বিশ্বায়ন ও আধুনিক প্রযুক্তির যুগে যেখানে খাদ্য এখন অনেকের কাছে সহজলভ্য, সেখানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে কিছু ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী এখনও প্রতিদিন খাবারের জন্য লড়াই করে বেঁচে আছে। প্রকৃতির সঙ্গে সংগ্রাম, শিকার, মাছ ধরা, পাহাড় কেটে চাষ কিংবা পশুপালন—সবকিছুতেই তাদের জীবন নির্ভর করে অমানুষিক পরিশ্রমের ওপর। নৃবিজ্ঞানীরা বলছেন, এই জনগোষ্ঠীগুলো মানবসভ্যতার সবচেয়ে প্রাচীন জীবনধারার ধারক।
নিচে খাবারের জন্য কঠোর পরিশ্রমে পরিচিত ১০টি নৃগোষ্ঠীর সংক্ষিপ্ত চিত্র তুলে ধরা হলো—
১. সান (San) বা বুশম্যান – দক্ষিণ আফ্রিকা
আফ্রিকার কালাহারি মরুভূমিতে সান জনগোষ্ঠীর প্রধান কাজ হলো শিকার ও ফলমূল সংগ্রহ। শুষ্ক মরুভূমিতে পানি খুঁজে বের করা এবং পশু শিকার করা তাদের প্রতিদিনের সংগ্রাম।
২. ইনুইট (Inuit) – আর্কটিক অঞ্চল
বরফাচ্ছন্ন আর্কটিক অঞ্চলে ইনুইটদের জীবন খাবারের জন্য হিমশীতল লড়াই। বরফের গর্ত করে মাছ ধরা, সিল ও তিমি শিকারই তাদের প্রধান খাদ্য সংগ্রহের উপায়।
৩. ইয়ানোমামি (Yanomami) – অ্যামাজন অরণ্য
ব্রাজিল ও ভেনেজুয়েলার সীমান্তবর্তী অ্যামাজনের জঙ্গলে ইয়ানোমামি জনগোষ্ঠী মাছ ধরতে, পশু শিকার করতে এবং বুনো ফলমূল সংগ্রহ করতে দিনের পর দিন ঘুরে বেড়ায়।
৪. ওনগে (Onge) – আন্দামান দ্বীপপুঞ্জ
ভারতের আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে বসবাসরত ওনগে জনগোষ্ঠী প্রতিদিন সমুদ্রে মাছ ধরতে ও বনে শিকার করতে যায়। ঝড়ঝঞ্ঝা ও অজানা রোগব্যাধি তাদের খাদ্য সংগ্রহকে আরও কঠিন করে তোলে।
৫. হিম্বা (Himba) – নামিবিয়া
আফ্রিকার মরুভূমিতে হিম্বারা প্রতিদিন দূর থেকে পানি ও পশুখাদ্য সংগ্রহ করে। গবাদি পশুই তাদের প্রধান খাদ্য-উৎস, আর তা রক্ষা করতে মরুভূমিতে ঘুরতে হয় কষ্টকর যাত্রা।
৬. চুকচি (Chukchi) – সাইবেরিয়া, রাশিয়া
চুকচি জনগোষ্ঠী রেইনডিয়ার পালনের ওপর নির্ভরশীল। প্রচণ্ড ঠান্ডা ও বরফঝড়ে পশুগুলোকে বাঁচিয়ে রাখা এবং তার মাংস-দুধ সংগ্রহ করাই তাদের জীবনের বড় পরিশ্রম।
৭. কালাশ (Kalash) – পাকিস্তান
চিত্রালের দুর্গম পাহাড়ি উপত্যকায় কালাশ জনগোষ্ঠী বুনো ফল, কাঠ ও পাহাড়ি ফসল সংগ্রহ করে খাবারের ব্যবস্থা করে। খাদ্যের জন্য প্রতিদিনের সংগ্রাম তাদের জীবনযাত্রার অবিচ্ছেদ্য অংশ।
৮. সানতাল (Santal) – বাংলাদেশ ও ভারত
ধান, ভুট্টা ও ডাল চাষই সাঁওতালদের প্রধান জীবিকা। খরা, জমি দখল ও দারিদ্র্যের কারণে খাবারের জন্য তাদেরকে অনেক সময় দিনমজুরি করতেও হয়।
৯. মাসাই (Maasai) – কেনিয়া ও তানজানিয়া
মাসাই জনগোষ্ঠী গবাদি পশু পালনের মাধ্যমে টিকে থাকে। পশু চরাতে গিয়ে তাদের মরুভূমি ও সাভানায় দিনের পর দিন কাটাতে হয়। দুধ, মাংস ও রক্তই তাদের প্রধান খাবার।
১০. ম্রো (Mro) – বাংলাদেশ, পার্বত্য চট্টগ্রাম
বাংলাদেশের বান্দরবানে বসবাসরত ম্রো জনগোষ্ঠী জুম চাষ করে বেঁচে থাকে। পাহাড় কেটে ফসল ফলানো, ঝরনা থেকে পানি আনা, বন থেকে খাদ্য সংগ্রহ—সবকিছুতেই তাদের প্রচুর পরিশ্রম করতে হয়।
এই জনগোষ্ঠীগুলোর জীবনযাপন মানবসভ্যতার আদি সংগ্রামী ইতিহাসকে মনে করিয়ে দেয়। কিন্তু আধুনিক সমাজে তারা সবচেয়ে ঝুঁকিতে আছে, কারণ তাদের খাদ্য সংগ্রহের পদ্ধতি ক্রমেই টিকে থাকা কঠিন হয়ে উঠছে।

