রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠে ফুটবল খেলার উচ্ছ্বাস ছিল উন্মাদনার। কিন্তু সেই উচ্ছ্বাস মুহূর্তেই রূপ নেয় রক্তাক্ত সংঘর্ষে। তিন বিভাগের শিক্ষার্থীদের ত্রিমুখী কলহের শিকার মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী নিলয়। তার একটি চোখ এখন অন্ধকারের দ্বারপ্রান্তে। ঢাকার হাসপাতালে শয্যাশায়ী নিলয়ের জন্য চিকিৎসকদের কথা যেন স্বপ্ন ভাঙার ধাক্কা—ক্ষতিগ্রস্ত চোখে দেখার সম্ভাবনা মাত্র ১%।
অপারেশন এখন নিলয়ের একমাত্র ভরসা, তবে সেখানেও আশার আলো ক্ষীণ। চিকিৎসকরা বলছেন, অপারেশন ছাড়া সুস্থ চোখেও সংক্রমণের কালো ছায়া পড়তে পারে, ঝুঁকি ৬০%। নিলয়ের বন্ধু মারুফ হাসান রিফাত খানের কণ্ঠে বেদনার সুর, “ডাক্তার বলেছেন, ওর চোখ ফিরিয়ে দেওয়ার কোনো পথ নেই।” তার কথায় ফুটে ওঠে এক তরুণের স্বপ্ন ভেঙে যাওয়ার অসহায়তা, একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উৎসবমুখর ক্যাম্পাসে হঠাৎ নেমে আসা বিষাদ।
সোমবার রাতের সেই ঘটনা, যেখানে ফুটবলের উত্তেজনা ছাপিয়ে গিয়ে হাতাহাতিতে রূপ নেয়, ১১ জন শিক্ষার্থীকে আহত করে। নিলয়ের ক্ষত গভীরতম। তাকে বাঁচাতে ঢাকায় ছুটে যাওয়া হয়, কিন্তু তার চোখের আলো ফেরানোর আশা প্রায় নিঃশেষ। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তদন্ত কমিটি গঠন করেছে, আট শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করেছে সাময়িকভাবে। কিন্তু নিলয়ের জন্য এই শাস্তি কি যথেষ্ট? তার বন্ধুর কথায় উঠে আসে প্রশ্ন, “এই ক্ষতির দায় কে নেবে?”
নিলয়ের চোখে এখন শুধু ঝাপসা ছায়া। একটি তরুণ হৃদয়, যে স্বপ্ন দেখতো ভবিষ্যতের আলোয়, আজ দাঁড়িয়ে আছে অন্ধকারের মুখোমুখি। তার লড়াই শুধু চোখের নয়, বেঁচে থাকার, হার না মানার। কিন্তু এই লড়াইয়ে সে কতটা জিতবে, তা এখন সময়ের হাতে।

