নীলফামারীর সৈয়দপুর সরকারি বিজ্ঞান কলেজে যেন একটি তারার মেলা জ্বলে উঠেছে—এইচএসসি পরীক্ষায় শতভাগ পাসের সোনালি সাফল্য, আর জিপিএ-৫-এর ঝলকানিতে জেলার সেরা হয়ে উঠেছে প্রতিষ্ঠানটি। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদের কণ্ঠে ফুটে উঠেছে গর্বের সুর, যেন এক মায়ের বুকে ছেলেমেয়েদের সাফল্যের উষ্ণতা। ২৯৭ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন, সবাই পাস করেছেন, আর ২৭০ জন জিপিএ-৫-এর মুকুট পরে নিয়েছেন। এই সংখ্যা শুধু অঙ্ক নয়, বরং অক্লান্ত পরিশ্রমের, স্বপ্নের আলোয় জ্বলা চোখের প্রতিফলন—যা যেন বলছে, বিজ্ঞানের পথে অন্ধকার নেই, শুধু আলোর ঝর্ণা।
অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদের চোখে চিকচিক করে উঠেছে আশার জ্যোতি, তিনি বলেন আবেগময় কণ্ঠে, “প্রতিটি শিক্ষার্থীই জিপিএ-৫-এর যোগ্য ছিল, কিন্তু ২৭০ জন এই মর্যাদা পেয়েছেন। বাকিরাও সবাই পাস—এটি আমাদের সকলের জয়। প্রতি বছরের মতো এবারও দেশের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানগুলোতে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বুয়েট, মেডিকেল কলেজ, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে এদের ভর্তিযুদ্ধে সেরা ফল করার প্রত্যাশা করছি।” তাঁর কথায় মিশে গেছে এক শিক্ষকের স্নেহ, যেন এক বাগানের মালিক ফুলের সৌরভে মগ্ন। এই সাফল্য শুধু কলেজের নয়, বরং দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের অধীনে শীর্ষ প্রতিষ্ঠান হিসেবে এর নামকরণের আরেক অধ্যায়।
প্রসঙ্গত, এই কলেজের ইতিহাস যেন একটি অদম্য যাত্রার গল্প। ১৯৬৪ সালে সরকারি কারিগরি মহাবিদ্যালয় (টেকনিক্যাল কলেজ) নামে জন্ম নেয় এটি, দেশের চার শিল্পাঞ্চলে দক্ষ কারিগর গড়ার স্বপ্ন নিয়ে। সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার বিশালতার সুবাদে এখানে গড়ে ওঠে টেকনিক্যাল স্কুল, যার উদ্দেশ্য ছিল রেলের হৃদপিণ্ডে দক্ষ হাত সরবরাহ। ১৯৭৭ সালে কলেজে উন্নীত হয়, আর ২০১৯ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয় নাম পরিবর্তন করে সৈয়দপুর সরকারি বিজ্ঞান কলেজ করে, যেখানে কেবল বিজ্ঞানের আলোয় পড়াশোনার সুযোগ। প্রতি বছর উত্তীর্ণ হাজারো শিক্ষার্থী দেশের শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছড়িয়ে পড়েন, যেন বিজ্ঞানের বীজ থেকে উঠে আসা গাছের ফল।
এই সাফল্য যেন একটি উজ্জ্বল সূর্যোদয়, যা নীলফামারীর আকাশকে রাঙিয়ে তুলেছে। শিক্ষার্থীদের চোখে স্বপ্নের ঝিলিক, অধ্যক্ষের হাসিতে গর্ব—এটি শুধু একটি কলেজের জয় নয়, বরং সমগ্র জেলার যুবশক্তির অদম্য উদ্দীপনা। আশা করি, এই আলো আরও দূর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়বে, বিজ্ঞানের পথে নতুন নতুন তারা জ্বালিয়ে।

