logo
ads

গাজায় আবারও হামাসের দখলদারিত্ব দৃঢ় যুদ্ধবিরতির ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশকাল: ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ০৮:০৩ পি.এম
গাজায় আবারও হামাসের দখলদারিত্ব দৃঢ় যুদ্ধবিরতির ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত

সংগৃহীত ছবি

দুই বছরের ভয়াবহ যুদ্ধের পর গাজায় কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতির মধ্যেও সহিংসতা, বিশৃঙ্খলা ও অনিশ্চয়তা বাড়ছে। স্থানীয় সূত্র ও আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা Reuters-এর প্রতিবেদনে জানা গেছে, যুদ্ধবিরতির মধ্যেই হামাস যোদ্ধারা পুনরায় রাস্তায় নেমে গাজা শহরে প্রকাশ্যে অভিযুক্তদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে, এবং পুরো অঞ্চলে নিয়ন্ত্রণ শক্ত করছে।

এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শান্তি পরিকল্পনা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, কারণ হামাসের পুনরুত্থান যুদ্ধবিরতির ভবিষ্যৎকে আরও অনিশ্চিত করেছে।

সোমবার রাতে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে দেখা যায়, হামাস যোদ্ধারা সাতজন ব্যক্তিকে “ইসরায়েলি বাহিনীর সহযোগী” অভিযোগে গাজা শহরে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করছে। হামাসের একটি সূত্র Reuters-কে ভিডিওটির সত্যতা নিশ্চিত করেছে।

গাজার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার সকাল থেকে বিভিন্ন এলাকায় হামাসের সশস্ত্র সদস্যরা টহল দিচ্ছে এবং সহায়তা সরবরাহের রুটগুলোয় মোতায়েন হয়েছে।

ফিলিস্তিনি নিরাপত্তা সূত্র জানায়, সাম্প্রতিক কয়েক দিনে হামাস যোদ্ধা ও তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষে ডজনখানেক মানুষ নিহত হয়েছে।

যুদ্ধবিরতি কার্যকর থাকলেও গাজা শহরের পূর্ব উপকণ্ঠে ইসরায়েলি ড্রোন হামলায় পাঁচজন নিহত হয়েছেন বলে গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। খান ইউনিসের কাছেও এক ব্যক্তি নিহত ও আরেকজন আহত হয়েছেন এক বিমান হামলায়।

হামাস এ ঘটনায় ইসরায়েলকে যুদ্ধবিরতি ভঙ্গের অভিযোগ করেছে। তবে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দাবি করেছে, তারা এমন ব্যক্তিদের লক্ষ্য করেছে যারা সীমারেখা অতিক্রম করে তাদের বাহিনীর দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সোমবার ইসরায়েলি সংসদে বক্তৃতা দিয়ে বলেন, “মধ্যপ্রাচ্যে নতুন এক ঐতিহাসিক ভোরের সূচনা হয়েছে।” তবে বাস্তবে যুদ্ধবিরতির বাস্তবায়ন নানা বাধায় থেমে আছে।

যুক্তরাষ্ট্র ও মিশরের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত সাম্প্রতিক শীর্ষ সম্মেলনে (কায়রো, ১৩ অক্টোবর) কোনো নতুন অগ্রগতি ঘোষণা করা যায়নি। আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী বাহিনী বা নতুন শাসনব্যবস্থা গঠনের বিষয়ে কোনো চুক্তি হয়নি। গাজায় এখনও ২.২ মিলিয়ন মানুষ দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে, কিন্তু প্রতিশ্রুত সহায়তার পরিমাণ এখনো কার্যকর হয়নি।গাজায় ইসরায়েলি বাহিনী আংশিকভাবে শহর থেকে সরে গেলেও, অনেক অঞ্চলেই এখনো সেনা উপস্থিতি ও টহল অব্যাহত রয়েছে।

হামাসের সূত্রগুলো জানায়, সংগঠনটি এখন থেকে “বিশৃঙ্খলা, চোরাচালান ও সহযোগিতার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা” নেবে। দীর্ঘ দুই বছরের ইসরায়েলি হামলা ও অবরোধের পরও হামাস তাদের অবশিষ্ট যোদ্ধাদের পুনর্গঠন করছে এবং গাজা শহরের বিভিন্ন রাস্তায় নিরাপত্তা ও সহায়তা পরিবহন নিয়ন্ত্রণে নিচ্ছে। রাস্তাঘাট পরিষ্কার ও ধ্বংসস্তূপ সরাতে শতাধিক কর্মী নিয়োজিত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পানির লাইন ও বাড়িঘর মেরামতের কাজও শুরু হয়েছে। হামাস জানিয়েছে, যুদ্ধের সময় সহায়তা রুট পাহারা দিতে গিয়ে শত শত পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছিলেন।

গাজায় যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পরও ২৫০টিরও বেশি মরদেহ ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে উদ্ধার হয়েছে, বলে জানিয়েছে সিভিল ডিফেন্স সার্ভিস। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস-নেতৃত্বাধীন আক্রমণে ইসরায়েলে প্রায় ১,২০০ জন নিহত ও ২৫১ জন জিম্মি হয়েছিলেন। তার প্রতিশোধে দুই বছরের ইসরায়েলি সামরিক অভিযানে গাজায় প্রায় ৬৮,০০০ মানুষ নিহত হয়েছে বলে স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের তথ্য। জাতিসংঘের খাদ্য নিরাপত্তা সংস্থা (WFP) জানিয়েছে, আগস্টের হিসাব অনুযায়ী গাজায় দুর্ভিক্ষের পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

UNICEF-এর মুখপাত্র টেস ইংগ্রাম জানান, বর্তমানে গাজায় তাবু, প্লাস্টিক শিট, পোশাক ও স্বাস্থ্যসামগ্রী প্রবেশ করছে, তবে এই সপ্তাহে সহায়তার পরিমাণ আরও বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, হামাস কর্তৃক হস্তান্তরিত চারটি মরদেহের পরিচয় শনাক্ত করা হয়েছে, যার মধ্যে একজন ছিলেন নেপালের ছাত্র।
এখনও ২৩ জন জিম্মির মরদেহ গাজায় রয়েছে, এবং একজনের খোঁজ মেলেনি। আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ দল এই মরদেহগুলো শনাক্ত ও উদ্ধার করতে কাজ করছে।

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, “যুদ্ধ শেষ হতে পারে না যতক্ষণ না হামাস তাদের অস্ত্র সমর্পণ করে এবং গাজার নিয়ন্ত্রণ থেকে সরে দাঁড়ায়।”অন্যদিকে ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, “হামাসকে সীমিত সময়ের জন্য শৃঙ্খলা রক্ষার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।” হামাস বলেছে, তারা “আর কোনো বিশৃঙ্খলা সহ্য করবে না” এবং “গাজায় শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বজায় রাখবে।”

জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের কর্মকর্তারা বলেছেন, হামাসের প্রকাশ্যে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা মানবাধিকার লঙ্ঘন। তারা যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভঙ্গ না করার আহ্বান জানিয়েছে এবং গাজায় নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক নজরদারি জোরদারের প্রস্তাব দিয়েছে।

সূত্র: রয়টার্স,আল জাজিরা মিডিল ইস্ট ডেস্ক।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর

হাইলাইটস

বিশেষ সংবাদ