বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা সম্প্রতি প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের ‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট’ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। প্রতিবেদনের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৪ সালের তুলনায় চলতি বছর দারিদ্র্যের হার ২১.২ শতাংশে পৌঁছাবে, যা কোভিড-পরবর্তী সময়ে সর্বোচ্চ এবং গত চার বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে শ্রমবাজারের দুর্বল অবস্থা দারিদ্র্য বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। ২০২৩ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত শ্রমশক্তিতে অংশগ্রহণের হার ৬০.৯ শতাংশ থেকে কমে ৫৮.৯ শতাংশে নেমে এসেছে। অর্থাৎ, প্রায় ৩০ লাখ মানুষ কর্মহীন হয়েছেন, যার মধ্যে ২৪ লাখ নারী। এর প্রভাব হিসেবে কর্মসংস্থান ও কর্মক্ষম জনসংখ্যার অনুপাত কমে ৫৬.৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
২০২৪ সালে দারিদ্র্যের হার ছিল ২০.৫ শতাংশ, ২০২৩ সালে ১৯.২ শতাংশ, আর ২০২২ সালে ১৮.৭ শতাংশ। তবে পরিকল্পিত অর্থনৈতিক সংস্কার কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন, ব্যাংক খাত পুনর্গঠন, বিনিয়োগ ও বাণিজ্য সম্প্রসারণ, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, রেমিট্যান্স প্রবাহ বজায় রাখা এবং নীতিগত স্বচ্ছতা নিশ্চিত করলে ২০২৬ ও ২০২৭ সালে দারিদ্র্যের হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমতে পারে বলে বিশ্বব্যাংক আশাবাদী।
এছাড়া, পিপিআরসি ও বিবিএস-এর তথ্য অনুযায়ী চলতি বছরের জানুয়ারিতে দেশের দারিদ্র্যের হার ১৯.২ শতাংশ। পিপিআরসির সমীক্ষায় দারিদ্র্যের হার ২০২৫ সালে ২৭.৯৩ শতাংশে পৌঁছেছে, যেখানে অতিদারিদ্র্যের হার ৯.৩৫ শতাংশ।
অর্থনীতিবিদদের মতে, দারিদ্র্য বৃদ্ধির পেছনে রয়েছে উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও প্রকৃত মজুরি হ্রাস, যা পরিবারগুলোর ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস করেছে। বিশেষ করে স্বল্প বেতনের শ্রমিকরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, দারিদ্র্য বেড়ে গেছে—এটি দেশের বাস্তবতা।
ড. ফাহমিদা খাতুন, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)-এর নির্বাহী পরিচালক বলেন, বিনিয়োগ কম হওয়ায় চাকরির সুযোগ কমেছে এবং ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে আরও চাপের মধ্যে ফেলেছে। তবে বিশ্বব্যাংকের মতে, প্রয়োজনীয় নীতিগত উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে ২০২৭ সালের মধ্যে দারিদ্র্যের হার কমতে পারে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত হবে।
বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. ফ্রানজিস্কা ওনসর্জ বলেন, উন্মুক্ত বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) ব্যবহার দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। নীতিগত সংস্কারের মাধ্যমে সম্পদ, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধি সম্ভব হবে।
বর্তমানে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) বৃদ্ধি ৪.৮ শতাংশ হতে পারে। তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে, দারিদ্র্য হ্রাস ও অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার অত্যন্ত নাজুক এবং এটি নির্ভর করবে পরিকল্পিত সংস্কার, ব্যাংক খাত পুনর্গঠন এবং অর্থনৈতিক পরিবেশের স্থিতিশীলতার ওপর।
সূত্র: বণিক বার্তা, বিশ্বব্যাংক প্রতিবেদন, পিপিআরসি, বিবিএস, সিপিডি

