logo
ads

ভারত ভ্রমণে সীমান্তে ডিজিটাল দেয়াল প্রবেশ করতে লাগবে- অনলাইন আগমন ফরম পূরণ

বেনাপোল প্রতিনিধি

প্রকাশকাল: ৬ অক্টোবর ২০২৫, ০৯:৫২ এ.এম
ভারত ভ্রমণে সীমান্তে ডিজিটাল দেয়াল প্রবেশ করতে লাগবে- অনলাইন আগমন ফরম পূরণ

নিজস্ব

এক সময় বেনাপোল সীমান্ত ছিল দুই দেশের বন্ধুত্বের উষ্ণ করমর্দনের মতো—নিয়ম ছিল, কাগজে হাতে লেখা নাম আর একটি পাসপোর্ট। এখন সে উষ্ণতা যেন ডিজিটালের ঠান্ডা পর্দায় হারিয়ে যাচ্ছে। নতুন নিয়মে ভারত ভ্রমণের আগে অনলাইনে আগমন ফরম পূরণ বাধ্যতামূলক করেছে ভারত সরকার। ১ অক্টোবর থেকে চালু হওয়া এই নিয়মে যাত্রাপথ এখন আরও জটিল, আরও দীর্ঘশ্বাসময়।

বলা যায়—উপরটা নরম মসৃণ, ভেতরে কাঁটাযুক্ত। সহজীকরণের নামে বেড়েছে শর্ত, বেড়েছে অনিশ্চয়তা। সার্ভার নামের নতুন এক দেয়াল এখন সীমান্তের ভিসা ঘরে দাঁড়িয়ে থাকে। কখনও সচল, কখনও ঝিমিয়ে পড়ে—আর সেই অপেক্ষায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকে সাধারণ পাসপোর্টধারীরা।

বেনাপোল বন্দর সূত্রে জানা গেছে, ভিসা প্রাপ্তির জটিলতা ও ভ্রমণ শর্তের বেড়াজালে যাতায়াত কমে এসেছে প্রায় ২০ শতাংশে। বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার পর্যন্ত তিন দিনে বেনাপোল দিয়ে পাড়ি জমিয়েছে মাত্র তিন হাজার ৮৮২ জন পাসপোর্টযাত্রী। এক সময় যেখানে প্রতিদিন সাত থেকে আট হাজার মানুষ এই পথ পাড়ি দিতেন।

গত বছরের ৫ আগস্ট ২০২৪ থেকে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও নিরাপত্তার অজুহাতে ভারত সরকার বন্ধ করে দেয় ট্যুরিস্ট, বিজনেস ও স্টুডেন্ট ভিসা। চালু রাখা হয় কেবল মেডিকেল ভিসা, তাও কঠোর শর্তে—যে ডাক্তারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেওয়া আছে, চিকিৎসা করতে হবে শুধুমাত্র তার কাছেই। অনিয়ম করলে ফেরার পথে ইমিগ্রেশনে আটকে দেওয়া হচ্ছে যাত্রীদের।

সর্বশেষ ১ অক্টোবর থেকে যোগ হয়েছে আরও একটি ধাপ—ভারত ভ্রমণের ৭২ ঘণ্টা আগে ‘ইন্ডিয়ান ভিসা অনলাইন অ্যারাইভেল’ ওয়েবসাইটে আগমন ফরম পূরণ করতে হবে, প্রিন্ট কপি হাতে রাখতে হবে। তবু সহজ নয়; কারণ সেই ওয়েবসাইটের সার্ভার সচল থাকে না নিয়মিত, আর সেখানেই জমে ওঠে নাগরিকদের নতুন হতাশা।

বেনাপোল বন্দর এলাকার পাসপোর্টধারী শ্যামল কুমার রায় জানান, “স্ত্রীকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য যাচ্ছি। নতুন করে ফরম পূরণে ১০০ টাকা খরচ হয়েছে, সার্ভার সমস্যায় এক ঘণ্টা অপেক্ষা করেছি। চিকিৎসার চেয়ে বড় কষ্ট এখন ফরমের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা।”

অন্যদিকে অনিমেষ নামের এক যাত্রী বলেন, “ভিসা পেতে ১৭ থেকে ১৮ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। হয় ভিসা সহজ করুক, না হয় বন্ধ করে দিক—এই অর্ধেক পথে মানুষ শুধু হয়রানির শিকার।”

আরেক যাত্রী আশানুর রহমানের অভিমত, “যশোর থেকে ভিসা বন্ধ থাকায় এখন দুইবার ঢাকা যেতে হয়। ফি বেড়েছে, খরচ বেড়েছে, অনলাইন ফরম আবার আলাদা বিড়ম্বনা। যাতায়াত আগের মতো আর সহজ নেই।”

বেনাপোল স্থলবন্দর পরিচালক শামিম হোসেন জানান, “ভিসা কমে আসায় পাসপোর্টধারী যাতায়াতও কমে গেছে। তিন দিনে এ পথে তিন হাজার ৮৮২ জন যাতায়াত করেছেন।”

সব মিলিয়ে ভারত ভ্রমণ এখন যেন এক অনিশ্চিত যাত্রা—ভিসার গিঁটে, অনলাইন ফরমের জালে, আর সীমান্তের ঠান্ডা বাতাসে হারিয়ে যাচ্ছে দুই দেশের মানুষের সেই পুরনো নির্ভরতার উষ্ণতা।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর

হাইলাইটস

বিশেষ সংবাদ