ভ্রমণ শুধু জায়গা দেখা নয়, মানুষের সঙ্গে যোগাযোগেরও এক অনন্য অভিজ্ঞতা। কোথাও স্থানীয়রা আপনাকে আপন করে নেবে, কোথাও আবার মুখোমুখি হতে হবে ঠাণ্ডা দৃষ্টি, অধৈর্যতা বা আক্রমণাত্মক আচরণের। ভ্রমণকারীদের অভিজ্ঞতা, স্থানীয় আচরণ, অপরাধের হার, ট্রাফিক সমস্যা এবং অতিপর্যটনের প্রভাবের ভিত্তিতে Big Global Travel প্রকাশ করেছে বিশ্বের সবচেয়ে অমিশুক দেশগুলোর একটি তালিকা।
এই তালিকায় স্থান পেয়েছে ৫০টি দেশ—যেখানে ১ নম্বরে রয়েছে সবচেয়ে কম অমিশুক দেশ, আর ৫০ নম্বরে রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে অমিশুক দেশ।
ভ্রমণকারীদের জন্য সবচেয়ে কঠিন অভিজ্ঞতা
১. রাশিয়া – রাজনৈতিক উত্তেজনা, কঠোর ভিসা প্রক্রিয়া এবং শীতল সামাজিক আচরণ রাশিয়াকে বানিয়েছে এমন এক গন্তব্য যেখানে পর্যটকরা আতিথেয়তার বদলে আতঙ্ক অনুভব করেন।
২. চীন – জনসংখ্যার চাপে ভ্রমণকারীরা প্রায়শই নিজেদের অদৃশ্য মনে করেন। বাজার থেকে ট্রেন স্টেশন—সবখানেই ভিড় আর উদাসীনতা।
৩. জাপান – শৃঙ্খলা আর পরিপূর্ণতার দেশ হলেও অতিরিক্ত রিজার্ভড মনোভাব পর্যটকদের মনে শীতলতা তৈরি করে।
৪. দক্ষিণ কোরিয়া – সামাজিক হায়ারার্কি আর গম্ভীরতা ভ্রমণকারীদের সহজে মানিয়ে নিতে দেয় না।
৫. হংকং – দ্রুতগতির শহুরে জীবনে উষ্ণতা নেই, আছে শুধু ব্যস্ততা ও উদাসীনতা।
৬. সিঙ্গাপুর – কঠোর নিয়ম-কানুনে ভ্রমণকারীরা নিরাপত্তা পান, কিন্তু পান না খোলামেলা আতিথেয়তা।
৭. মালয়েশিয়া – সংস্কৃতির বৈচিত্র্য থাকলেও অনেক এলাকায় পর্যটকদের প্রতি আচরণ মিশ্র, যা বিভ্রান্তিকর।
৮. ভারত – অপূর্ব রঙ আর সংস্কৃতির মাঝেও স্ক্যাম, ভিড় আর প্রতারণা ভ্রমণকারীদের ক্লান্ত করে তোলে।
৯. ভিয়েতনাম – অতিরিক্ত দরকষাকষি ও স্থানীয় বিরক্তি পর্যটকদের জন্য অস্বস্তিকর।
১০. মরক্কো – বাজারে আক্রমণাত্মক বিক্রেতাদের চাপে ভ্রমণকারীরা প্রায়ই দমবন্ধ বোধ করেন।
১১. ব্রাজিল – অপরাধের আশঙ্কা শহরভ্রমণকে কঠিন করে তোলে, যদিও মানুষ সাধারণত ফ্রেন্ডলি।
১২. নিউজিল্যান্ড – প্রাকৃতিক সৌন্দর্য থাকলেও কিছু এলাকায় মানুষ ভ্রমণকারীদের প্রতি শীতল।
১৩. আইসল্যান্ড – দূরবর্তীতা আর সংযমী জীবনধারা পর্যটকদের মনে এক ধরণের একাকিত্ব আনে।
১৪. নরওয়ে – উচ্চ খরচের মতোই মানুষের আচরণেও ঠাণ্ডাভাব স্পষ্ট।
১৫. ডেনমার্ক – কোপেনহেগেনের রঙিন শহরে হাসি অনেক সময় হারিয়ে যায় স্ক্যান্ডিনেভিয়ান নীরবতায়।
সাংস্কৃতিক দূরত্ব ও ঠাণ্ডা আতিথেয়তা
১৬. ফিনল্যান্ড – সামাজিক দূরত্ব, নীরবতা আর সংযমী আচরণ।
১৭. সুইডেন – ভদ্র হলেও বন্ধুত্বপূর্ণ নয়, রিজার্ভড স্বভাব।
১৮. কানাডা (শহুরে অভিজ্ঞতা) – ছোট শহরে উষ্ণতা, বড় শহরে শীতলতা।
১৯. যুক্তরাষ্ট্র – কিছু শহরে অহংকারপূর্ণ, আত্মকেন্দ্রিক আচরণ।
২০. অস্ট্রিয়া – ভিয়েনার সেবা খাতে ধৈর্যহীনতা।
২১. বেলজিয়াম – ভাষাগত বিভাজনে স্থানীয়দের উদাসীনতা।
২২. নেদারল্যান্ডস – আমস্টারডামে অতিপর্যটনে বিরক্তি।
২৩. পর্তুগাল – লিসবনে পর্যটকদের প্রতি অবহেলার অভিযোগ।
২৪. ক্রোয়েশিয়া – ভিড়ে স্থানীয়রা রুক্ষ হয়ে ওঠে।
২৫. গ্রীস – অর্থনৈতিক চাপ আতিথেয়তায় প্রভাব ফেলেছে।
২৬. তুরস্ক – বাজারে আক্রমণাত্মক বিক্রয়কৌশল।
২৭. থাইল্যান্ড – অতিপর্যটনে স্থানীয়দের ক্লান্তি।
২৮. ইন্দোনেশিয়া – বালির ভিড় অনেক সময় অস্বস্তিকর।
২৯. অস্ট্রেলিয়া – কিছু এলাকায় অমনোযোগী স্থানীয়।
৩০. জাপান (ভাষা বাধা) – যোগাযোগের সমস্যা আতিথেয়তায় বাধা।
উদাসীনতা, অপরাধ ও সাংস্কৃতিক শীতলতা
৩১. মিশর – নিরাপত্তাহীনতা ও আক্রমণাত্মক আচরণ।
৩২. কানাডা (কাস্টমস) – সীমান্তে কঠোরতা।
৩৩. মেক্সিকো – অপরাধের আতঙ্ক।
৩৪. সৌদি আরব – সাংস্কৃতিক শৃঙ্খল ও উচ্চস্বরে কথা।
৩৫. নরওয়ে (রিজার্ভড স্বভাব) – অতিরিক্ত সংযম।
৩৬. আর্জেন্টিনা – উচ্চবিত্ত এলাকায় উদাসীনতা।
৩৭. সুইজারল্যান্ড – সমৃদ্ধ হলেও ঠাণ্ডা মেজাজ।
৩৮. দক্ষিণ কোরিয়া (অন্য অভিজ্ঞতা) – সামাজিক চাপ পর্যটকদের ভোগায়।
৩৯. চীন (জনসমাগম) – ভিড়ের মধ্যে অদৃশ্য হয়ে যাওয়া।
৪০. রাশিয়া (শীতলতা) – আবহাওয়া ও মানুষ সমানভাবে কঠিন।
৪১. ফ্রান্স – প্যারিসে ওয়েটার আর ট্যাক্সি ড্রাইভারদের অসৌজন্যমূলক ব্যবহার।
৪২. যুক্তরাজ্য – লন্ডনের শুষ্ক রসবোধ।
৪৩. জার্মানি – দক্ষিণে কঠোর, কখনো অহংকারপূর্ণ আচরণ।
৪৪. স্পেন – মাদ্রিদের উদাসীনতা।
৪৫. ইতালি – রোমের ব্যস্ততায় অধৈর্য মানুষ।
৪৬. পোল্যান্ড – ভাষার বাধায় দূরত্ব।
৪৭. হাঙ্গেরি – বুদাপেস্টে পর্যটক ক্লান্তি।
৪৮. চেক প্রজাতন্ত্র – প্রাগে অতিপর্যটনে অসন্তোষ।
৪৯. দক্ষিণ আফ্রিকা – জোহানেসবার্গসহ বড় শহরে অপরাধের ভয়।
৫০. কাতার – বিশ্বের সবচেয়ে অমিশুক দেশ: ট্রাফিক বিশৃঙ্খলা, সাংস্কৃতিক দূরত্ব আর পর্যটকদের প্রতি অদ্ভুত অস্বস্তি।
তালিকা স্পষ্ট করে দিয়েছে—অমিশুকতা সবসময় খারাপ ইচ্ছার ফল নয়। বরং অনেক সময় তা সাংস্কৃতিক পার্থক্য, অর্থনৈতিক চাপ বা অতিরিক্ত ভিড়ের ফলাফল। তাই যেকোনো দেশে ভ্রমণের আগে স্থানীয় সংস্কৃতি সম্পর্কে ধারণা নেওয়া জরুরি।

