logo
ads

বরগুনার আমতলীতে ফলাফলের অন্ধকারে নুসরাতের চির বিদায়: এক সুন্দর স্বপ্নের নির্মম শেষ

বরগুনা প্রতিনিধি

প্রকাশকাল: ১৭ অক্টোবর ২০২৫, ১১:০৫ এ.এম
বরগুনার আমতলীতে ফলাফলের অন্ধকারে নুসরাতের চির বিদায়: এক সুন্দর স্বপ্নের নির্মম শেষ

ফাইল ছবি

বরগুনার আমতলী উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের উত্তর রাওঘা গ্রামের একটা ছোট্ট ঘরে বৃহস্পতিবার দুপুরের নীরবতা যেন একটা ভয়াবহ ঝড়ে পরিণত হয়ে গেল—এইচএসসি ফলাফলের কালো ছায়ায় ডুবে যাওয়া নুসরাত জাহান নাজনীনের (১৮) হাতে গলায় রশির ফাঁস, যা তার সেই উজ্জ্বল স্বপ্নকে চিরতরে নিভিয়ে দিলো। বাংলা বাজারের ভাড়া বাড়িতে বড় বোনের সঙ্গে থাকা এই মেয়েটি, যার চোখে ছিল বিজ্ঞানের বিশ্ববিদ্যালয়ের আলোর ঝলকানি, আজ তার সেই সোনালি ভবিষ্যতকে ছিন্নভিন্ন করে ফেলেছে হতাশার নির্মম হাতে—যেন একটা ভাঙা পাখির মতো উড়তে গিয়ে আছড়ে পড়লো অন্ধকারের দেওয়ালে। বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে দুপুর ১২টায় তাকে নিয়ে আসা হলেও চিকিৎসক ডা. আশিষ কুমার সাহা শুধু মৃত্যুর ঘোষণা দিলেন, আর তার মা বশির মৃধার বুকটা যেন একটা শূন্যতায় ভরে গেল। এ যেন একটা হৃদয়বিদারক কান্নার গল্প, যা আমতলীর মাটিকে নাড়িয়ে দিয়ে জিজ্ঞাসা করছে: কেন এমন হলো, কেন একটা ফলাফলের অন্ধকারে একটা জীবনের আলো নিভে গেল?

সদর থানার ওসি (তদন্ত) মো. মিজানুর রহমানের কণ্ঠে ছিল গভীর দুঃখের ছায়া—তিনি বললেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে গলায় রশি দিয়ে আত্মহত্যা, আর ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ মর্গে পাঠানো হয়েছে। নাসরিন বরিশাল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের এই ছাত্রীটি, যার মোট ফলাফল মোটামুটি ভালো ছিল, কিন্তু হায়ার ম্যাথের এমসিকিউতে ফেল করে হতাশায় ডুবে গিয়েছিল—বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মো. ইউনুস আলী সিদ্দিকীর কথায় যেন একটা পিতৃসম বেদনা ফুটে উঠলো: “তিনি রেজাল্ট পুনর্বিবেচনার আবেদন করতে পারতেন। এই ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়ে হতাশ হয়ে এমন ঘটনা ঘটে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।” এই কথাগুলো যেন একটা তীব্র অনুশোচনার ঢেউ, যা নুসরাতের সেই হাসিমুখের ছবিকে ছুঁয়ে গেল অশ্রুর ফোঁটায়—যেখানে একটা সাধারণ ফলাফলের ক্ষত এত গভীর হয়ে উঠলো যে, জীবনের মূল্যটাকেও হারিয়ে ফেললো সে। তার সহপাঠীরা শোকাহত, বিদ্যালয়জুড়ে নেমেছে দুঃখের কালো পর্দা, আর গ্রামের লোকেরা চোখের জলে বলছেন, নাজনীন ছিল তাঁদের আলোর মতো, যার স্বপ্ন ছিল ডাক্তার হয়ে গ্রামের মানুষের সেবায় নেমে আসা।

আজ তার মরদেহ গ্রামের বাড়িতে আমতলীতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে দাফনের জন্য, কিন্তু তার সেই শূন্য চোখের দৃষ্টি যেন ফিরে আসছে আমাদের সামনে—একটা সতর্কবাণীর মতো, যা আমাদের জাগিয়ে তুলছে: শিক্ষা কেন হয়ে উঠছে এমন নির্মম চাপের জাল? কেন একটা ফলাফলের সংখ্যা একটা জীবনের সবকিছুকে গ্রাস করে ফেলে? এই ঘটনা যেন একটা কাঁটার মতো বিঁধছে আমাদের হৃদয়ে, কিন্তু এর মধ্যে জ্বলে উঠছে একটা আশার স্ফুলিঙ্গ—পরিবর্তনের আহ্বান, যা শিক্ষক-অভিভাবক-সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করে তুলবে, যাতে আর কোনো নাজনীনের মতো সুন্দর স্বপ্ন অন্ধকারে হারিয়ে না যায়। আসুন, এই বেদনা থেকে উঠে আসি একটা নতুন অঙ্গীকারে—জীবনের মূল্য শুধু অক্ষর নয়, এটা হৃদয়ের আলো জ্বালানোর কল্পনা, আর নাজনীনের স্মৃতি যেন হয়ে উঠুক সেই আলোর মশাল, যা চিরকাল জ্বলবে আমাদের মাঝে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর

হাইলাইটস

বিশেষ সংবাদ