logo
ads

নেশার মুহূর্তে ফিরে এলো গুলির স্মৃতি — মালালার অন্তর্দহন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

প্রকাশকাল: ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ০২:১৬ পি.এম
নেশার মুহূর্তে ফিরে এলো গুলির স্মৃতি — মালালার অন্তর্দহন

সংগৃহীত

নোবেল শান্তি পুরস্কারপ্রাপ্ত তরুণী মালালা ইউসুফজাইয়ের জীবনের এক মুহূর্ত আবার আলোচনায়। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্ত ও নিরাপদ এক রাতে বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে নির্ভার সময় কাটাতে গিয়ে হঠাৎ নেশাজনিত এক অভিজ্ঞতা তাঁকে ফিরিয়ে নিয়ে গিয়েছিল জীবনের সেই ভয়ঙ্কর সন্ধিক্ষণে—যেখানে ছিল বন্দুক, রক্ত আর মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়ানো এক কিশোরী।

অক্সফোর্ডের লেডি মার্গারেট হলে এক বন্ধুর বাসায় “বং” নামের যন্ত্রে ধোঁয়া টানার মুহূর্তে মালালার শরীর যেন হঠাৎ স্থবির হয়ে পড়ে। চোখের সামনে ঘোলাটে কুয়াশা, শরীরে অসাড়তা, মাথায় অচেনা ভার। কিন্তু সেই কুয়াশার মধ্যেই খুলে যায় অতীতের এক গোপন দরজা—যা বছরের পর বছর লুকিয়ে ছিল তার মস্তিষ্কের গভীরে। মনে পড়ে যায় সোয়াত উপত্যকার সেই ভয়াল বিকেল, স্কুলবাসে বসা ছোট্ট মেয়েটির দিকে এগিয়ে আসে মুখোশধারী এক বন্দুকধারী। মুহূর্তের ভেতরেই ভেসে ওঠে গুলির শব্দ, রক্তে ভেজা পোশাক, আর কিশোর জীবনের থমকে যাওয়া ছায়া।

সেদিনের ঘটনাকে ভুলে গিয়ে তিনি ভেবেছিলেন—সব শেষ হয়ে গেছে, ভয় আর তার নাগাল পাবে না। কিন্তু নেশার ঘোরে এক নিশ্বাসের ধোঁয়া যেন অতীতের ছাই উড়িয়ে দিল। শরীরের প্রতিটি শিরায় ফিরে এলো আতঙ্ক। পা নড়ছিল না, হৃদস্পন্দন বেড়ে যাচ্ছিল, শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল। নিজেকে মনে হচ্ছিল বন্দী—শুধু ঘরে নয়, নিজের মনের ভেতরেও। বন্ধুর কাঁধে ভর করে ধীরে ধীরে তিনি ঘরে ফিরেছিলেন, কিন্তু মনে ফিরেছিল গুলির প্রতিধ্বনি।

এর পরের দিনগুলোয় মালালার মধ্যে দেখা দেয় ঘুমহীনতা, উদ্বেগ, কাঁপুনি আর অকারণ ভয়। প্রতিটি রাত যেন ভিজে থাকত ঘামে ও দুঃস্বপ্নে। থেরাপিস্টের সহায়তায় ধীরে ধীরে তিনি বুঝতে শেখেন, এই আতঙ্কের উৎস শুধু সেই রাতের অভিজ্ঞতা নয়, বরং দীর্ঘদিন ধরে চাপা পড়ে থাকা ক্ষত—যেটি তৈরি হয়েছিল গুলির দিন থেকে। সেই ক্ষত শারীরিক নয়, মানসিক। একবারে নিরাময় হয় না, কিন্তু স্বীকারের মধ্য দিয়েই শুরু হয় তার সান্ত্বনা।

মালালা বলেননি এই অভিজ্ঞতাকে তিনি আফসোস করেন কি না। বরং তাঁর নতুন আত্মজীবনীতে এই ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন আত্মমোকাবিলার অংশ হিসেবে। তিনি বুঝেছেন—সাহস মানে শুধু বাইরের বিপদের মুখোমুখি হওয়া নয়, নিজের ভিতরের অন্ধকারকেও জিততে শেখা।

দীর্ঘ সময় পর এই স্বীকারোক্তি নতুন আলো ফেলেছে তাঁর চরিত্রের আরেকটি দিকের ওপর—যেখানে একজন নারী, যিনি বিশ্বজুড়ে প্রতীক হয়ে উঠেছেন প্রতিবাদের, শিক্ষার ও মানবাধিকারের, তাকেও নিজের ভয়, অনিশ্চয়তা আর মানসিক ক্লান্তির সঙ্গে যুদ্ধ করতে হয়েছে।

মালালার নতুন বই ফাইন্ডিং মাই ওয়ে-তে শুধু এই মানসিক সংগ্রামের কাহিনি নয়, রয়েছে তাঁর নতুন জীবন, ভালোবাসা, সংসার এবং সমাজে নারীর শক্তি ও অংশগ্রহণের গল্পও। কিন্তু পাঠকের মনে সবচেয়ে গভীর দাগ রাখে সেই অংশ, যেখানে এক নিশ্বাস ধোঁয়া অতীতের গুলিকে ফিরিয়ে আনে—একজন সাহসী মেয়ের মনে আবারও ছড়িয়ে দেয় ভয়, এবং শেষ পর্যন্ত শেখায় কিভাবে ভয়কেও জয়ের পথে রূপান্তর করা যায়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর

হাইলাইটস

বিশেষ সংবাদ