্রতিষ্ঠান, না হয়রানির কারখানা?”

সরকার প্রতি মাসে বাড়িভাড়া ভাতা দিয়ে অধ্যক্ষদের সুবিধা দিলেও, এই নিয়মবহির্ভূত বাসাহারা যেন শিক্ষার মূল্যবোধকে ধুলিসাৎ করছে—পরীক্ষা চলাকালীন কন্ট্রোল রুমের দরজা খুলতেই যদি বিছানা আর গৃহস্থালির ছবি চোখে পড়ে, তাহলে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যত কি এই বিশৃঙ্খলার শিকার হবে? অধ্যক্ষ অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “কলেজের স্বার্থে কষ্ট করে থাকি, বাকি সব মিথ্যা”—কিন্তু শিক্ষকরা নাম গোপন করে বলছেন, প্রভাবশালী অধ্যক্ষের ভয়ে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ করতে সাহস হয় না, বদলি বা হয়রানির আশঙ্কায় নীরব দ্বন্দ্ব চলছে। স্থানীয় অভিভাবক-শিক্ষার্থীরা অসন্তুষ্ট, বলছেন শিক্ষার পরিবেশ অবনতি পাচ্ছে দিন দিন, আর সচেতন সমাজ প্রশ্ন তুলছে, “যখন অধ্যক্ষই প্রশাসনিক কক্ষ দখল করবেন, তাহলে শৃঙ্খলা রক্ষা করবে কে?”

চিলমারী সরকারি কলেজ, এই ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানে এখন অবিশ্বাসের বিষফোঁড়া ফুটছে—শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নীতিমালা স্পষ্ট যে প্রশাসনিক কক্ষে রাত্রিযাপন নিষিদ্ধ, তবু এই অনাচারের ছায়ায় শিক্ষকরা ভয়ে মুখ বন্ধ রেখেছেন। এটা শুধু একটা কলেজের গল্প নয়, সারা দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার গভীর ক্ষতের প্রতিচ্ছবি—কবে তদারকির আলো ফুটবে এই অন্ধকারে, যাতে শিক্ষার আলয় আবার নিরাপদ হয়ে ওঠে?

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর

হাইলাইটস

বিশেষ সংবাদ