চলতি ২০২৫–২৬ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি কিছুটা বেড়ে ৪.৮ শতাংশে পৌঁছাবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। গত অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ছিল ৩.৯৭ শতাংশ, আর তার আগের অর্থবছরে ৪.২২ শতাংশ।
মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির সদ্য প্রকাশিত বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট প্রতিবেদনে এই পূর্বাভাস জানানো হয়। প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করেন বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র অর্থনীতিবিদ নাজমুস সাদাত খান। উপস্থিত ছিলেন সংস্থার দক্ষিণ এশিয়ার প্রধান অর্থনীতিবিদ ফ্রানজিসকা ওহসরজে এবং বাংলাদেশ ও ভুটানের কান্ট্রি ডিরেক্টর জঁ পেসমে।
প্রবৃদ্ধির কারণ
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মূল্যস্ফীতি হ্রাস ও বেসরকারি ভোগব্যয় বৃদ্ধির ফলে জিডিপি বৃদ্ধি পাবে। তবে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও ব্যাংকিং খাতের দুর্বলতা বিনিয়োগে মন্থরতা আনতে পারে। বৈশ্বিক বাণিজ্য উত্তেজনা চললেও যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্ক কাঠামোর অধীনে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বজায় থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
চলতি হিসাবঘাটতি আমদানি স্বাভাবিক হওয়ায় পুনরায় বাড়তে পারে, তবে রাজস্ব সংস্কারের কারণে বাজেট ঘাটতি জিডিপির ৫ শতাংশের নিচে থাকবে। সরকারি ঋণ আগামী ২০২৬–২৭ অর্থবছরে জিডিপির ৪১.৭ শতাংশে পৌঁছাতে পারে।
৬টি প্রধান ঝুঁকি
বিশ্বব্যাংক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য ছয়টি প্রধান ঝুঁকি রয়েছে—
১. ব্যাংকিং খাতের দুর্বলতা
২. নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা
৩. সংস্কার বাস্তবায়নে বিলম্ব
৪. আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বিঘ্ন
৫. প্রত্যাশার তুলনায় ধীর মূল্যস্ফীতি হ্রাস
৬. জ্বালানি সরবরাহে সীমাবদ্ধতা
সংস্থাটি বলেছে, সংস্কার ও বিনিয়োগ কার্যক্রম জোরদার হলে আগামী অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি বেড়ে ৬.৩ শতাংশে পৌঁছাতে পারে। তখন মূল্যস্ফীতি ৫.৫ শতাংশে নেমে আসবে এবং দারিদ্র্যের হার কমে ১৯.১ শতাংশে দাঁড়াবে।
এলডিসি থেকে উত্তরণ
২০২৬ সালের নভেম্বর মাসে বাংলাদেশের এলডিসি থেকে উত্তরণ রফতানিতে তাৎক্ষণিক নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ২০২৯ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের জন্য অগ্রাধিকারমূলক শুল্ক হার বহাল রাখবে। এলডিসি উত্তরণ বাংলাদেশের অর্থনীতির কাঠামোগত সংস্কার, প্রতিযোগিতা বাড়ানো ও বৈচিত্র্য বৃদ্ধির জন্য বড় সুযোগ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
ব্যাংকিং খাত ও আর্থিক স্থিতিশীলতা
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৫ সালের মার্চ নাগাদ ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৪.১ শতাংশে— যা দক্ষিণ এশিয়ার গড় ৭.৯ শতাংশের তুলনায় অনেক বেশি। সরকার ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা জোরদার ও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর শাসনব্যবস্থা উন্নত করার উদ্যোগ নিয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাধীনতা বাড়াতে আইনি কাঠামো সংশোধনের কাজ চলছে।
সার্বিকভাবে প্রবাসী আয় ২৬.৮ শতাংশ এবং রফতানি আয় ৮.৮ শতাংশ বেড়েছে। পোশাক, চামড়া, জুতা, প্লাস্টিক ও কৃষিপণ্যে প্রবৃদ্ধি এসেছে। আমদানি বেড়েছে ৪.৩ শতাংশ। উন্নয়ন সহযোগীদের বাজেট সহায়তা ও প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগ ২০ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি পাওয়ায় আর্থিক ভারসাম্য ঘাটতি থেকে উদ্বৃত্তে পরিণত হয়েছে।
কর–জিডিপি অনুপাত ২০২৪–২৫ অর্থবছরে ৭.৪ শতাংশ থেকে কমে ৬.৮ শতাংশে নেমেছে। মূল কারণ হিসেবে কর আদায়ে মন্থর প্রবৃদ্ধি ও ভর্তুকি এবং সুদ পরিশোধজনিত ব্যয় বৃদ্ধি উল্লেখ করা হয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের সার্বিক মূল্যায়ন
বিশ্বব্যাংকের মতে, বাংলাদেশের অর্থনীতি ধীরে ধীরে স্থিতিশীলতার পথে এগোচ্ছে। তবে টেকসই প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে প্রয়োজন—
ব্যাংকিং খাতের পুনর্গঠন
কার্যকর সংস্কার বাস্তবায়ন
রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা

