logo
ads

সাংবাদিক হায়াতের কবরে অশ্রুর বিন্দু: সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিলেন সাবেক এমপি সেলিম

বাগেরহাট প্রতিনিধি

প্রকাশকাল: ১১ অক্টোবর ২০২৫, ১১:০৮ এ.এম
সাংবাদিক হায়াতের কবরে অশ্রুর বিন্দু: সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিলেন সাবেক এমপি সেলিম

বর্তমান বাংলা

বাগেরহাটের হাড়িখালি এলাকার সেই নীরব গ্রামবাড়ি, যেখানে ৩ অক্টোবরের সন্ধ্যায় দুর্বৃত্তদের কুপির আঘাতে এস. এম. হায়াত উদ্দিনের (৪২) জীবনের শেষ অধ্যায় লেখা হয়েছিল, সেই বাড়ির চারপাশে এখনও ভাসছে শোকের কালো মেঘ। দৈনিক ভোরের চেতনা পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার এবং বিএনপির সক্রিয় নেতা হায়াত, যিনি ফেসবুকে দুর্নীতি, মাদক ব্যবসা ও সামাজিক অবিচারের বিরুদ্ধে নির্ভীক কণ্ঠস্বর তুলতেন, তার হত্যা যেন একটি গভীর ক্ষত হয়ে রয়েছে স্থানীয় সাংবাদিক সমাজের হৃদয়ে। চায়ের দোকানে বসে বাসায় ফিরছিলেন তিনি, হঠাৎ দুর্বৃত্তদের হাতে কুপির ঝড়ে মাথা-ঘাড়-পেট ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়, আর খুলনা মেডিকেল কলেজের করিডরে তার শেষ নিঃশ্বাস। পরিবারের দাবি, দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশের কারণে এমন হামলা আগেও হয়েছে, কিন্তু এবার সেই কালো ছায়া তাকে চিরতরে নিয়ে গেছে। এই ক্ষতরাশির মাঝে, যেন এক উষ্ণ আলিঙ্গন এসে পড়েছে—বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ এইচ সেলিমের হাতে, যিনি শোকাহত পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এক নতুন আশার দিগন্তের।

শুক্রবার (১০ অক্টোবর) সকালে ঢাকা থেকে বাগেরহাটে পৌঁছে সেলিম প্রথমে হায়াতের কবরে ফুল দিয়ে প্রণাম জানান, যেন সেই নির্মল মাটির নিচে লুকিয়ে থাকা স্মৃতিকে জাগিয়ে তুলতে চান। কবরের ধুলোয় হাত বুলিয়ে, চোখের জলে ভিজে তার কণ্ঠে ওঠে সান্ত্বনার সুর—পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের হাত ধরে বলেন, “হায়াতের ত্যাগ যাবে না বৃথা, আমরা তার পথে দাঁড়াবো।” এই মুহূর্তে, দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে এক লাখ টাকার আর্থিক সহায়তা তুলে দেন তিনি, যা যেন একটি অদৃশ্য সেতু—কষ্টের গভীর খাদ থেকে উঠে আসার। কিন্তু সহায়তা শুধু টাকায় সীমাবদ্ধ নয়; হায়াতের দুই শিশুর মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত পড়াশোনার দায়িত্ব নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সেলিম যেন একটি দীর্ঘমেয়াদি আলো জ্বালিয়ে দিয়েছেন। সেই শিশুরা, যাদের চোখে এখনও বাবার হাসির ছায়া, তাদের স্বপ্ন যেন আর অন্ধকারে হারিয়ে না যায়—এই প্রতিশ্রুতি তাদের হৃদয়ে বপন করেছে আশার বীজ।

পরিদর্শনকালে উপস্থিত হয়েছিলেন বাগেরহাট প্রেসক্লাবের সভাপতি মো. কামরুজ্জামান, জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি ফকির তরিকুল ইসলাম, বিএনপি নেতা মাহবুবুল হক কিশোর, সাবেক পৌর কাউন্সিলর মাহবুবুর রহমান টুটুল, জেলা শ্রমিক দলের সাবেক সভাপতি আতিয়ার সরদার ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. সাইফুল ইসলামসহ স্থানীয় নেতাকর্মীরা। তাদের উপস্থিতি যেন একটি সম্মিলিত শক্তির প্রতীক—হায়াতের হত্যার বিরুদ্ধে এক নীরব প্রতিবাদ। সেলিমের কণ্ঠে তখন জ্বলে ওঠে আহ্বানের আগুন: সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, সন্ত্রাসী হামলাকারীদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে বিচার নিশ্চিত করা, এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে প্রশাসনকে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার। এই কথাগুলো যেন শুধু একটি দাবি নয়, একটি প্রতিজ্ঞা—যাতে আর কোনো সাংবাদিকের কলম রক্তে লাল না হয়।

হায়াতের হত্যা মামলায় ইতোমধ্যে দুই প্রধান আসামি গ্রেপ্তার হয়েছে, কিন্তু পুলিশের তদন্তে এখনও অনেক অন্ধকার কোণ রয়েছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে তার সাহসী সংবাদ, বিএনপির অভ্যন্তরীণ গ্রুপিং, এমনকি তার বিরুদ্ধে মাদকের অভিযোগ—সব মিলিয়ে এই হত্যা যেন এক জটিল জালের ফাঁদ। কিন্তু সেলিমের এই সহায়তা যেন একটি আলোর রশ্মি, যা পরিবারের অন্ধকার রাতকে ভেদ করে দিচ্ছে। হায়াতের স্মৃতি যেন এখন আর শুধু শোক নয়, হয়ে উঠছে এক সচেতনতার প্রতীক—যাতে সাংবাদিকের কণ্ঠ সুরক্ষিত থাকে, এবং তার সন্তানরা গড়ে তুলতে পারে বাবার অসমাপ্ত স্বপ্নের ভবন। এই প্রতিশ্রুতির মাঝে লুকিয়ে আছে একটি বার্তা: সাহসের বিনিময়ে কখনো হার না মানা, আর কষ্টের মাঝে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেওয়াই হলো মানবতার সবচেয়ে বড় জয়।

সর্বশেষ খবর

হাইলাইটস

বিশেষ সংবাদ