logo
ads

বান্দরবানে ফানুসের আলোয় উজ্জ্বল প্রবারণা উৎসব

কিকিউ মারমা, বান্দরবান থেকে

প্রকাশকাল: ৬ অক্টোবর ২০২৫, ০৯:০৬ পি.এম
বান্দরবানে ফানুসের আলোয় উজ্জ্বল প্রবারণা উৎসব

বর্তমান বাংলা

আলোর ঝর্ণায় মোহিত হয়ে উঠেছে পাহাড়ি শহর বান্দরবান, যেখানে রঙিন আলোর ঝলকানি আর মোমবাতির দীপশিখা মিশে গিয়ে গড়ে তুলেছে উৎসবের এক অপার্থিব ছবি—হৃদয়ের গভীরে বাজছে শান্তির করুণ সুর, যা আকাশ ছুঁয়ে যায় ভালোবাসার ঢেউয়ে। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের প্রধান উৎসব প্রবারণা পূর্ণিমায় শহরটি যেন এক জীবন্ত মণ্ডপ হয়ে উঠেছে, যেখানে শিশু-কিশোর থেকে বৃদ্ধ-বয়স্ক সবাই মিলে জাগিয়ে তুলছে আত্মশুদ্ধির আশার স্ফুলিঙ্গ।

সন্ধ্যা নামতেই রাজগুরু বৌদ্ধ বিহারের দিকে বের হয় বর্ণাঢ্য রথযাত্রা, যা যেন এক উজ্জ্বল নদীর মতো প্রবাহিত হয়ে শহরের রাস্তায় রঙ ছড়িয়ে দেয়—কারও হাতে জ্বলে মোমবাতির নরম আলো, কেউ প্রার্থনায় মগ্ন হয়ে হৃদয়ের দরজা খুলে দেয়, আবার কেউ পুণ্যের আশায় রথ টেনে চলেছে অটল প্রত্যয়ে। শোভাযাত্রায় শিশু-কিশোর, নারী-পুরুষের মিশ্রণ যেন এক অদম্য ঝড়ের মতো উঠেছে, যা বিহারজুড়ে মনোমুগ্ধকর দৃশ্য ফুটিয়ে তুলেছে—এই যাত্রা যেন হৃদয়ের গভীর ক্ষত মুছে ফেলার মতো সান্ত্বনা দিচ্ছে, সমাজের প্রত্যেককে একত্রিত করে।

প্রবারণা পূর্ণিমায় ভিক্ষু ও ভক্তরা একসাথে বিশেষ প্রার্থনায় মগ্ন, যা যেন এক নির্মল স্রোতের মতো প্রবাহিত হয়ে বুদ্ধের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে—আলো জ্বালিয়ে মনেপ্রাণে পূজা করা যেন অন্ধকারের গহ্বরে জ্বালানো মশাল, যা আত্মশুদ্ধি, ক্ষমা ও নতুন শুরুর বার্তা ছড়ায়। বৌদ্ধ ভক্তরা মনে করেন, এ দিনটি হৃদয়ের পাপ ধুয়ে ফেলার প্রতীক, যেন এক অসহায় যন্ত্রণার পর ফুটে উঠছে শান্তির ফুল—এই অনুভূতি যেন প্রত্যেকের বুকে বিঁধে আছে, উৎসবকে আরও গভীর করে তুলছে।

রাত নামতেই আকাশ ভরে ওঠে রঙিন ফানুসে, শত শত আলোকবিন্দু উড়ে পাহাড়ি রাতকে আলোকিত করে যেন এক স্বপ্নিল জগতের দরজা খুলে দেয়—সেই আলোর ছটা অন্ধকারকে পেছনে ঠেলে শান্তি ও ভালোবাসার বার্তা ছড়িয়ে দিচ্ছে সর্বত্র, যা হৃদয়ের গভীরে এক অদম্য আনন্দের ঢেউ তুলে দিচ্ছে। প্রাচীনকাল থেকে বর্ষাবাস শেষে আশ্বিন পূর্ণিমায় মারমারা এই উৎসব পালন করে আসছেন, গৌতম বুদ্ধের চুল আকাশে উড়িয়ে দেওয়ার স্মৃতিতে ফানুস উড়িয়ে শ্রদ্ধা জানান—ফানুসের আলো যেমন আকাশজুড়ে ছড়ায়, তেমনি প্রার্থনার আলো ছড়াক প্রত্যেক হৃদয়ে, এই কামনায় সাঙ্গু নদীতে রথ বিসর্জনের মাধ্যমে উৎসবের পরিসমাপ্তি ঘটে।

বিহারে ঐতিহ্যবাহী পোশাকে তরুণী সাইন সাইন মারমার কণ্ঠে ফুটে উঠছে উৎসবের মধুর সুর: "প্রবারণা পূর্ণিমায় বুদ্ধের উদ্দেশ্যে পূজা করতে এসেছি, ফানুস উড়ানো, পিঠা উৎসব আর রথযাত্রায় অংশ নেওয়া—সবই আমাদের আনন্দের অংশ, যেন হৃদয়ের গভীরে জ্বলে উঠছে স্মৃতির আলো।" তরুণ সিংমংউ মারমা যোগ করেন, "এই উৎসব এক মিলনমেলা, সারাবছরের ব্যস্ততায় আলাদা থাকা সত্ত্বেও এখানে সবাই এক হয়ে যায়—যেন এক অসহায় বিচ্ছেদের পর ফিরে এসেছে পরিবারের উষ্ণতা।"

উৎসব উদয়াপন পরিষদের সভাপতি চনুমং মারমা জানান, এবারের আয়োজনে মঙ্গল রথযাত্রা, হাজার প্রদীপ প্রজ্বলন, পিঠা উৎসব, ফানুস উড়ানো, পঞ্চশীল গ্রহণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান—৫ অক্টোবর সন্ধ্যায় রাজা মাঠে গুরু ভান্তেদের ধর্মদেশনা ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় উদ্বোধন হয়েছে, ৭ অক্টোবর সাঙ্গু নদীতে রথ বিসর্জনের মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হবে ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে বা প্রবারণা পূর্ণিমা। এই কর্মসূচি যেন এক অদম্য ঝড়ের মতো উঠেছে, যা পাহাড়ের প্রত্যেক কোণে আনন্দের রঙ ছড়িয়ে দিচ্ছে।

উৎসবকে ঘিরে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বান্দরবান জেলা পুলিশ সুপার মো. শহিদুল্লাহ কাওছার: "অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে গোয়েন্দা নজরদারি ও সাদা পোশাকের টিম মোতায়েন রয়েছে—যেন এই আলোর উৎসবে কোনো ছায়া না পড়ে।" এই ব্যবস্থা যেন হৃদয়ের গভীরে এক অটল নিরাপত্তার অনুভূতি জাগিয়ে তুলছে, উৎসবকে আরও উজ্জ্বল করে।

এই প্রবারণার ছায়ায় বান্দরবানের পাহাড় মেঘমুক্ত হয়ে উঠছে আলোর রশ্মিতে, কিন্তু সেই রশ্মির উষ্ণতা যেন সকলের হৃদয় ছুঁয়ে যাবে—ভক্তদের প্রার্থনা, তরুণদের আনন্দ মিলে গড়ে তুলবে এক নতুন শান্তির স্বপ্ন, যাতে ফানুসের আলো চিরকাল জ্বলে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর

হাইলাইটস

বিশেষ সংবাদ