logo
ads

ওয়াশিংটনে ট্রাম্প-জেলেনস্কি বৈঠক: যুদ্ধ নয়, শান্তি চান ট্রাম্প

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশকাল: ১৮ অক্টোবর ২০২৫, ১০:২৮ এ.এম
ওয়াশিংটনে ট্রাম্প-জেলেনস্কি বৈঠক: যুদ্ধ নয়, শান্তি চান ট্রাম্প

ছবি: রয়টার্স

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি যুক্তরাষ্ট্র সফরে এসে চেয়েছিলেন আরও উন্নত অস্ত্র—বিশেষ করে লং-রেঞ্জ টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র। কিন্তু শুক্রবার হোয়াইট হাউসে অনুষ্ঠিত বৈঠকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অবস্থান ছিল একেবারেই ভিন্ন—তিনি যুদ্ধ নয়, বরং শান্তি আলোচনায় আগ্রহী।

দুই ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলা বৈঠকের পর ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, “দুই পক্ষই যুদ্ধ থামাও। এখনই থেমে যাও যুদ্ধের সীমারেখায়, আর ঘরে ফিরে যাও।” এই বক্তব্যের মাধ্যমে ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছেন, ইউক্রেন যেন কিছু ভূখণ্ড ছাড় দিয়ে যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়, যা কিয়েভ সরকারের জন্য রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত সংবেদনশীল প্রস্তাব।

জেলেনস্কি বৈঠকে স্পষ্টভাবে বলেন, “আমাদের টমাহক নেই, তাই আমাদের এগুলো দরকার।”

কিন্তু ট্রাম্পের উত্তর ছিল, “আমরা চাই ইউক্রেন যেন এমন পরিস্থিতিতে না পড়ে, যেখানে টমাহক প্রয়োজন হয়।”

ট্রাম্প পরে আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র তার অস্ত্র নিজের প্রতিরক্ষার জন্যই প্রয়োজন।“আমরাও টমাহাক চাই। আমাদের নিজের দেশ রক্ষার প্রয়োজন।”

এই বক্তব্যে পরিষ্কার হয়, ওয়াশিংটন আপাতত নতুন অস্ত্র সহায়তায় আগ্রহী নয়, বরং ট্রাম্প আসন্ন পুতিন–ট্রাম্প বৈঠককে সামনে রেখে কূটনৈতিক সমাধানের পথ খুঁজছেন।

হোয়াইট হাউস সূত্র জানায়, ট্রাম্প ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে গত বৃহস্পতিবার ফোনালাপ হয়, এবং তারা আগামী সপ্তাহে হাঙ্গেরিতে এক নতুন সম্মেলনে বসতে পারেন। তবে ক্রেমলিন জানিয়েছে, সময়সূচি এখনো চূড়ান্ত নয়।

বিশ্লেষকদের মতে, এই উদ্যোগ ইউক্রেন নয়, বরং রাশিয়ার জন্য সময় কেনার কৌশল হতে পারে। আন্তর্জাতিক কৌশলবিদ ম্যাক্স বার্গম্যান বলেন, “পুতিন জানেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি টমাহক সরবরাহে দেরি করে, তাহলে ইউক্রেনের পাল্টা আক্রমণ থেমে যাবে।”

ইউরোপীয় ইউনিয়নের মুখপাত্র জানিয়েছেন, তারা শান্তি আলোচনা সমর্থন করে, তবে “এমন কোনো চুক্তি নয় যা রাশিয়ার দখলকে বৈধতা দেয়।”

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি পরে এক বিবৃতিতে বলেন, “আমরা শান্তি চাই, কিন্তু পুতিন সময় টানছে। যুদ্ধ বন্ধ করতে এখনই সঠিক চাপ দরকার।”

রাশিয়ার পূর্ণাঙ্গ আগ্রাসনের তিন বছর পরও যুদ্ধ থামেনি। ইউক্রেনীয় সেনাপ্রধান ওলেক্সান্দর সিরস্কি জানিয়েছেন, রাশিয়ার সাম্প্রতিক আক্রমণ ব্যর্থ হয়েছে। তবে ২০২৫ সালে রাশিয়া প্রায় ৫,০০০ বর্গকিলোমিটার নতুন এলাকা দখল করেছে, যা ইউক্রেনের মোট ভূখণ্ডের প্রায় ১ শতাংশ।

উভয় দেশই একে অপরের বিদ্যুৎকেন্দ্র ও জ্বালানি স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা বাড়িয়েছে, যা ন্যাটো সীমান্তেও উত্তেজনা তৈরি করছে। ট্রাম্প বলেছেন, “আমি জীবনে বহুজনের সঙ্গে আলোচনা করেছি, সবাই আমাকে খেলতে চেয়েছে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমি জিতেছি।”

এই মন্তব্যে স্পষ্ট যে, ট্রাম্প ‘মধ্যস্থতাকারী রাষ্ট্রপতি’ হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করতে চাইছেন, বিশেষ করে নোবেল শান্তি পুরস্কারের প্রচারের সময়টিতে। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, যদি যুক্তরাষ্ট্র অস্ত্র সহায়তা বন্ধ করে দেয়, তাহলে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা ক্ষমতা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

সূত্র:  রয়টার্স, দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট, বিবিসি, পলিটিকো।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর

হাইলাইটস

বিশেষ সংবাদ