গুরুদাসপুরের ধুলোমাখা পথে, যেখানে নদীর ঢেউয়ের মতো জীবনের অনিশ্চয়তা ছুটে বেড়ায়, সেখানে ক্যান্সারের কালো ছায়া পড়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র সুমনের উপর। হাড়ের গভীরে লুকিয়ে থাকা এই নির্মম শত্রু, যা স্পাইনাল কর্ড থেকে ফুসফুস পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে যেন অদম্য জঙ্গলের আগুন, তার একমাত্র ছেলেকে ছিনিয়ে নিতে চায় চরপিপলা গ্রামের সাধারণ বাড়ির আজহার হোসেনের। দীর্ঘ চিকিৎসার যন্ত্রণায় ক্লান্ত এই পরিবারের চোখে আজ আশার আলো জ্বলে উঠেছে—কারণ মানবতা এখানও বেঁচে আছে, যেন অন্ধকার রাতের পর সকালের প্রথম রশ্মি। গত রোববার (১২ অক্টোবর) দৈনিক বর্তমান বাংলা পত্রিকায় প্রকাশিত "গুরুদাসপুরে ক্যান্সারে আক্রান্ত রাবি শিক্ষার্থী সুমনের জীবন রক্ষার আহ্বান" শিরোনামের সংবাদটি যেন একটি চিৎকার ছিল অসহায়ত্বের, যা পৌঁছে গেছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফাহমিদা আফরোজের হৃদয়ে। সোমবার (১৩ অক্টোবর) সন্ধ্যায়, যখন সূর্যের শেষ আলো গ্রামের পথগুলোকে সোনালি করে তুলছিল, তিনি সুমনের বাবার হাতে চিকিৎসা সহায়তার চেক তুলে দেন—একটি হাতবাড়ানো যা শুধু আর্থিক নয়, বরং মানবিকতার অটুট বন্ধনের প্রতীক।
ফোকলোর অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের মাস্টার্সের এই তরুণ ছাত্র, যার স্বপ্ন ছিল সমাজের উন্নয়নের পথে হাঁটা, আজ নিজের যুদ্ধক্ষেত্রে লড়াই করছে। ২০২২ সালের জুলাই থেকে শুরু হয়েছে এই কালো অধ্যায়—স্পাইনাল কর্ডে টিউমার, অসহনীয় ব্যথা যেন হাজার খড়্গের আঘাত, দুই পায়ের অসাড়তা যা তাকে চেয়ারে বেঁধে রেখেছে। ঢাকার আল-মানার হাসপাতালে অপারেশন, ১২টি কেমোথেরাপির বিষাক্ত ঢেউ, ৩৮টি রেডিওথেরাপির জ্বালা—সব মিলিয়ে ২০২৪-এর ফেব্রুয়ারিতে সাময়িক বিজয়। কিন্তু চলতি বছরের শুরুতে ফিরে এসেছে শত্রু, ফুসফুসে ছড়িয়ে পড়েছে যেন বন্যার জল। ভারতের ভেলোরের ক্রিশ্চিয়ান মেডিকেল কলেজে (সিএমসি) চিকিৎসাধীন এই যুবকের জন্য ৩০ লাখ টাকার ব্যয়, যা এক গ্রাম্য পরিবারের পক্ষে পাহাড়ের মতো ভারী। সুমনের পিতা আজহার হোসেনের চোখে জলের ধারা, হৃদয়ে কাতর আকুতি—একমাত্র সন্তানকে হারানোর ভয় যেন বিষের ফোঁটা, যা তাদের রাতের ঘুম চুরি করে নিয়েছে।
কিন্তু এই অন্ধকারে আলোর দীপ্তি এসেছে সংবাদের শক্তি থেকে। ইউএনও ফাহমিদা আফরোজের এই উদারতা শুধু একটি চেক নয়, বরং একটি বার্তা যে প্রশাসনের দরজা সবসময় খোলা মানবিকতার জন্য। চেক বিতরণের মুহূর্তে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আসাদুল ইসলাম, উপজেলা প্রকৌশলী মিলন মিয়া, খুবজীপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলাম—সবাই যেন একত্র হয়ে সেই ফেরীওয়ালার মতো, যে ডুবন্তকে টেনে তোলে নির্মম নদী থেকে। ফাহমিদা আফরোজের কণ্ঠস্বরে মিষ্টি আশ্বাস: "যেকোনো মানবিক সহায়তায় উপজেলা প্রশাসন পাশে থাকবে। আর্থিকের বাইরে অন্যান্য সহযোগিতাও দেব।" সুমনের সুস্থতার জন্য তাঁর প্রার্থনা যেন মায়ের দোয়া, যা হৃদয়কে স্পর্শ করে।
সংবাদের ঢেউ ছড়িয়ে পড়েছে দূর-দূরান্তে। আমেরিকা প্রবাসী রাশিদুল ইসলামের দান, বিবেক ফাউন্ডেশনের হাতবাড়ানো, নাটোর জেলা সমিতি ঢাকার সহায়তা—এসব যেন বৃষ্টির ফোঁটা শুকিয়ে যাওয়া মাটিতে। ব্যক্তি, রাজনৈতিক দল, সামাজিক-মানবিক সংগঠনগুলো একসঙ্গে দাঁড়িয়েছে, প্রমাণ করে যে মানুষের হৃদয়ে এখনও সহানুভূতির স্রোত বয়ে চলে। রাবির সহকারী অধ্যাপক আমিরুল ইসলাম কনকের কথায়, বিশ্ববিদ্যালয়ও ফান্ড গঠন করে বড় সহায়তার প্রস্তুতি নিচ্ছে। আজহার হোসেনের কৃতজ্ঞতা অপার—তাঁর কণ্ঠে কান্নার সুর মিশে আছে আশার সুরে: "দ্রুত সুস্থ করে ছেলেকে ফিরিয়ে আনব। সুহৃদ, দানবীরদের সাহায্য চাই।"
মানবতার এই উজ্জ্বল অধ্যায় আমাদের মনে করিয়ে দেয়, সংবাদ শুধু খবর নয়, বরং পরিবর্তনের সেতু। যারা এখনও দ্বিধায় আছেন, আসুন হাত বাড়াই—কারণ একটি ছোট দান যেন জীবনের নৌকাকে তীরে নিয়ে যায়। সহায়তা পাঠান: দেলোয়ার হোসেন, অগ্রণী ব্যাংক চাঁচকৈড় বাজার শাখা, অ্যাকাউন্ট নম্বর ০২০০০২২০৮১১৫৮; বিকাশ ০১৭৬৪৯০৩০১১। সুমনের হাসির জন্য, মানবতার জয়হোস।

