মাদাগাস্কারের প্রেসিডেন্ট আন্দ্রি রাজোয়েলিনা জানিয়েছেন, সেনাবাহিনীর একাংশ ও রাজনীতিকদের নেতৃত্বে তার বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা ও অভ্যুত্থান পরিকল্পনা চলছে। তিনি বর্তমানে “একটি নিরাপদ স্থানে আশ্রয়ে” আছেন বলে জানিয়েছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে সরাসরি সম্প্রচারে।
রয়টার্স ও বিবিসি আফ্রিকার খবরে বলা হয়, গত দুই সপ্তাহ ধরে চলমান যুবনেতৃত্বাধীন বিক্ষোভে দেশজুড়ে অস্থিরতা দেখা দেয়। এই তরুণ প্রজন্মের আন্দোলন—যাদের “Gen Z Mada” বলা হচ্ছে—রাজোয়েলিনার পদত্যাগ দাবি করছে। বিদ্যুৎ–পানির ঘাটতি, দুর্নীতি, বেকারত্ব ও জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধিতে ক্ষুব্ধ নাগরিকদের বিক্ষোভ ইতোমধ্যেই প্রাণঘাতী রূপ নিয়েছে। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, অন্তত ২২ জন নিহত এবং শতাধিক আহত হয়েছেন।
রবিবার রাতে প্রেসিডেন্টের কার্যালয় জানায়, “রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের চেষ্টা চলছে।” পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে রাজধানী আন্তানানারিভোর রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন দপ্তরে সেনারা হামলার হুমকি দেয়।
রাজোয়েলিনা জানান, “২৫ সেপ্টেম্বর থেকে আমার জীবনের ওপর একাধিক হামলার চেষ্টা হয়েছে। সেনা কর্মকর্তাদের একটি অংশ ও রাজনীতিকদের সহযোগিতায় আমাকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়েছিল।” তিনি আরও বলেন, “দেশের বিদ্যমান সংবিধানই এই সংকটের একমাত্র সমাধান।”
সেনা বিভাজন ও নতুন নেতৃত্ব
দেশটির প্রভাবশালী সেনা ইউনিট CAPSAT, যারা ২০০৯ সালে রাজোয়েলিনাকে ক্ষমতায় বসাতে ভূমিকা রেখেছিল, এবার তার বিরুদ্ধেই অবস্থান নিয়েছে। তারা নিজেদের “সেনাবাহিনীর সর্বোচ্চ কর্তৃত্ব” দাবি করেছে এবং রাজধানীর রাস্তায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছে। CAPSAT কর্তৃক নিযুক্ত নতুন সেনাপ্রধান জেনারেল ডেমোস্থেন পিকুলাস সোমবার বলেন, “আমরা জনগণের নিরাপত্তা রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ।”
তবে বিরোধীদল TIM জানিয়েছে, “প্রেসিডেন্ট কার্যত দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন”, এবং তারা তার বিরুদ্ধে “দায়িত্ব পরিত্যাগের” অভিযোগে অভিশংসন প্রস্তাব আনবে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেছেন, “মাদাগাস্কারে সাংবিধানিক শৃঙ্খলা বজায় রাখা জরুরি।” তিনি স্বীকার করতে অস্বীকৃতি জানান যে রাজোয়েলিনা ফরাসি সামরিক বিমানে দেশত্যাগ করেছেন। আফ্রিকান ইউনিয়নের নিরাপত্তা পরিষদও যেকোনো “অসাংবিধানিক ক্ষমতা দখলের প্রচেষ্টা” প্রত্যাখ্যান করেছে।
প্রেক্ষাপট
২০০৯ সালে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা রাজোয়েলিনা আফ্রিকার সবচেয়ে তরুণ রাষ্ট্রপ্রধান ছিলেন—মাত্র ৩৪ বছর বয়সে। পরবর্তী সময়ে ২০১৮ সালের নির্বাচনে পুনরায় ক্ষমতায় ফেরেন।
ধনী পরিবারের সন্তান হিসেবে রাজনীতি শুরুর আগে তিনি একজন সফল উদ্যোক্তা ও ডিজে হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তার সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ে।
বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ হলেও মাদাগাস্কার বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র দেশ—দেশটির প্রায় ৭৫ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে এবং মাত্র এক–তৃতীয়াংশ নাগরিকের বিদ্যুৎপ্রাপ্তি রয়েছে।
উৎস: বিবিসি আফ্রিকা, রয়টার্স, এএফপি, দ্য গার্ডিয়ান

