গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার সরকারি মুকসুদপুর কলেজের শিক্ষার্থীরা এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় আশানুরূপ ফলাফল করতে ব্যর্থ হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর ২০২৫) সকাল ১০টায় ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. খন্দকার এহসানুল কবির কর্তৃক প্রকাশিত ফলাফলে দেখা যায়, কলেজটির সামগ্রিক পাসের হার মাত্র ২৩ দশমিক ৬৮ শতাংশ। এটি দেশব্যাপী গড় পাসের হার ৫৮ দশমিক ৮৩ শতাংশের তুলনায় অনেক কম। গত বছরের তুলনায়ও পাসের হার প্রায় ১৯ শতাংশ কমে গেছে। ফলে কলেজটি সমালোচনার মুখে পড়েছে এবং শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে চরম হতাশা বিরাজ করছে।
কলেজের তিনটি বিভাগ থেকে মোট এক হাজার পাঁচশ’ একাশি (১,৫৮১) জন শিক্ষার্থী এ পরীক্ষায় অংশ নেয়। এর মধ্যে পাস করেছে মাত্র ৩৬৭ জন, আর অকৃতকার্য হয়েছে ১,২১৪ জন। এই হিসেবে পাসের হার দাঁড়িয়েছে ২৩ দশমিক ৬৮ শতাংশ। সবচেয়ে হতাশাজনক দিক হলো—পুরো কলেজ থেকে জিপিএ-৫ অর্জন করেছে মাত্র তিনজন শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে একজন ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে এবং একজন মানবিক বিভাগ থেকে পাস করেছেন, অন্য একজনের তথ্য স্পষ্ট নয়। বিজ্ঞান বিভাগে কোনো শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ অর্জন করতে পারেনি।
দেশব্যাপী এবার মোট ৩৯ হাজার ৯৭ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে। তার তুলনায় সরকারি মুকসুদপুর কলেজের অবদান খুবই নগণ্য। শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এটি কলেজটির দীর্ঘদিনের সমস্যা। প্রতি বছরই ফলাফল নিচের দিকে নেমে যাচ্ছে, যা কলেজের শিক্ষার মান ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে।
কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রফেসর এনামুল হক বলেন, “মূল অধ্যক্ষের অসুস্থতার কারণে আমি সাময়িকভাবে দায়িত্ব পালন করছি। ফলাফল আশানুরূপ হয়নি, তবে এর পেছনে কিছু বাস্তব কারণ আছে।” তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, কলেজটির পরীক্ষাকেন্দ্র উপজেলা সদরের বাইরে হওয়ায় শিক্ষার্থীদের যাতায়াতে সমস্যা হয়েছে। অনেকে সময়মতো কেন্দ্রে পৌঁছাতে পারেনি, এতে মানসিক চাপ বেড়েছে এবং ফলাফলে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। তিনি আরও বলেন, “আমরা শিক্ষার মান উন্নয়নে ইতোমধ্যে কিছু উদ্যোগ নিয়েছি—ক্লাস রুটিন কঠোরভাবে বাস্তবায়ন, শিক্ষক-অভিভাবক সভা আয়োজন এবং শিক্ষার্থীদের নিয়মিত উপস্থিতি নিশ্চিত করার কাজ চলছে।”
শিক্ষা বিশ্লেষকদের মতে, কলেজটির এ ধরনের ফলাফল কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়; বরং এটি বাংলাদেশের গ্রামীণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর সামগ্রিক দুর্বলতার প্রতিফলন। শহরের তুলনায় গ্রামীণ এলাকায় শিক্ষকদের তদারকি, শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি এবং অভিভাবকদের সচেতনতা অনেক কম। ফলে শিক্ষার্থীরা যথাযথ প্রস্তুতি নিতে পারে না, যার প্রভাব পড়ে চূড়ান্ত পরীক্ষার ফলাফলে।
দেশব্যাপী ২০২৫ সালের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় মোট ৩৪৫টি কলেজ শতভাগ শিক্ষার্থী পাস করেছে। তবে কিছু কলেজ—বিশেষ করে লক্ষ্মীপুরের তিনটি কলেজ—এবার কোনো শিক্ষার্থী পাস করতে পারেনি। এটি দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় বিদ্যমান বৈষম্য ও দুর্বলতাকে আরও স্পষ্টভাবে তুলে ধরছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অকৃতকার্য শিক্ষার্থীরা ২০ থেকে ২২ অক্টোবরের মধ্যে পুনঃনিরীক্ষণের জন্য আবেদন করতে পারবে। শিক্ষার্থীরা সংশ্লিষ্ট বোর্ডের ওয়েবসাইট www.dhakaeducationboard.gov.bd এ গিয়ে অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন।
সরকারি মুকসুদপুর কলেজের এবারের ফলাফল একদিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দুর্বলতার চিত্র তুলে ধরেছে, অন্যদিকে এটি প্রশাসন ও স্থানীয় শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতি নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে—কেন এ ব্যর্থতা কাটিয়ে ওঠার কার্যকর উদ্যোগ এখনও নেওয়া হয়নি?

