২০২৬ সালের ফুটবল বিশ্বকাপ শুরু হতে বাকি আর মাত্র আট মাস। যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো ও কানাডার যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিতব্য এবারের আসরের প্রস্তুতি এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে। ৪৮ দলের এই ‘গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’-এর প্রায় সব আয়োজন শেষ হলেও, হঠাৎ করে আলোচনায় এসেছে এক নতুন বিতর্ক—ভেন্যু পরিবর্তনের হুমকি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
ওয়াশিংটনে হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প বলেন, “যদি আমি মনে করি কোনো শহরে নিরাপত্তা ঝুঁকি আছে, তাহলে আমি ফিফা প্রেসিডেন্ট জিয়ান্নি ইনফান্তিনোকে ফোন করব এবং বলব—‘চলো ম্যাচটা অন্য শহরে নিয়ে যাই।’ আর সে সেটাই করবে, খুব সহজেই করবে।” তিনি আরও বলেন, নিরাপত্তাজনিত কারণে কিছু ম্যাচ ‘ডেমোক্র্যাট শাসিত শহর’ থেকে সরিয়ে নেওয়া হতে পারে, কারণ এসব এলাকায় “অপরাধ ও বিশৃঙ্খলা বেড়েছে।”
এর আগে গত সেপ্টেম্বরে ট্রাম্প প্রথমবারের মতো এই প্রসঙ্গ তোলেন। এবার তাঁর মন্তব্যে বিশ্বকাপ আয়োজক শহরগুলোর কর্মকর্তাদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
ট্রাম্পের মন্তব্যের জবাবে ফিফার এক মুখপাত্র বলেন, “আমরা আশা করি যুক্তরাষ্ট্রের ১৬টি আয়োজক শহর সফলভাবে ম্যাচ আয়োজনের জন্য প্রস্তুত থাকবে। নিরাপত্তা ও সুরক্ষা সবসময় ফিফার শীর্ষ অগ্রাধিকার।” তবে ফিফা পরিষ্কার করেছে, যদি মার্কিন সরকার কোনো ভেন্যুকে নিরাপত্তাজনিত কারণে অনুপযুক্ত বলে ঘোষণা করে, তাহলে ফিফা সরকারের সিদ্ধান্তকেই সম্মান করবে।
ক্যালিফোর্নিয়ার সান্তা ক্লারার মেয়র লিসা গিলমর বলেন, “আমাদের শহরকে অনিরাপদ বলা একেবারেই বাস্তবতার সঙ্গে মেলে না। আমরা তিন বছর ধরে বিশ্বকাপ আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছি, এবং আমরা গর্বিতভাবে সারা বিশ্বের দর্শকদের স্বাগত জানাব।” লস অ্যাঞ্জেলেস, নিউ ইয়র্ক ও সিয়াটলসহ বেশ কয়েকটি শহরের স্থানীয় কর্তৃপক্ষও ট্রাম্পের মন্তব্যকে “রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত” বলে আখ্যা দিয়েছে।
ট্রাম্প আরও ইঙ্গিত দেন, ২০২৮ সালের লস অ্যাঞ্জেলেস অলিম্পিকের কিছু ইভেন্টও “নিরাপত্তা বিবেচনায়” অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হতে পারে। এতে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটিতেও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। বর্তমানে নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী, ২০২৬ সালের ১৯ জুলাই নিউ জার্সির মেটলাইফ স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে ফাইনাল ম্যাচ। লস অ্যাঞ্জেলেসে ৮টি, বোস্টনে ৭টি, সান ফ্রান্সিসকো ও সিয়াটলে ৬টি করে ম্যাচ আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে। ৪৮ দলের এই টুর্নামেন্টের বেশিরভাগ ম্যাচই যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত হবে, বাকিগুলো মেক্সিকো ও কানাডায়।
ইউরোপীয় ফুটবল মহল ট্রাম্পের মন্তব্যকে “অকূটনৈতিক ও ক্রীড়াবিরোধী” বলে অভিহিত করেছে। জার্মান ফুটবল ফেডারেশনের এক কর্মকর্তা বলেছেন,
“বিশ্বকাপ ক্রীড়ার ঐক্যের প্রতীক। রাজনৈতিক বক্তব্য দিয়ে এর পরিবেশ নষ্ট করা উচিত নয়।” বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের এই মন্তব্য শুধু ক্রীড়াঙ্গন নয়, আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক সম্পর্কেও প্রভাব ফেলতে পারে, বিশেষত যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির প্রেক্ষাপটে।
সূত্র: রয়টার্স, বিবিসি স্পোর্টস, এপি নিউজ, ফিফা অফিসিয়াল ওয়েবসাইট
সম্পাদনা: বর্তমানবাংলা আন্তর্জাতিক ডেস্ক

