logo
ads

লালমনিরহাটের প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে বিশ্বজয়

লালমনিরহাট প্রতিনিধি

প্রকাশকাল: ১৮ অক্টোবর ২০২৫, ১২:১৬ পি.এম
লালমনিরহাটের প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে বিশ্বজয়

বর্তমান বাংলা

ইতালির জেসোলোর খোলা আকাশের নিচে, যেখানে তায়কোয়নদোর প্রতিটি আঘাত যেন এক অদম্য স্বপ্নের ধ্বনি, সেখানে বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়ে নিয়ে এলো অভূতপূর্ব সাফল্য। ২৩তম আইটিএফ তায়কোয়নদো বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশীপ-২০২৫ এবং জেসোলো তায়কোয়নদো ফর অল ইন্টারন্যাশনাল ওপেন চ্যাম্পিয়নশীপ-২০২৫-এ বাংলাদেশের ৯ সদস্যের টিম অর্জন করল ৫ স্বর্ণ, ৩ রৌপ্য ও ১ ব্রোঞ্জ—এক রেকর্ড যা স্মরণীয়। কিন্তু এই জয়ের নেপথ্যে লুকিয়ে আছে লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার সারপুকুরের হরিদাস গ্রামের এক তৃণমূল কৃষক পরিবারের মেয়ে, সান্ত্বনা রানী রায়। যেন একটি বীজ থেকে উঠে আসা শক্তির গাছ, সান্ত্বনা নিজে ২ স্বর্ণপদক জিতে টিমকে নিয়ে এলেন এই অলৌকিক ফল। তার জীবন যেন এক উজ্জ্বল উপমা—প্রত্যন্ত গ্রামের ধুলোমাখা পথ থেকে বিশ্ব মঞ্চে, যেখানে প্রতিটি কিকে মিশে গেল পরিশ্রমের ঘাম আর অটল আশা।

৩ থেকে ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত ইতালির জেসোলোতে অনুষ্ঠিত এই দুই আন্তর্জাতিক চ্যাম্পিয়নশীপে সান্ত্বনা ছিলেন প্রধান কোচ, ম্যানেজার এবং খেলোয়াড়—একা একটি দায়িত্বের ভারে তার কাঁধ শক্ত হয়ে উঠল। ২৩তম আইটিএফ বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশীপে ভেটেরান ফিমেল ক্যাটাগরিতে (৩৫-৪৪ বছর, ৭৭ কেজি ওজন, প্রথম থেকে চতুর্থ ড্যান ব্ল্যাক বেল্ট) তিনি স্বর্ণপদক জয় করে বাংলাদেশের গৌরব বাড়ালেন, পাশাপাশি সাদিয়া হোসেন রৌপ্যপদক নিয়ে এলেন। এই জয় যেন এক অমৃতধারা, যা বাংলাদেশের তায়কোয়নদোর ইতিহাসে নতুন অধ্যায় লিখল। অন্যদিকে, জেসোলো ওপেন চ্যাম্পিয়নশীপে ৩৫-৫০ বছরের ক্যাটাগরিতে সান্ত্বনা আবার স্বর্ণ, সাদিয়া হোসেনও স্বর্ণ, ১৪-১৭ বছরের মিনাজ বিন নেওয়াজ সচ্ছ স্বর্ণ, ১৮-৩৪ বছরের নোমান বিন নেওয়াজ সূর্য রৌপ্য, ৩৫-৫০ বছরের পুরুষ ক্যাটাগরিতে হিরেন্দ্র চন্দ্র সরকার স্বর্ণ, ১৮-৩৪ বছরের মোহাম্মদ মাহতাব হোসেন রৌপ্য এবং মোঃ নাজমুল মিয়া ব্রোঞ্জ—প্রতিটি পদক যেন একটি তারার আলো, যা টিমের একতার প্রমাণ। সান্ত্বনার নেতৃত্বে এই টিম যেন এক অদম্য সেনা, যারা বিশ্বের শক্তিশালী প্রতিপক্ষকে হারিয়ে এলো সোনার স্বপ্ন।

কিন্তু এই সাফল্যের পথ ছিল কাঁটায় ভরা। ইতালি যাওয়ার পূর্বে টিমের উপর আদম পাচারের অভিযোগ উঠেছিল—যেন এক অন্ধকার মেঘ, যা তাদের স্বপ্নকে ঢেকে দিতে চেয়েছিল। সেই অভিযোগের ঝড়ের মধ্যেও সান্ত্বনা অটল রইলেন, তার টিমকে নিয়ে পার করলেন সেই পরীক্ষা। লালমনিরহাটের হরিদাস গ্রামের ধানখেতের ধারে বড়ো হয়ে ওঠা এই মেয়ে, কৃষক পরিবারের সন্তান হিসেবে জানতেন কষ্টের স্বাদ—কিন্তু তায়কোয়নদোর মাঠে তিনি শিখলেন জয়ের রস। আজ তিনি তায়কোয়নদো ফেডারেশন অব বাংলাদেশ (আইটিএফ)-এর প্রেসিডেন্ট, এবং লালমনিরহাট তায়কোয়নদো অ্যাসোসিয়েশন (এলটিএ)-এর প্রতিষ্ঠাতা। তার হাতে শুধু স্বর্ণপদক নয়, বাংলাদেশের তরুণ-তরুণীদের স্বপ্নের বীজ—যা প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে বিশ্বমঞ্চে ছড়িয়ে পড়ছে। সান্ত্বনার জীবন যেন এক অনুপ্রেরণার গান, যা বলে: “প্রত্যন্ত গ্রামের মাটি থেকেও উঠে আসতে পারে বিশ্বজয়ের তারা—শুধু লাগে অটল ইচ্ছাশক্তি আর পরিশ্রমের আগুন।”

এই সাফল্যে লালমনিরহাটের হরিদাস গ্রাম উচ্ছ্বাসে মুখরিত। স্থানীয়রা বলছেন, সান্ত্বনা যেন তাদের গ্রামের আলো—যার জয়ে ফুটে উঠেছে হাজারো স্বপ্ন। বাংলাদেশের তায়কোয়নদোর এই অধ্যায়ে সান্ত্বনা রানী রায়ের নাম সোনায় খোদাই হয়েছে, আর তার গল্প যেন এক উজ্জ্বল উদাহরণ: কোনো সীমানা নেই স্বপ্নের, যদি হৃদয়ে থাকে অদম্য আগুন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর

হাইলাইটস

বিশেষ সংবাদ