লালমনিরহাটের মাটিতে অন্ধকারের মাঝে জ্বলে উঠেছে আলোর এক ঝলক! যাদের চোখে পৃথিবীর রং-রূপ ম্লান, তাদের জন্য সাদাছড়ি শুধু একটি লাঠি নয়, এটি স্বাধীনতার প্রতীক, হাতের স্পর্শে জীবনের পথ খুঁজে পাওয়ার অদম্য শক্তি। ১৯৬৪ সাল থেকে প্রতি বছর ১৫ অক্টোবর বিশ্ব সাদাছড়ি ও নিরাপত্তা দিবসে এই দিন যেন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের অধিকারের জন্য এক মৌন ক্রন্দন, সামাজিক পুনর্বাসনের স্বপ্ন এবং স্বাধীনতার জয়গান। বুধবার সকালে জেলা প্রশাসন মিলনায়তনে "দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তির উন্নয়ন" শীর্ষক আলোচনা সভা ও আধুনিক সাদাছড়ি বিতরণ যেন হাজারো অন্ধকার হৃদয়ে আশার স্পর্শ, যা কান্না মিশ্রিত হাসিতে ভরিয়ে দেয়।
জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দারের প্রধান অতিথিত্বে সভা শুরু হয়, তাঁর কণ্ঠে উঠে আসে গভীর সহানুভূতি—একটি সাদাছড়ি যেন অন্ধকারের টুনেলে আলোর প্রথম রশ্মি, যা প্রতিবন্ধীদের জীবনকে নতুন করে গড়ে তোলে। পুলিশ সুপার মোঃ তরিকুল ইসলাম ও সিভিল সার্জন ডা. আব্দুল হাকিমের বিশেষ উপস্থিতিতে সভাপতি উপ-পরিচালক মোঃ ফজলুল হকের নেতৃত্বে আলোচনা যেন এক মানবিক মহাকাব্য, যেখানে প্রতিটি কথা দৃষ্টিহীনদের ব্যথা স্পর্শ করে, তাদের স্বপ্নকে আলিঙ্গন করে। আধুনিক সাদাছড়ির হাতে হাতে তুলে দেওয়া মুহূর্ত যেন অশ্রুসিক্ত, কারণ এটি শুধু একটি সরঞ্জাম নয়, এটি সম্মানের চাবিকাঠি, যা অন্ধকারের বন্দীদের মুক্ত করে দেয়।
অন্যদিকে, আরডিআরএস বাংলাদেশ এনজিওর উদ্যোগে "সাদাছড়ির আধুনিকায়ন, দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তির উন্নয়ন" শীর্ষক আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান যেন এক হৃদয়স্পর্শী উৎসব, যেখানে অন্ধকারের মাঝে সঙ্গীতের আলো ফুটে ওঠে। উপ-পরিচালক মোঃ ফজলুল হকের প্রধান অতিথিত্বে সহকারী উপপরিচালক মোঃ সামিউল ইসলাম, সমাজসেবা অফিসার সুশান্ত সরকার ও প্রকল্প কো-অর্ডিনেটর মোঃ মতিউর রহমানের বিশেষ উপস্থিতি যেন সমাজের ঐক্যের প্রতীক। সিনিয়র মেডিকেল অফিসার ড. সুদিপ্ত সরকারের বক্তব্যে ফুটে উঠে চিকিৎসার সঙ্গে মানবিকতার মিলন, আর অ্যাডমিন অফিসার প্রদীপ কুমারের শুভেচ্ছায় ভরে ওঠে আশার বার্তা।
সভা শেষে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিশুদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান যেন হৃদয় ছুঁয়ে যায়—তাদের গান, নৃত্য যেন অন্ধকারকে চিরে আলোর নৃত্য, যা দর্শকদের চোখে জল আনে, হৃদয়ে আনন্দ ছড়ায়। এই শিশুরা, যাদের চোখে রং নেই, তবু তাদের হৃদয়ে স্বপ্নের রং ফুটে ওঠে, যেন প্রমাণ করে—দৃষ্টি না থাকলেও আত্মার আলো অমর। লালমনিরহাটের এই দিন শুধু উদযাপন নয়, এটি এক গভীর অনুভূতির জাগরণ—দৃষ্টিহীনদের জন্য এক নতুন দিগন্ত, যেখানে সাদাছড়ি হয়ে ওঠে স্বাধীনতার পতাকা, এবং সমাজ হয়ে ওঠে তাদের সঙ্গী। অন্ধকার দূর হোক, আলোর এই যাত্রা অব্যাহত থাকুক!

