জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ছাত্রদলের উদ্যোগে সম্প্রতি “ডিপ্রেশন ও আত্মহত্যা প্রতিরোধ” শীর্ষক একটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সদরঘাট ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত হয়। এতে শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং স্থানীয় অংশগ্রহণকারীরা উপস্থিত ছিলেন।
সেমিনারের মূল আয়োজন ও অংশগ্রহণ
সেমিনারের আহ্বায়ক ছিলেন জবি ছাত্রদলের আহ্বায়ক সদস্য আবু বকর খান, যিনি মূল বক্তব্য প্রদান করেন। ভিডিও ডকুমেন্টেশন ও কভারেজের দায়িত্ব পালন করেন সালমান সিয়াম রিয়া।
আবু বকর খান তাঁর বক্তব্যে বলেন, “আজকের তরুণ সমাজ ক্রমবর্ধমান মানসিক চাপ, একাকীত্ব ও সামাজিক প্রত্যাশার ভারে ক্লান্ত। আমরা ছাত্রদল হিসেবে শুধু রাজনৈতিক বিষয়েই নয়, শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের দিকেও মনোযোগ দিতে চাই। আত্মহত্যা কোনো সমাধান নয়—এটি প্রতিরোধ করা সম্ভব, যদি সবাই একসাথে কাজ করি।”
সেমিনারের আলোচ্য বিষয়
সেমিনারে ডিপ্রেশনের লক্ষণ, কারণ, প্রভাব এবং প্রতিরোধমূলক কৌশল নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়।
মূল বিষয়গুলো ছিল:
ডিপ্রেশনের লক্ষণ চেনা: অবসাদ, অনিদ্রা, আত্মসম্মানের অভাব ও সামাজিক বিচ্ছিন্নতা।
প্রতিরোধের উপায়: নিয়মিত ব্যায়াম, পরিবার-বন্ধুদের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলা এবং পেশাদার হেল্পলাইনের সাহায্য নেওয়া (যেমন: ০১৭১৩০১৫৭৯৭)।
তথ্য: বাংলাদেশে প্রতিবছর গড়ে ১০,০০০-এর বেশি মানুষ আত্মহত্যা করেন, যার মধ্যে প্রায় ৪০% তরুণ। জবিতেও গত কয়েক বছরে একাধিক ঘটনা ঘটেছে, যা এই সেমিনারকে আরও প্রাসঙ্গিক করে তুলেছে।
ভিডিও ও প্রচারণা কার্যক্রম
সালমান সিয়াম রিয়ার ভিডিও কভারেজে সেমিনারের বক্তৃতা, প্রশ্নোত্তর ও আলোচনাগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে, যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরেও সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়া যায়।
জবিতে মানসিক স্বাস্থ্য পরিস্থিতি
২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠিত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে প্রায় ২৬,০০০ শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে। গত কয়েক বছরে একাধিক শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে, যা আবাসন সংকট, অতিরিক্ত একাডেমিক চাপ ও সামাজিক বিচ্ছিন্নতার সঙ্গে সম্পর্কিত বলে শিক্ষার্থীরা মনে করেন।
এর আগে “আপনি কেমন আছেন?” শীর্ষক একটি গণসচেতনতামূলক অনুষ্ঠানেও শিক্ষার্থীরা আত্মহত্যাকে ‘অবকাঠামোগত হত্যা’ হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন।
উদ্যোগের তাৎপর্য ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
জবি ছাত্রদলের এই উদ্যোগ রাজনৈতিক সীমানা ছাড়িয়ে শিক্ষার্থীদের কল্যাণে এক মানবিক ভূমিকা রাখছে। সেমিনারের অংশগ্রহণকারীরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে স্থায়ী মানসিক স্বাস্থ্য কাউন্সেলিং সেন্টার প্রতিষ্ঠার দাবি জানান।
আবু বকর খান জানান, “আমরা ভবিষ্যতেও এমন আরও সেমিনার আয়োজন করব, যাতে শিক্ষার্থীরা মানসিক চাপ মোকাবিলার কৌশল শিখতে পারে।”
সহায়তা প্রয়োজন হলে-
যদি আপনি বা আপনার পরিচিত কেউ মানসিক অবসাদে ভুগে থাকেন, অবিলম্বে যোগাযোগ করুন—
কল্যাণী হেল্পলাইন: ০১৭৭৬৬০১০১
মনের জোর: মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা নেটওয়ার্ক।

