logo
ads

জকসু নির্বাচনে নারী শিক্ষার্থী নীরব : সাহসের অভাব নাকি সংস্কারের সংকট?

জবি প্রতিনিধি

প্রকাশকাল: ১৮ অক্টোবর ২০২৫, ০৩:৫৪ পি.এম
জকসু নির্বাচনে নারী শিক্ষার্থী নীরব : সাহসের অভাব নাকি সংস্কারের সংকট?

প্রতিকী ছবি

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ক্যাম্পাসে নভেম্বরের আগন্তুক জকসু নির্বাচনের খবর যেন এক উজ্জ্বল আলোয় ভরিয়ে দিয়েছে—প্রতিষ্ঠার পর প্রথমবারের মতো শিক্ষার্থীরা নেতৃত্ব বাছাইয়ের সুযোগ পাচ্ছে। ক্যাম্পাসজুড়ে শুরু হয়েছে প্রচারণার ধ্বনি, প্যানেল গঠনের আলোচনা, কিন্তু এই উৎসবের আড়ালে লুকিয়ে আছে এক গভীর ছায়া: নারী শিক্ষার্থীদের অনাগ্রহ ও প্রার্থী সংকট। যেন একটি অর্ধ-অন্ধকার ঘরে আলোর খোঁজে হাতড়ে বেড়ানো, রাজনৈতিক সংগঠনগুলো উপযুক্ত নারী প্রার্থী খুঁজে পাচ্ছে না। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, ইসলামী ছাত্রশিবির, ছাত্র অধিকার পরিষদ বা বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ—কোনোটির কমিটিতেই নারীদের সক্রিয় উপস্থিতি চোখে পড়ে না। আপ বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও একই ছবি। কেবল ছাত্রদলের সাম্প্রতিক কমিটিতে দু-তিনজন নারীর নাম থাকলেও তারা সংগঠনের কর্মসূচিতে নিষ্ক্রিয়। শুধু সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টে নারীদের অংশগ্রহণ লক্ষ্য করা যায়, যা যেন একটি আলোর রশ্মি এই অন্ধকারে।

ক্যাম্পাসের এই নীরবতা যেন এক অদৃশ্য যুদ্ধের ক্ষেত্র—যেখানে নারী শিক্ষার্থীরা রাজনীতির ক্ষেত্রে পা রাখতে ভয় পান। এক নারী শিক্ষার্থী বলেন, “রাজনীতি মানেই সংঘর্ষ, হুমকি, দ্বন্দ্ব। এই পরিবেশে মেয়েরা কীভাবে এগোবে? কোনো দলের কমিটিতে আমাদের জায়গা নেই, থাকলেও তা শুধু নামের জন্য।” দীর্ঘ রাজনৈতিক অস্থিরতা, বহুদলীয় কোন্দল এবং নেতৃত্বে নারীদের স্থানের অভাব এই অনাগ্রহের মূল কারণ। গত জুলাইয়ের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে নারী শিক্ষার্থীদের সাহসী ভূমিকা ছিল—কিন্তু সেই পর থেকে তাদের অংশগ্রহণ ক্রমশ কমেছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বলছেন, এটি একটি পশ্চাদপসরণ, যা ক্যাম্পাসের ভবিষ্যৎকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। সমাজবিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষক বলেন, “নারীরা রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় হলে চরিত্র বা পোশাক নিয়ে ব্যঙ্গ হয়—এটি এক সামাজিক শাস্তি, যা তাদের নিরুৎসাহিত করে।”

আরও গভীর হয়ে যায় এই কষ্টের কারণ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিষাক্ত ছায়া। এক ছাত্রী বলেন, “একটা পোস্টে মত দিলে বা আন্দোলনের ছবি দিলে শুরু হয় মন্তব্যের বন্যা। অনলাইন বুলিং, হ্যারাসমেন্ট, শ্লাটশেমিং—এতে বিব্রত হয়ে রাজনীতি থেকে দূরে সরে যাই।” জুলাই অভ্যুত্থানে কেন্দ্রীয় সমন্বয়ের ভূমিকা পালনকারী লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী সর্ণা রিয়া বলেন, “সত্যিকারের অর্থে মেয়েরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। আমি নিজে অভ্যুত্থানের পর সব যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছিলাম। পড়াশোনাই আমার শেষ সম্বল। পরিবারের কাছ থেকে নেতিবাচক দৃষ্টি, সোশ্যাল মিডিয়ায় চরিত্রহনন—এসব সহ্য করে কী লাভ?” এই অনলাইন সংস্কৃতি যেন এক বিষাক্ত ফাঁদ, যা নারীদের আত্মবিশ্বাস ক্ষয় করে দিচ্ছে।

সংগঠনগুলোর দিকে তাকালে ছবি আরও স্পষ্ট। সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি ইভান তাহসিব বলেন, “জুলাই আন্দোলনে আমরা ঐক্যবদ্ধ ছিলাম, কিন্তু পরে পলিটিকাল আরগুমেন্ট নারীদের নিরুৎসাহিত করেছে। বড় দলগুলোতে নারীদের জায়গার গ্যাপ আছে। আমরা চেষ্টা করছি—এবারের জকসুতে ইনক্লুসিভ প্যানেল, ৬০-৪০ হারে নারী-পুরুষ।” শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি জানান, তাদের প্যানেলে নারী থাকবেন, কিন্তু শতাংশ এখনও নির্ধারিত নয়। শাখা ছাত্রদলের প্যানেলের বিষয়েও বিস্তারিত জানা যায়নি। এই অস্পষ্টতা যেন এক প্রশ্নবিদ্ধ চিহ্ন—কতদিন এই সংকট চলবে?

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক তাজাম্মুল হক বলেন, “কোনো বুলিং বা থ্রেট নেই। প্রকৃত বিষয় নারীদের স্বতঃস্ফূর্ত আকাঙ্ক্ষার অভাব। ক্যাম্পাসের পরিবেশ অনুকূল, নিজ উদ্যোগে এগোলে সমর্থন পাবেন।” কিন্তু এই কথা যেন এক অর্ধ-সত্য—কারণ সামাজিক-অনলাইনের ছায়া এখনও অন্ধকার। জবির এই জকসু নির্বাচন যেন এক সুযোগ—নারীদের কণ্ঠকে সামনে আনার। যদি সংগঠনগুলো সত্যিই ইনক্লুসিভ হয়, তবে ক্যাম্পাসের আলো আরও উজ্জ্বল হবে। নইলে এই সংকট যেন এক নীরব বিদ্রোহ, যা ভবিষ্যতের নেতৃত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করে রাখবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর

হাইলাইটস

বিশেষ সংবাদ