নরসিংদীর পলাশের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে, যেন একটি অদম্য নদীর মতো বয়ে এসেছে শিক্ষকদের ক্ষোভের ধারা। এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা, যাঁরা জাতির ভবিষ্যৎ গড়ার অদৃশ্য কারিগর, আজ মানববন্ধনের শৃঙ্খলে নিজেদের বেঁধে ফেলেছেন—হামলার ক্ষতচিহ্ন আর তিন দফা ন্যায়ের দাবিতে। ঢাকায় শিক্ষকদের ওপর নির্যাতনের প্রতিবাদে পলাশের শতাধিক স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার শিক্ষক-কর্মচারীরা কর্মবিরতি পালন করে মিছিল নিয়ে এসে দাঁড়িয়েছেন, তাঁদের চোখে জ্বলছে অপমানের আগুন আর দৃঢ়তার আলো। এই মানববন্ধন শুধু একটি প্রতিবাদ নয়, বরং জাতির হৃদয়ে শিক্ষকের অবহেলার কালো দাগ মুছে ফেলার এক অকৃত্রিম চিৎকার।
শিক্ষক রাহিমা আক্তারের কণ্ঠে ফুটে উঠেছে অটল সংকল্প—“প্রজ্ঞাপন যেদিন শ্রেণিকক্ষে ফিরবো, সেদিন। অবস্থান কর্মসূচি চলবে, চলতেই থাকবে।” তাঁর চোখে যেন জ্বলছে সেই আগুন যা শিক্ষকদের ওপর ন্যাক্কারজনক হামলার ক্ষোভকে জ্বালিয়ে তুলেছে। শিলা রানী শাখারী, যাঁর হাতে গড়ে ওঠে শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন, বলেন আবেগভরা সুরে, “শিক্ষকরা জাতি গড়ার কারিগর, কিন্তু এত অবহেলিত হয়ে থাকা যেন একটি বিষাক্ত ছুরির আঘাত। আমরা শিক্ষকতা ছেড়ে অন্য পথ বেছে নিতাম না, কিন্তু এখন মাঠে নামতে হচ্ছে—এটা জাতির জন্য লজ্জার। নির্যাতনের এই নৃশংসতা কোনো বিবেকবান মানুষ মেনে নিতে পারে না।” তাঁদের কথায় মিশে গেছে ব্যথা, যেন একটি মায়ের হৃদয় যা সন্তানের জন্য কাঁদছে।
সবিতা রানী সুধারের দাবিতে যেন গর্জন শোনা যায়—“শিক্ষকদের ন্যায়সঙ্গত দাবি মেনে নিন! ২০ শতাংশ বাড়ি ভাড়া, ১ হাজার ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা, কর্মচারীদের ৭৫ শতাংশ উৎসব ভাতা—এগুলো না মানলে ক্লাসে ফিরব না।” এই তিন দফা দাবি যেন শিক্ষকদের রক্তে লেখা, যা অবহেলার কালো মেঘ ছিন্ন করতে চায়। মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন সমবায় উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কানাই লাল গোপ, ঘোড়াশাল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ওবায়দুল রহমান তালুকদার, ডাঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয়ের আসাদুজ্জামান সিদ্দিকী, সেকান্দরদী উচ্চ বিদ্যালয়ের খোরশেদ আলম, হুমায়ুন কবির প্রমুখ—তাঁদের কণ্ঠে একই সুর, একই দৃঢ়তা।
পলাশের এই মানববন্ধন শুধু স্থানীয় নয়, জাতীয় শিক্ষক আন্দোলনের এক অংশ, যা অবহেলার বিরুদ্ধে লড়াই করে জাতির শিক্ষাক্ষেত্রকে রক্ষা করতে চায়। শিক্ষকরা যেন একটি অটুট দুর্গ, যাঁদের হাত ছাড়া ভবিষ্যৎ অন্ধকার। এই সংগ্রামের ফলাফল কী হবে? আশা করি, এই আহ্বান শোনা হবে, দাবি মেনে নেওয়া হবে—কারণ শিক্ষকের জয়ই জাতির জয়।

