পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশে ইসলামপন্থি দল তেহরিক-ই-লাব্বাইক পাকিস্তান (টিএলপি) ও নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষে অন্তত পাঁচজন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে একজন পুলিশ কর্মকর্তা রয়েছেন বলে স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে। আহত হয়েছেন আরও অন্তত ৭০ জন পুলিশ সদস্য ও কয়েক ডজন বিক্ষোভকারী।
লাহোর থেকে শুক্রবার শুরু হওয়া টিএলপির এই ‘দীর্ঘ মার্চ’ সোমবার ইসলামাবাদের দিকে অগ্রসর হলে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। দলটির নেতা সাদ রিজভি নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন এই বিক্ষোভের, যা মূলত গাজার জনগণের প্রতি সংহতি জানাতে আয়োজন করা হয়েছিল। তবে讽 irony হলো—গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পরই এই বিক্ষোভ শুরু হয়, যখন ফিলিস্তিনিরা শান্তি উদযাপন করছে।
বিক্ষোভ চলাকালে পুলিশের গুলিতে দলটির প্রধান সাদ রিজভি গুরুতর আহত হন। টিএলপির দাবি, রিজভি একাধিক গুলিবিদ্ধ হয়ে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছেন। গুলিবর্ষণের আগে সামাজিক মাধ্যমে প্রচারিত এক ভিডিওতে তাঁকে দেখা যায় পুলিশের প্রতি গুলি থামানোর আহ্বান জানাতে। ভিডিওর পটভূমিতে গোলাগুলির শব্দ স্পষ্ট শোনা যায়।
পাঞ্জাব প্রদেশের পুলিশ প্রধান উসমান আনোয়ার জানিয়েছেন, টিএলপির কর্মীরা পুলিশের ওপর গুলি চালালে এক কর্মকর্তার মৃত্যু হয় এবং আরও কয়েকজন আহত হন। পুলিশের গাড়ি ও একটি ট্রাকে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। লাহোর শহর কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে, বহু সড়কে কন্টেইনার বসিয়ে অবরোধ তৈরি করে কর্তৃপক্ষ।
অন্যদিকে টিএলপি এক বিবৃতিতে দাবি করেছে, তাদের বহু কর্মী নিহত ও আহত হয়েছেন। শনিবার পর্যন্ত পুলিশ অন্তত ১০০ জন বিক্ষোভকারীকে আটক করেছে বলে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ডন নিউজ জানিয়েছে।
এই সহিংসতার পর পাকিস্তানজুড়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। কেউ কেউ সরকারের ‘অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, আবার অনেকে টিএলপির বিরুদ্ধে অযৌক্তিক সহিংসতা উসকে দেওয়ার অভিযোগ করেছেন।
পাকিস্তানের উপ-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তালাল চৌধুরী বলেন, “গাজায় যুদ্ধ শেষ হয়ে শান্তি ফিরেছে, অথচ টিএলপি এখনো রাস্তায় নেমে সহিংসতা করছে—এটা একেবারেই অযৌক্তিক।”
২০১৮ সালের নির্বাচনে টিএলপি দেশের রাজনীতিতে আলোচনায় আসে। ইসলাম অবমাননার অভিযোগে মৃত্যুদণ্ডের বিধান সমর্থনে দলটি জনপ্রিয়তা অর্জন করে। এরপর থেকেই দলটি নানা সময় ধর্মীয় ইস্যুতে সহিংস আন্দোলন করে আসছে।
দলটি অতীতে কোরআন অবমাননার প্রতিবাদে ও ফিলিস্তিনের পক্ষে বড় বড় বিক্ষোভ আয়োজন করেছে। সর্বশেষ এই ‘লং মার্চ’ ছিল যুক্তরাষ্ট্রের ইসলামাবাদস্থ দূতাবাসের সামনে সমাবেশ করার উদ্দেশ্যে।
গাজার শান্তি চুক্তির পরেও টিএলপির এই সহিংস বিক্ষোভ পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে নতুন অস্থিরতার ইঙ্গিত দিচ্ছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সরকারের কঠোর অবস্থান ও ইসলামপন্থিদের উগ্রপন্থা দেশটিকে আবারও গভীর সংকটে ফেলতে পারে।
সূত্র: ডন নিউজ, অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (AP), এনডিটিভি, বিবিসি

