ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) এনডিটিভি ওয়ার্ল্ড সামিট ২০২৫–এ ঘোষণা দিয়েছেন—মাত্র ৭৫ ঘণ্টার মধ্যে ৩০৩ জন মাওবাদী (নকশাল) আত্মসমর্পণ করেছে। দীর্ঘদিন ধরে চলা দেশীয় সন্ত্রাসবাদ দমনে এটিকে এক “ঐতিহাসিক সাফল্য” হিসেবে উল্লেখ করেছেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “গত ৫০–৫৫ বছরে মাওবাদী সন্ত্রাসে হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। তারা স্কুল, হাসপাতাল, সরকারি প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠতে দেয়নি। তরুণ প্রজন্মকে বন্দুকের পথ দেখিয়ে উন্নয়ন ও শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করেছে।”
তিনি জানান, “এই প্রথম আমি বিশ্ববাসীর সামনে আমার বেদনা প্রকাশ করছি। মাওবাদ ছিল তরুণদের প্রতি এক অন্যায়।”
সামিটে উপস্থিত ছিলেন শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী হারিনি আমারাসুরিয়া, অস্ট্রেলিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি অ্যাবট এবং যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকসহ আন্তর্জাতিক নেতৃবৃন্দ।
মোদির দাবি, গত এক দশকে তাঁর সরকারের “মূলধারায় ফেরানোর উদ্যোগ” ও উন্নয়ন কর্মসূচির ফলে মাওবাদী-প্রভাবিত জেলার সংখ্যা ১২৫ থেকে কমে এখন মাত্র ১১-তে নেমেছে। বিশেষ করে ছত্তিশগড়ের বস্তার অঞ্চলে বৃহস্পতিবার একদিনেই ১৭০ জন আত্মসমর্পণ করেছে—এটিই ভারতের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় মাওবাদী আত্মসমর্পণ বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
বস্তার অঞ্চলে ১৫০ জনের বেশি মাওবাদী—যাদের নেতৃত্বে ছিলেন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রূপেশ ওরফে সতীশ কোফা—অস্ত্র ফেলে দিয়েছে। যদিও কোফা এনডিটিভিকে জানিয়েছেন, “এটি আত্মসমর্পণ নয়, মানুষের জন্য সংগ্রামের পদ্ধতি পরিবর্তন।”
মোদির মতে, “আগে বস্তারে খবরের শিরোনাম হতো বিস্ফোরণ আর নিরাপত্তারক্ষীর মৃত্যু। আজ সেই জায়গায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে ‘বস্তার অলিম্পিকস’। এখন সেখানকার যুবকেরা দীপাবলি উদযাপন করবে—এটাই পরিবর্তন।”
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, “৩০৩ জন নকশাল আত্মসমর্পণ করেছে। এরা সাধারণ অপরাধী নয়—এদের মাথায় ছিল বড় অঙ্কের পুরস্কার, সঙ্গে পাওয়া গেছে বিপুল অস্ত্রভাণ্ডার।”
তিনি কংগ্রেস সরকারের দিকে ইঙ্গিত করে অভিযোগ করেন, “দীর্ঘদিন ‘আরবান নকশাল’ নামের একটি ইকোসিস্টেম তৈরি করা হয়েছিল, যারা বাস্তব মাওবাদী সন্ত্রাসের খবর জনগণের কাছে পৌঁছাতে দেয়নি। সেই সময় একটি সেন্সরশিপ ব্যবস্থাই চালু ছিল।”
মোদি জানান, সম্প্রতি মাওবাদী হামলায় অঙ্গহানি হওয়া কয়েকজন ভুক্তভোগী দিল্লিতে এসে সাংবাদিকদের সামনে তাদের গল্প বলতে চেয়েছিলেন, কিন্তু “কেউ শুনল না, কেউ দেখল না”—এ অভিযোগও করেন তিনি।
বক্তৃতার শেষভাগে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যে অঞ্চলে মানুষ বছরের পর বছর ভয় নিয়ে বেঁচেছে, সেই জায়গাগুলো এবার প্রথম শান্তিপূর্ণ দীপাবলি উদযাপন করবে। মায়েরা ২৫ বা ৫০ বছর পর প্রথম আলো জ্বালাবেন। এই দীপাবলি হবে শান্তি আর আশার প্রতীক।”
তিনি আত্মবিশ্বাসী কণ্ঠে যোগ করেন, “সেই দিন দূরে নয়, যেদিন ভারত পুরোপুরি মাওবাদ-মুক্ত হবে। এটাই মোদির গ্যারান্টি।”
পটভূমি:
ভারতে মাওবাদী বা নকশাল আন্দোলনের উৎপত্তি ১৯৬৭ সালে পশ্চিমবঙ্গের নকশালবাড়ি থেকে। পরবর্তী পাঁচ দশকে এটি ছত্তিশগড়, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা, অন্ধ্রপ্রদেশ ও মহারাষ্ট্রের গ্রামীণ অঞ্চলে গভীর প্রভাব ফেলেছে। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১০–এর পর থেকে মাওবাদী হামলায় অন্তত ৩,০০০ জনের মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশ নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য। তবে বিশ্লেষকদের মতে, আত্মসমর্পণের এই ঢেউ সরকারের জন্য রাজনৈতিক অর্জন হলেও, প্রকৃত শান্তি নির্ভর করবে আদিবাসী অঞ্চলে টেকসই উন্নয়ন, শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের ওপর।

