টেস্ট ইতিহাসে একসময় ছিল ভীতিকর বোলিং আক্রমণ, শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপ আর অদম্য লড়াইয়ের প্রতীক ওয়েস্ট ইন্ডিজ। কিন্তু আজকের দলকে দেখে সেই স্মৃতি অনেকটাই অতীত। ভারতের বিপক্ষে আহমেদাবাদ টেস্টে মাত্র আড়াই দিনেই ইনিংস ও ১৪০ রানের লজ্জাজনক পরাজয় বরণ করেছে ক্যারিবীয়রা।
গতকাল দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষে ভারতের সংগ্রহ দাঁড়িয়েছিল ৫ উইকেটে ৪৪৮ রান। তৃতীয় দিনে আর ব্যাটিংয়ে নামেনি স্বাগতিকরা, ইনিংস ঘোষণা দিয়েই সফরকারীদের দ্বিতীয় ইনিংসে নামিয়ে দেয়।
প্রথম ইনিংসে মাত্র ১৬২ রানে গুটিয়ে যাওয়া ওয়েস্ট ইন্ডিজ দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট হাতে আরও ব্যর্থ হয়। রবীন্দ্র জাদেজার ঘূর্ণি আর মোহাম্মদ সিরাজের গতি সামলাতে না পেরে পুরো দল অলআউট হয় মাত্র ১৪০ রানে।
ব্যাটিং ব্যর্থতার ধারাবাহিকতা
ওয়েস্ট ইন্ডিজের টেস্ট ব্যাটিং এখন যেন ধ্বংসস্তূপ। শেষ ১৫ ইনিংসের মধ্যে ১৩ বারই তারা অলআউট হয়েছে ২০০ রানের নিচে। বাকি দুটি ইনিংসেও কেবল নামমাত্র ২০০-এর বেশি রান এসেছে। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মাত্র ২৭ রানে অলআউট হওয়ার লজ্জাও সঙ্গী করেছে তাদের।
দ্বিতীয় ইনিংসে আহমেদাবাদ টেস্টে প্রথম ছয় ব্যাটারের চারজনই দুই অঙ্ক ছুঁতে ব্যর্থ হন। সর্বোচ্চ রান করেন অলিক আথানাজে—৩৮। জেডন সিলস (২২) ও ইয়োহান লেইন (১৪) কিছুটা প্রতিরোধ গড়লেও বাকি ব্যাটাররা ছিলেন ব্যর্থ।
ভারতের তারকাদের দাপট
এই ম্যাচে ভারতীয় ব্যাটারদের দাপট ছিল চোখে পড়ার মতো। লোকেশ রাহুল ১০০, ধ্রুব জুরেল ১২৫ এবং অলরাউন্ডার জাদেজা ১০৪ রানের ঝলমলে ইনিংস খেলেন।
ব্যাট হাতে সেঞ্চুরি করার পর বল হাতে ৪ উইকেট নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সর্বনাশ ঘটান জাদেজা। ম্যাচসেরা হয়েছেন তিনি। সিরাজও তার পেস বোলিংয়ে একাধিকবার ক্যারিবীয় ব্যাটারদের বিপদে ফেলেন।
ইতিহাস বনাম বর্তমান
স্যার গারফিল্ড সোবার্স, ভিভ রিচার্ডস, ব্রায়ান লারা, কার্টলি অ্যামব্রোস কিংবা কোর্টনি ওয়ালশদের মতো কিংবদন্তিদের দল একসময় টেস্ট ক্রিকেট শাসন করেছিল। কিন্তু সেই সমৃদ্ধ ইতিহাস আজ শুধুই স্মৃতি। ভারতের মাটিতে সর্বশেষ পাঁচ টেস্টের মধ্যে চারটিতেই ইনিংস ব্যবধানে হেরেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, আরেকটিতে হেরেছে ১০ উইকেটে।
একসময়কার মহাত্মক বোলিং আক্রমণ এখন যেন ভোঁতা অস্ত্র, আর ব্যাটিং লাইনআপ ভঙ্গুর। ফলে ক্যারিবীয় ক্রিকেটের টেস্ট মর্যাদা নিয়েই প্রশ্ন উঠছে।

