logo
ads

বেরোবিতে মশালের আলোয় ‘তিস্তা বাঁচাও, উত্তরবঙ্গ বাঁচাও’ মিছিল

বেরোবি প্রতিনিধি

প্রকাশকাল: ১৮ অক্টোবর ২০২৫, ০১:১০ পি.এম
বেরোবিতে মশালের আলোয় ‘তিস্তা বাঁচাও, উত্তরবঙ্গ বাঁচাও’ মিছিল

বর্তমান বাংলা

রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) প্রাঙ্গণে, যেখানে রাতের অন্ধকার ছিন্ন করে মশালের শিখা জ্বলছে, সেখানে শুক্রবার (১৭ অক্টোবর, ২০২৫) সন্ধ্যা ৭টায় শুরু হলো এক শক্তিশালী মিছিল। শিক্ষার্থী কল্যাণ ও উন্নয়ন পরিষদের ব্যানারে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে এই মিছিল—যা প্রধান ফটক থেকে শুরু হয়ে শহীদ আবু সাঈদ চত্বর প্রদক্ষিণ করে আবার ফটকে ফিরে এসে শেষ হলো। ছবির এই দৃশ্য যেন এক জীবন্ত প্রতিবাদ: মশাল হাতে দাঁড়ানো শিক্ষার্থীদের ভিড়, পিছনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকের স্থাপত্য, আর শিখার আলোয় উদ্ভাসিত মুখ—যা শুধু তিস্তার জন্য নয়, উত্তরবঙ্গের অস্তিত্বের জন্য এক লড়াই। শিক্ষার্থীরা “তিস্তা বাঁচাও, উত্তরবঙ্গ বাঁচাও” শ্লোগানে মুখর হয়ে দাবি জানালেন তিস্তা নদীর পানিবণ্টন ও মহাপরিকল্পনার দ্রুত বাস্তবায়ন। তিস্তা মেগা প্রকল্প—যা বন্যা নিয়ন্ত্রণ, সেচ ব্যবস্থা ও জীবিকা উন্নয়নের মাধ্যমে ১৩০ কিলোমিটার এলাকাকে বাঁচাতে পারে—এখনও ভারতের গজলডোবা বাঁধের বিরোধিতায় বিলম্বিত, যদিও চীনের ৬,৫০০ কোটি টাকার ঋণ প্রস্তাব রয়েছে।

মিছিলের পর শিক্ষার্থীদের কণ্ঠে উঠল বেদনার সুর। পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ১৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী হাফিজুর রহমান সিয়াম বললেন, “তিস্তা শুধু একটি নদী নয়, এটি উত্তরবঙ্গের অস্তিত্বের প্রতীক। এই নদী হারালে হারাবো কৃষি, জীববৈচিত্র্য ও আমাদের জীবিকা। তাই তিস্তা বাঁচানো মানে উত্তরবঙ্গকে বাঁচানো।” তাঁর কথায় মিশে গেল শুষ্ক মৌসুমে পানির অভাবে ধ্বংস হওয়া ফসলের কাহিনী। বাংলা বিভাগের ১৪তম ব্যাচের শিক্ষার্থী শামসুর রহমান সুমন যোগ করলেন, “জাতীয় নির্বাচনের আগেই আমরা তিস্তা মহাপরিকল্পনার বাস্তবায়ন চাই। ভারতের পানি আগ্রাসন রুখে দিয়ে ন্যায্য পানি বণ্টনের মাধ্যমে আমাদের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। এটি শুধু নদী রক্ষার নয় বরং আমাদের অস্তিত্বের লড়াই।” তাঁর কণ্ঠে ফুটে উঠল ভারতীয় গজলডোবা বাঁধের অসমতুল্যতা, যা বর্ষায় জল ছাড়ে আর শুষ্কে আটকে রাখে।

মিছিলে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এর রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু নেতৃত্বে তিস্তা রক্ষা আন্দোলনের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করলেন শিক্ষার্থীরা। তাঁরা জানালেন, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন না হলে উত্তরাঞ্চলের কৃষি, অর্থনীতি ও পরিবেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বছরে লক্ষাধিক বাস্তুহারা ও কৃষি ভিত্তিক অর্থনীতির ধ্বংস এই নদীর শুষ্কতা ও বন্যার ফল। তাই সরকারের কাছে অবিলম্বে প্রকল্প বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হলো। পরিবেশ ও জলসম্পদ উপদেষ্টা রেজওয়ানা হাসানের সাম্প্রতিক ঘোষণায় প্রকল্পের কাজ ডিসেম্বর ২০২৫-এ শুরু হবে বলা হয়েছে, কিন্তু এই মশাল মিছিল যেন সেই প্রতিশ্রুতিকে ত্বরান্বিত করার কলমবদ্ধ আহ্বান।

বেরোবির এই মিছিল যেন উত্তরবঙ্গের বৃহত্তর আন্দোলনের এক অংশ—লালমনিরহাটের কৃষকের কষ্ট এখানে মিশে গেল রংপুরের শিক্ষার্থীদের সংকল্পে। তিস্তার এই লড়াই শুধু নদী রক্ষার নয়, বাংলাদেশের কৃষি-অর্থনীতির ভবিষ্যৎ রক্ষার জন্য এক জাতীয় দাবি। এই মশালের আলো যেন এক হুঁশিয়ারি—নির্বাচনের আগে বাস্তবায়ন করুন, নইলে উত্তরবঙ্গের হুঙ্কার আরও জোরালো হবে। তিস্তার জলে যদি আবার জীবন ফিরে আসে, তবে এই মশালের আগুন ফলবে সোনার ফসলে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর

হাইলাইটস

বিশেষ সংবাদ