বুটেক্সের ক্যাম্পাসে যেন অরণ্যের সুর বেজে উঠল! লোকজ সংস্কৃতির মায়াময় ধ্বনিতে মুখরিত হলো প্রাণের উৎসব, ‘অরণ্যের সুর ~ ফোক ফেস্ট ২.০’। বাংলার শেকড়ের গান, মাটির গন্ধে ভরা হৃদয়ের টান, যেন শিক্ষার্থীদের বুকে জাগিয়ে তুলল অতীতের স্মৃতি। নগরের কোলাহলে হারিয়ে যাওয়া গ্রামীণ সুর, প্রাচীন গল্পের রেশ—এই ফেস্ট যেন এক মায়াবী সেতু, যা তরুণ হৃদয়কে জড়িয়ে ধরে শেকড়ের কাছে ফিরিয়ে নিয়ে গেল।
বৃহস্পতিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠে হাসির ঢেউ! হস্তশিল্পের স্টল, শিক্ষার্থীদের হাতে গড়া রঙিন সৃষ্টি, আর বিভাগীয় কুইজে মেধার ঝলক। সন্ধ্যার আলোয় বাউল গানের মায়া, পালাগানের আবেগে দর্শকদের চোখে জল, হৃদয়ে উচ্ছ্বাস। প্রতিটি সুর যেন গ্রামবাংলার কান্না-হাসির গল্প, যা ক্যাম্পাসের বাতাসকে ভরিয়ে দিল প্রাণের উল্লাসে।
এই উৎসবের সূচনা গত ১২ অক্টোবর, সেমিনার রুমে পাঠচক্রের শান্ত আলোয়। ১৩ অক্টোবর কদমতলায় পথনাটকের জীবন্ত আবেগ, ১৪ অক্টোবর ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল আর থিয়েটার কর্মশালায় সৃজনশীলতার ঝড়। ১৫ অক্টোবর শর্টফিল্ম প্রদর্শনীতে তরুণদের স্বপ্ন ছুঁয়ে গেল হৃদয়। প্রতিটি দিন যেন একেকটি মণি, যা বুটেক্সের ক্যাম্পাসে গেঁথে দিল সংস্কৃতির অমর মালা।
সাহিত্য সংসদের সভাপতি সৌরভ চৌহানের কণ্ঠে কাঁপছে আবেগ। “অরণ্যের সুর আমাদের শেকড়ের কাছে ফেরা, মাটির গন্ধে বাঁধা হৃদয়ের টান। আধুনিকতার তাড়নায় হারিয়ে যাওয়া লোকজ সুরকে ফিরিয়ে আনতে চেয়েছি। এই উৎসব শুধু গান নয়, আমাদের পরিচয়ের গল্প, যা তরুণদের বুকে ছুঁয়ে দেয়।” তাঁর চোখে জল, হৃদয়ে গর্ব—যেন তিনি বাংলার প্রতিটি গ্রামের সুরকে বুকে ধরে গেয়েছেন।
সাধারণ সম্পাদক অর্পণ সাহার হাসিতে মুখরিত হৃদয়। “জুনিয়রদের নিরলস পরিশ্রমে এই স্বপ্ন সত্যি হয়েছে। গতকাল সবাই একসঙ্গে যে আনন্দে মেতেছিলাম, সে অনুভূতি ভাষায় বাঁধা যায় না।” তাঁর কথায় ফুটে উঠছে ঐক্যের শক্তি, যেন প্রতিটি শিক্ষার্থীর হাতে হাতে জ্বলছে সংস্কৃতির আলো। রাতে জলের গান ব্যান্ডের সুরে সমাপ্তি—যেন অরণ্যের শেষ সুরে ক্যাম্পাস ভেসে গেল প্রাণের জোয়ারে।
এই ফোক ফেস্ট যেন বুটেক্সের হৃদয়ে চিরকালের জন্য গেঁথে গেল। গ্রামীণ সুরের মায়া, তরুণদের উচ্ছ্বাস, আর সংস্কৃতির অমর গল্প—‘অরণ্যের সুর ২.০’ বাংলার শেকড়কে ছুঁয়ে দিল, হৃদয়ে জাগালো অতীতের প্রাণবন্ত স্মৃতি।

