চীন তাদের নৌবাহিনীর ক্ষমতা আরও এক ধাপ বাড়াতে চতুর্থ বিমানবাহী রণতরী নির্মাণ শুরু করেছে বলে জানিয়েছে South China Morning Post (SCMP)। হংকং-ভিত্তিক এই সংবাদমাধ্যমটি স্যাটেলাইট চিত্র প্রকাশ করে জানিয়েছে, উত্তর-পূর্ব চীনের লিয়াওনিং প্রদেশের ডেলিয়ান শিপইয়ার্ডে রণতরীটির হাল (hull) বা মূল কাঠামো তৈরির কাজ দৃশ্যমান হয়েছে। এদিকে চীনের তৃতীয় বিমানবাহী রণতরী ‘ফুজিয়ান’ (Fujian) সমুদ্র পরীক্ষার (sea trial) কাজ শেষ করে উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে।
চীন বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম দ্রুতগতিতে নৌবাহিনীর আধুনিকীকরণে এগিয়ে চলেছে। দেশটির হাতে ইতোমধ্যেই দুটি বিমানবাহী রণতরী রয়েছে— লিয়াওনিং (Liaoning): সাবেক সোভিয়েত রণতরী Varyag, ২০১২ সালে চীনা নৌবাহিনীতে যুক্ত হয়। শানডং (Shandong): প্রথম সম্পূর্ণ দেশীয়ভাবে নির্মিত রণতরী, ২০১৯ সালে কমিশনপ্রাপ্ত। তৃতীয় রণতরী ফুজিয়ান সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি এবং এতে অত্যাধুনিক “ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ক্যাটাপল্ট সিস্টেম” যুক্ত হয়েছে, যা বিমান উড্ডয়নে নতুন দক্ষতা এনে দেবে।
SCMP-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডেলিয়ান শিপইয়ার্ডে নতুন রণতরীর জন্য বিশাল ব্লক ও কাঠামো একত্রিত করা হচ্ছে, যা চতুর্থ বিমানবাহী রণতরীর অংশ বলে ধারণা করা হচ্ছে। সামরিক বিশ্লেষকদের মতে, এটি হতে পারে চীনের Type-04 ক্যাটাগরির রণতরী—যা সম্ভাব্যভাবে নিউক্লিয়ার (পারমাণবিক) প্রপালশন-সক্ষম হতে পারে।
যদিও বেইজিং এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকল্পটির ঘোষণা দেয়নি, তবে বিশেষজ্ঞদের মতে এটি চীনের “ব্লু ওয়াটার নেভি” (দূরসমুদ্র-অভিযান সক্ষম নৌবাহিনী) গঠনের লক্ষ্য পূরণের দিকেই ইঙ্গিত করছে। চীনের নৌবাহিনী বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম। মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর (U.S. DoD)-এর ২০২4 সালের প্রতিবেদনে বলা হয়, চীনের হাতে বর্তমানে প্রায় ৩৭০টি যুদ্ধজাহাজ ও সাবমেরিন রয়েছে, যার সংখ্যা যুক্তরাষ্ট্রকেও ছাড়িয়ে গেছে।
চতুর্থ রণতরীর নির্মাণ শুরু হলে চীন ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে আরও বড় নৌশক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এটি তাইওয়ান প্রণালী ও দক্ষিণ চীন সাগরে শক্তি প্রদর্শনের জন্য বেইজিংয়ের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ। তবে যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও অস্ট্রেলিয়াসহ কয়েকটি দেশ এই অগ্রগতিকে “আঞ্চলিক ভারসাম্যের হুমকি” হিসেবে দেখছে।
চীনের তৃতীয় রণতরী ফুজিয়ান-এর সামুদ্রিক পরীক্ষা ইতোমধ্যে সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এটি ২০২৪ সালের মে মাসে প্রথমবার সাগরে পরীক্ষা চালায় এবং ২০২৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে চীনা নৌবাহিনীতে যুক্ত হওয়ার কথা। ফুজিয়ান-এ ৮০টিরও বেশি যুদ্ধবিমান বহনের ক্ষমতা রয়েছে এবং এটি সম্পূর্ণভাবে চীনা নকশা ও প্রযুক্তিতে নির্মিত প্রথম “সুপার ক্যারিয়ার” হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
বিশ্লেষকদের মতে, চীনের এই পদক্ষেপ শুধু সামরিক শক্তি নয়, বরং কূটনৈতিক প্রভাবও বাড়াবে। দক্ষিণ চীন সাগর ও ভারত মহাসাগরে বাণিজ্য ও সামরিক উপস্থিতি জোরদার করতে এ ধরনের রণতরী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
ভারত বর্তমানে দুটি বিমানবাহী রণতরী (আইএনএস বিক্রমাদিত্য ও বিক্রান্ত) পরিচালনা করছে। চীনের চতুর্থ রণতরী নির্মাণের ফলে দক্ষিণ এশিয়ার সামুদ্রিক নিরাপত্তায় নতুন প্রতিযোগিতার আবহ তৈরি হতে পারে।
সূত্রসমূহ: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট, CGTN নিউজ ও চায়না ডেইলি,মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ, চীন সামরিক শক্তি রিপোর্ট 2024। কূটনীতিক ও রয়টার্স মিলিটারি অ্যানালাইসিস ডেস্ক।

