গাজা যুদ্ধবিরতির শর্ত অনুযায়ী আরও দুই ইসরায়েলি জিম্মির মরদেহ ইসরায়েলে ফিরিয়ে দিয়েছে হামাস। তবে সংগঠনটি জানিয়েছে, বাকি মরদেহগুলো উদ্ধারে বিশেষ সরঞ্জাম ও অতিরিক্ত সময় প্রয়োজন, কারণ অনেক দেহাবশেষ এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে রয়েছে। হামাসের সশস্ত্র শাখা এক বিবৃতিতে জানায়, তারা যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় স্বাক্ষরিত যুদ্ধবিরতি চুক্তি পুরোপুরি মানার চেষ্টা করছে এবং যেসব মরদেহ উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে, সেগুলোই ফেরত দেওয়া হয়েছে।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর এক বিবৃতিতে নিশ্চিত করেছে যে, আন্তর্জাতিক রেডক্রসের মাধ্যমে দুটি কফিন ইসরায়েলে পৌঁছেছে। তবে সরকার এখনো আনুষ্ঠানিক শনাক্তকরণ সম্পন্ন করেনি। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জনগণকে আহ্বান জানিয়েছে, যেন আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না আসা পর্যন্ত তারা সংবেদনশীলতা বজায় রাখে।
এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সতর্ক করে বলেছেন, হামাস যদি চুক্তি ভঙ্গ করে বা জিম্মিদের মরদেহ ফেরত না দেয়, তাহলে ইসরায়েল আবারও গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করতে পারে। ট্রাম্প প্রশাসনের শীর্ষ উপদেষ্টারা জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত হামাস চুক্তি ভঙ্গ করেনি। তারা জীবিত ২০ জন জিম্মিকে সোমবারই ফেরত দিয়েছে এবং মৃতদের মরদেহ উদ্ধারে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
চুক্তি অনুযায়ী, প্রথম ধাপে হামাসকে মোট ৪৮ জন জিম্মিকে (জীবিত ও মৃত উভয়) ফেরত দিতে হবে। এর মধ্যে ২৮ জনের মরদেহ ফেরতের কথা রয়েছে। এখন পর্যন্ত ৯ জনের মরদেহ ফেরত দেওয়া হয়েছে, বাকি ১৯ জন এখনো নিখোঁজ বলে জানা গেছে। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ জানিয়েছেন, “যদি হামাস চুক্তি মানতে ব্যর্থ হয়, তাহলে আইডিএফকে আবার পূর্ণমাত্রার অভিযানের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।”
অন্যদিকে গাজায় জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক প্রধান টম ফ্লেচার আহ্বান জানিয়েছেন, যুদ্ধবিরতির শর্ত অনুযায়ী ইসরায়েল যেন দ্রুত সব সীমান্তপথে মানবিক সাহায্য প্রবেশের অনুমতি দেয়। তিনি বলেন, “মানবিক সাহায্য আটকানো কোনো পক্ষের জন্যই আলোচনার হাতিয়ার হতে পারে না।”
হামাসের নিয়ন্ত্রিত গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, চুক্তির অংশ হিসেবে ইসরায়েল ৯০ জন ফিলিস্তিনির মরদেহ ফেরত দিয়েছে। গাজার সাধারণ মানুষের মধ্যে যুদ্ধবিরতি টিকবে কি না, তা নিয়ে গভীর অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা খাদ্য মজুত করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। খানের ইউনুসের বাসিন্দা নেভেন আল-মুগরাবি বলেন, “যুদ্ধবিরতি কবে শেষ হবে তা কেউ জানে না। তাই মানুষ আতঙ্কে খাবার জমাচ্ছে, দামও ৩০ শতাংশ বেড়ে গেছে।”
মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ওয়াশিংটন এখন গাজায় “নিরাপদ অঞ্চল” তৈরির বিষয়ে ইসরায়েল ও আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করছে, যাতে সাধারণ মানুষ প্রয়োজনে আশ্রয় নিতে পারে।
সূত্র: বিবিসি নিউজ, রয়টার্স,দ্য গার্ডিয়ান,আল জাজিরা ।

