বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় (বুটেক্স)-এর স্পিনার্স ক্লাবের উদ্যোগে আজ অনুষ্ঠিত "হাফিজউদ্দিন আহমেদ ও ফাতেমা আহমেদ ট্রাস্ট লেকচার–২০২৫" শীর্ষক সেমিনারে টেকসই উন্নয়ন এবং সবুজ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে পাটের অপরিসীম সম্ভাবনা নিয়ে গভীর আলোচনা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অডিটোরিয়ামে সকাল ১০টা থেকে শুরু হওয়া এই অনুষ্ঠানে বক্তারা জোর দিয়ে বলেন, পাটের মতো পরিবেশবান্ধব ফাইবারকে কেন্দ্র করে অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত স্থায়িত্ব অর্জন করা সম্ভব, যা বাংলাদেশের জন্য একটি 'গোল্ডেন ফাইবার' হিসেবে পুনরুজ্জীবিত করতে পারে।
অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন বুটেক্সের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইঞ্জি. মো. জুলহাস উদ্দিন। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন। বিশেষ অতিথিরা অন্তর্ভুক্ত ছিলেন বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিজেআরআই) পরিচালক ড. নারগিস আখতার, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড (আইডিএল)-এর সহ-সভাপতি ইঞ্জি. খান মঞ্জুর মোরশেদ, ইনস্টিটিউট অব টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যান্ড টেকনোলজিস্টস (আইটিইটি)-এর আহ্বায়ক ইঞ্জি. আহসানুল করিম কায়সার এবং ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (আইইবি)-এর টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চেয়ারম্যান ইঞ্জি. মহিউদ্দীন আহমেদ। মূল বক্তা ছিলেন বুটেক্সের ইয়ার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. হোসনে আরা বেগম।
অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক রাশিদা আখতার খানম। পরবর্তীতে বক্তব্য রাখেন ড. হোসনে আরা বেগম, ইঞ্জি. মহিউদ্দীন আহমেদ, শেখ বশির উদ্দিন, ড. নারগিস আখতার, ইঞ্জি. খান মঞ্জুর মোরশেদ, ইঞ্জি. আহসানুল করিম কায়সার এবং সবশেষে সভাপতি অধ্যাপক ড. ইঞ্জি. মো. জুলহাস উদ্দিন।
শেখ বশির উদ্দিন তাঁর বক্তব্যে বলেন, "আমাদের টেক্সটাইল শিল্পে সুযোগের পাশাপাশি বাধাও রয়েছে। একসময়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ পাটের চাহিদা আজ আশঙ্কাজনকভাবে কমেছে, এর জন্য আমরাই দায়ী। বাস্তবতার আলোকে বিচার-বিশ্লেষণ না করলে আমরা আরও পিছিয়ে যাবো। উৎপাদন বাড়িয়ে দক্ষ শ্রমিক সৃষ্টি, উদ্ভাবনী চিন্তা এবং অনন্য প্রয়োগের মাধ্যমে আমরা আলাদা হয়ে উঠতে পারি।"
ড. হোসনে আরা বেগম তাঁর বক্তৃতায় উল্লেখ করেন, "প্লাস্টিক পলিথিন পরিবেশ দূষণের প্রধান কারণ। পাটের মতো প্রাকৃতিক ফাইবার এর বিকল্প হিসেবে পরিবেশবান্ধব এবং অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক। একসময় চাহিদার শীর্ষে থাকা পাটের অসতর্ক ব্যবহার না করে এটিকে পুনরুজ্জীবিত করতে হবে, যাতে পরিবেশ রক্ষা হয়।" তিনি আরও বলেন, পাটসহ অন্যান্য ইকো-ফ্রেন্ডলি ফাইবার দিয়ে দূষণমুক্ত উৎপাদন সম্ভব। উপাচার্য ড. জুলহাস উদ্দিন বলেন, "পাট প্রাকৃতিক এবং পরিবেশবান্ধব হওয়ায় এ নিয়ে বিস্তৃত গবেষণা দরকার। শুধু চট বা শপিং ব্যাগ নয়, অন্যান্য ক্ষেত্রে পাটের ব্যবহার বাড়াতে হবে। আমি বুটেক্সে জুট ফাইবার নিয়ে নতুন বিভাগ এবং গবেষণা কেন্দ্র স্থাপনের চেষ্টা করবো। কাঁচামাল থেকে উন্নত টেক্সটাইল পণ্য তৈরির উপায় খুঁজে পেলে পাটের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনা যাবে।"
বক্তব্যের পর অতিথিদের সম্মাননা এবং স্টল পরিদর্শনের মাধ্যমে অনুষ্ঠান সমাপ্ত হয়। শিক্ষার্থীরা আশাবাদ প্রকাশ করেছেন যে, এই সেমিনার বস্ত্র ও পাট খাতে টেকসই উন্নয়ন, ইকো-ফ্রেন্ডলি উৎপাদন এবং সবুজ অর্থনীতি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। বিশ্বব্যাপী পাটের চাহিদা বাড়ছে ইকো-প্রোডাক্ট হিসেবে, যা বাংলাদেশের জন্য বার্ষিক ১ বিলিয়ন ডলার রপ্তানির সুযোগ এনে দিতে পারে এবং ৩ কোটিরও বেশি মানুষের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে সাহায্য করবে। এই আলোচনা থেকে উদ্ভূত উদ্যোগগুলো বাংলাদেশকে টেকসই উন্নয়নের মডেল দেশে পরিণত করবে বলে আশা করা যায়।

