রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউয়ে উত্তেজনাপূর্ণ সকাল ও প্রতিকূল আবহাওয়ার পর অবশেষে শুরু হয়েছে জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান।
শুক্রবার বিকেল ৪টা ৩৭ মিনিটে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠানটি।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই মঞ্চে আসেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তাঁর সঙ্গে ছিলেন সরকারের অন্যান্য উপদেষ্টারা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতা, বিশিষ্ট নাগরিক এবং বিদেশি দূতাবাসের প্রতিনিধিরা।
প্রথমে বিকাল ৫টায় জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষর করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তারপর জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ–সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজসহ কমিশনের সদস্যরাও জুলাই সনদে স্বাক্ষর করেন। তারপর স্বাক্ষর করেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা।
বিএনপির পক্ষে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের ও সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু ও সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি ও নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসানসহ বিভিন্ন দলের নেতারা জুলাই সনদে স্বাক্ষর করেছেন।
তবে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) জুলাই সনদে স্বাক্ষর করেনি। এছাড়া বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বাসদ (মার্ক্সবাদী) ও বাংলাদেশ জাসদ জুলাই সনদে স্বাক্ষর করেনি।
প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে অনুষ্ঠানটি কিছুটা দেরিতে শুরু হয় বলে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানায়।
দেশের নিবন্ধিত ৫৬টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে ২১টি দল এবং আরও কয়েকটি অনিবন্ধিতসহ মোট ৩০টি দলের প্রতিনিধি দীর্ঘ আট মাসের ধারাবাহিক বৈঠকের মধ্য দিয়ে জুলাই জাতীয় সনদের চূড়ান্ত খসড়া তৈরি করেন। মতবিরোধ, উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় ও ওয়াকআউটের ঘটনার মধ্যেও তাঁরা বৃহত্তর জাতীয় ঐকমত্যে পৌঁছাতে সক্ষম হন।
জুলাই যোদ্ধাদের বিক্ষোভের মুখে আজ দুপুরে সনদের অঙ্গীকারনামার পঞ্চম দফা সংশোধন করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।
এর আগে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় সনদ সইয়ের মঞ্চে প্রবেশ করে অবস্থান নেন জুলাই যোদ্ধারা। তাঁরা সনদের আইনি ভিত্তি ও নিজেদের দায়মুক্তিসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলনে নামেন। পরে পুলিশের সঙ্গে তীব্র সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। আন্দোলনকারীরা পুলিশের রোড ব্লকারে আগুন ধরিয়ে দেন, ফলে এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। শেষ পর্যন্ত পুলিশ তাঁদের সরিয়ে দেয়।
তবে বিকেল গড়িয়ে সোয়া পাঁচটার দিকে মঞ্চে ফিরে আসে শান্ত পরিবেশ, এবং জুলাই সনদে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাক্ষর করেন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা।
অনুষ্ঠান সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, গণঅধিকার পরিষদ, আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন এবং নাগরিক ঐক্যের প্রতিনিধিরা এই ঐতিহাসিক সনদে স্বাক্ষর করেছেন।
উপস্থিত নেতারা জানান, জুলাই সনদ বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক ঐকমত্য, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও অন্তর্বর্তী সরকারের রূপরেখা নির্ধারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল হিসেবে ইতিহাসে স্থান করে নেবে।

