বাংলাদেশের ফুটবলে নতুন গৌরবের অধ্যায় যুক্ত হলো। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সভাপতি তাবিথ আউয়াল জায়গা পেয়েছেন আন্তর্জাতিক ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফার একটি গুরুত্বপূর্ণ কমিটিতে। তাকে ‘ফিফা ফুটবল টেকনোলজি, ইনোভেশন অ্যান্ড ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন কমিটি’র সদস্য হিসেবে মনোনীত করা হয়েছে। এই কমিটি বিশ্ব ফুটবলে প্রযুক্তির ব্যবহার, উদ্ভাবন ও ডিজিটাল রূপান্তর নিয়ে কাজ করে। অর্থাৎ ফুটবলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI), VAR প্রযুক্তির উন্নয়ন, ডেটা বিশ্লেষণ এবং ফ্যান এনগেজমেন্টের মতো আধুনিক দিকগুলোর কৌশলগত সিদ্ধান্ত এখান থেকেই নেওয়া হয়। কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন আইসল্যান্ডের থরভালদুর ওরলিগসন, আর ডেপুটি চেয়ারম্যান ভেনেজুয়েলার হোর্হে গিমেনেজ।
তাবিথ আউয়ালের এই মনোনয়নকে দেশের ফুটবলের জন্য “গ্লোবাল স্বীকৃতি” হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা। বাফুফে সূত্রে জানা গেছে, এই কমিটির মাধ্যমে তাবিথ আউয়াল এখন ফিফার প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনী সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় সরাসরি সম্পৃক্ত থাকবেন।
এ বিষয়ে বাফুফে সভাপতি বলেন, “ফিফা এখন শুধু মাঠের খেলা নয়, পুরো ফুটবল ইকোসিস্টেমকে ডিজিটালভাবে রূপান্তর করতে চায়। বাংলাদেশও সেই যাত্রায় অংশ নিচ্ছে—এটাই সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।”
তাবিথের মনোনয়নকে অভিনন্দন জানিয়ে বাংলাদেশ ক্রীড়া পরিষদের এক কর্মকর্তা বলেন, “এটি বাংলাদেশের ফুটবলের আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উপস্থিতি বাড়ানোর সুযোগ। আমাদের তরুণ কোচ, রেফারি এবং ডেটা অ্যানালিস্টরা ভবিষ্যতে ফিফার টেকনিক্যাল উদ্যোগে আরও সরাসরি যুক্ত হতে পারবেন।”
তাবিথ আউয়ালের পাশাপাশি বাফুফের নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণও জায়গা পেয়েছেন ফিফার আরেকটি কমিটিতে। তাকে ‘ফিফা ইউথ গার্লস কম্পিটিশন কমিটি’র সদস্য করা হয়েছে। এই কমিটি মূলত বয়সভিত্তিক নারী ফুটবল প্রতিযোগিতার কাঠামো ও নীতি নির্ধারণে কাজ করে। বাংলাদেশ নারী ফুটবলের ধারাবাহিক সাফল্যের পর কিরণের এই মনোনয়নকে ফিফার স্বীকৃতি হিসেবে দেখছেন ক্রীড়া বিশ্লেষকরা। ২০২২ সালে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জয় এবং বয়সভিত্তিক দলগুলোর ধারাবাহিক অগ্রগতি এই অর্জনের পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে।
গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব ফিফা ও এএফসি কাঠামোতে ধীরে ধীরে বাড়ছে। তাবিথ আউয়াল ২০২৩ সালে বাফুফে সভাপতি হওয়ার পর থেকেই ডিজিটাল রোডম্যাপ, VAR ব্যবহারের প্রস্তুতি এবং ফুটবল ডেটা ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম বাস্তবায়নে কাজ করছেন। ফিফার সর্বশেষ রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২৫ সালের মধ্যে ৭৫ শতাংশ সদস্য দেশ VAR বা সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তি ব্যবহার করবে—এই লক্ষ্যের দিকেই কাজ করছে তাবিথের কমিটি।
বাংলাদেশও এই তালিকায় যুক্ত হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশ্ব ফুটবলের ভবিষ্যৎ নির্ভর করবে প্রযুক্তি-নির্ভর বিশ্লেষণ, দর্শক সম্পৃক্ততা এবং ডেটা-চালিত সিদ্ধান্তের ওপর। তাবিথ আউয়াল এখন সেই বৈশ্বিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রীড়া সমাজবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. মনিরুজ্জামান বলেন, “এমন প্ল্যাটফর্মে বাংলাদেশের উপস্থিতি শুধু সম্মানের নয়, বরং ভবিষ্যতের প্রস্তুতি। আন্তর্জাতিক প্রযুক্তিগত মানচিত্রে এখন বাংলাদেশ ফুটবলেরও জায়গা হচ্ছে।”
মিটিতে তাবিথ আউয়ালের অন্তর্ভুক্তি বাংলাদেশের জন্য নিঃসন্দেহে এক বড় সাফল্য। ফুটবলের মাঠে সাফল্য যতটা দরকার, তেমনি বৈশ্বিক নীতি ও প্রযুক্তি ফোরামেও উপস্থিতি গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ ফুটবল এখন শুধু গোলের মাঠে নয়, বিশ্ব ফুটবলের সিদ্ধান্ত গ্রহণের টেবিলেও নিজের অবস্থান জানাতে শুরু করেছে।

