গাজায় সাম্প্রতিক যুদ্ধ এবং যুদ্ধ বিরতীর পর পুরো অঞ্চলটি ধ্বংসের অতিমাত্রায় দাঁড়িয়েছে। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী গাজায় সৃষ্ট ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৭০ বিলিয়ন ডলার, যা পুনর্গঠনকে “শূন্য থেকে শুরু করার চেয়েও কঠিন” করেছে, মন্তব্য করেছেন কিংস কলেজ লন্ডনের মধ্যপ্রাচ্য নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ প্রফেসর আন্দ্রিয়াস ক্রিগ।
জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচির প্রতিনিধি জ্যাকো সিলিয়ার্স জানান, গাজার প্রায় ৮৪% এলাকা ধ্বংস হয়েছে, এবং গাজা শহরে এই ধ্বংসের হার পৌঁছেছে ৯২%-এ। বেসামরিক স্থাপনা ধ্বংসের ফলে প্রায় ৬ কোটি টন ধ্বংসাবশেষ তৈরি হয়েছে। এগুলোর মধ্যে কেবল কংক্রিট বা ধাতু নয়, মানবাধিকার লঙ্ঘন, বিস্ফোরক বোমা এবং মানুষের অবশিষ্টাংশও রয়েছে।
প্রাক্তন JCB এক্সিকিউটিভ ফিলিপ বুভেরাট বলেন, “প্রথম কাজ হলো বোমাবিদ্ধ স্থানগুলোকে নিরাপদ করা। তারপর ধ্বংসাবশেষ আলাদা, বাছাই ও পুনঃব্যবহারযোগ্য কংক্রিট তৈরি করতে হবে। এ ছাড়া হাজার হাজার কনটেইনার আনার জন্য গভীর সমুদ্রবন্দর স্থাপন করা আবশ্যক।”
ইউনিসেফের তথ্য অনুযায়ী, গাজার ৬০০টি পানি ও স্যানিটেশন কেন্দ্রের প্রায় ৭০% ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিশেষ করে, গাজা শহরের শেখ এজলিন নিকাশী কেন্দ্র ধ্বংসের শিকার হয়েছে। এতে পানিবাহিত রোগ এবং কলেরা ছড়ানোর ঝুঁকি বেড়েছে।
জাতিসংঘের স্যাটেলাইট তথ্য অনুযায়ী, গাজার ২,৮২,৯০৪টি ঘর ও অ্যাপার্টমেন্ট ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গাজা শহরের শেখ রাদওয়ান এলাকায় ধ্বংসের হার আশঙ্কাজনক।
র্যান্ড কর্পোরেশনের সিনিয়র গবেষক শেলি কালবার্টসন বলেন, “যদি ২০১৪ এবং ২০২১ সালের পুনর্গঠনের ধারা অবলম্বন করা হয়, পুনর্গঠন করতে ৮০ বছর লাগতে পারে। তবে ভালো পরিকল্পনা থাকলে সময় কমানো সম্ভব।”
গাজার বিদ্যুৎ ব্যবস্থা যুদ্ধের আগে থেকেই সংকটে ছিল। প্রধান বিদ্যুৎ সরবরাহ ছিল ইসরায়েল থেকে সংযোগ এবং গাজার ডিজেল-পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে। অক্টোবর ২০২৩ থেকে বিদ্যুৎ প্রায় পুরোপুরি বন্ধ। Gaza Electricity Distribution Cooperation (Gedco) জানিয়েছে, কোম্পানির ৭০% অবকাঠামো ধ্বংস হয়েছে, যা বিদ্যুৎ সরবরাহে গুরুতর প্রভাব ফেলেছে।
স্যাটেলাইট বিশ্লেষণ অনুযায়ী, গাজার বার্ষিক ফসলের ৮২.৪% এবং বৃক্ষজাত ফসলের ৯৭% ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলশ্রুতিতে খাদ্য নিরাপত্তা বিপর্যস্ত, এবং গাজা শহরে সেপ্টেম্বর ২০২৫-এ অনাহারের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
গাজার জনসংখ্যার অর্ধেক ১৮ বছরের নিচে। UNRWA জানিয়েছে, ২৮৮টি স্কুলের প্রায় ৯১.৮% সম্পূর্ণ পুনর্গঠন বা গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের প্রয়োজন।
গাজার পুনর্গঠন শুধু ধ্বংসাবশেষ পরিষ্কার বা ঘর তৈরি নয়; এটি স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ, পানি, শিক্ষা ও কৃষি সব ক্ষেত্রের সমন্বিত পরিকল্পনার ওপর নির্ভর করছে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, পুনর্গঠন কার্যক্রম সময়সাপেক্ষ, বিপুল অর্থসংগ্রহ এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার উপর নির্ভরশীল।
সুত্র: বিবিসি , জাতিসংঘ, ইউনিসেফ, ইউএনডিপি, ইউএনআরডব্লিউএ, জিইডিসিও, র্যান্ড কর্পোরেশন।

