সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বিদেশে পাচার করা অর্থের একটি অংশ আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে। তবে পুরো অর্থ ফেরত আসবে কি না এবং কতটুকু আসবে তা এখনও নির্ধারণ করা যায়নি। এমন মন্তব্য করেছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ।
সচিবালয়ে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এই মন্তব্য করেন।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, “পাচারকারীরা সব বুদ্ধি জানেন। এটা আনতে গেলে কিছুটা সময়ের প্রয়োজন। তবে কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে। অনেক আইনি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে। ফেব্রুয়ারির মধ্যে কিছু অর্থ আসতে পারে। বাকি অর্থের জন্য আমরা ক্ষেত্র স্তুত করছি।”
তিনি আরও বলেন, “অর্থ ফেরত আনার আনুষ্ঠানিকতা কোনো সরকার এড়িয়ে থাকতে পারবে না। ১১-১২টি কেস আমরা একেবারে উচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে দেখছি। আর বাকি কেসগুলোর মধ্যে যেগুলো ২০০ কোটি টাকার বেশি তাদেরও ধরা হচ্ছে।”
প্রধান গুরুত্ব ও অনুমান অর্থ উপদেষ্টা বলেছেন, বিদেশে পাচার হওয়া অর্থের একটি অংশ ফিরিয়ে আনার বিষয়ে ইতিমধ্যেই কিছু অগ্রগতি হয়েছে এবং অসংখ্য আইনি প্রতিষ্ঠান ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে আলোচনারত দল রয়েছে। সাংবাদিকদের প্রশ্নে স্পষ্ট করা হয়নি পুরো পরিমাণ।
উচ্চ অগ্রাধিকার মামলা সরকার ১১-টি ‘প্রায়োরিটি’ (অগ্রাধিকার) কেস চিহ্নিত করেছে যেগুলো দ্রুত অনুসন্ধান ও রিকভারি প্রক্রিয়ায় থাকবে।
আইনি অবকাঠামোর উন্নয়ন একটি ‘স্পেশাল আইন’ প্রনয়ন করার পরিকল্পনা রয়েছে যা বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ দ্রুত ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করবে।
আর্থিক গোটা পরিমাণ ও চ্যালেঞ্জ সরকারের একটি রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে প্রায় $75-100 বিলিয়ন (বিভিন্ন ধরনের দুর্নীতি, অনিয়ম ও সরকারের প্রকল্প থেকে অবৈধ অর্থ পাচার) বিদেশে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
এই বিশাল পরিমাণ অর্থ রিকভারি করা সহজ নয়— বিভিন্ন দেশের আইন, বিচার ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা দরকার।
অর্থ উপদেষ্টা আশাবাদী যে, আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে “কিছু অর্থ” দেশে ফিরিয়ে আনা যাবে। যদিও ঠিক কতটুকু তা তিনি না জানিয়েই যাচ্ছেন।
উচ্চ অগ্রাধিকারের মামলাগুলোর ক্ষেত্রে দ্রুততার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু সময় লাগবে— মামলা নির্ণয়, প্রমাণ সংগ্রহ, বিদেশি আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বা আদালতের সঙ্গে সমন্বয়, ব্যাংক হিসাব খোলাসাসহ নানা জটিল ধাপ রয়েছে।
সরকারের পরিকল্পনায় বিদেশে পাচার আয় ফিরে আনার কাজকে ধারাবাহিক করতে হবে, কারণ শুধু একটি সময়ে কাজ করলে পুরো টাকা ফিরে আনাটা অসম্ভব হতে পারে।
পরিমাণ ও উৎস: ঠিক কোন ব্যক্তি বা কোম্পানি কতটুকু অর্থ পাচার করেছে এবং তারা কোথায় পাঠিয়েছে— এগুলোর বিস্তারিত তালিকা কি পাওয়া গেছে?
আইনি প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা: মামলা চলাকালীন সময়ে কি তথ্য জনগণের জন্য খোলামেলা থাকবে? বিচারপ্রক্রিয়া কতটা দ্রুত হবে?
আন্তর্জাতিক সহযোগিতা: যেসব দেশগুলি অর্থ পাচার হয়েছে, তাদের সঙ্গে কী ধরনের চুক্তি আছে? আইনগত বাধা কি রয়েছে?
নতুন সরকারের মনোভাব: এই প্রচেষ্টা আগামী নির্বাচন ও সরকারের পরিবর্তন হলেও কি একইভাবে চালু থাকবে?
বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ সরকারের অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ হিসেবে ধরা হয়েছে। ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে অর্থের একটি অংশ ফিরিয়ে আনা যেতে পারে—এটি একটি ইতিবাচক ঘোষণা। তবে পুরো অর্থ ফিরিয়ে আনতে হলে আইনগত প্রক্রিয়া, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, এবং ধারাবাহিকতাই সবচেয়ে বড় চাবিকাঠি।

