চট্টগ্রামে টানা ১৮ দিন ধরে জেলা প্রশাসক নেই। ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার মাধ্যমে চলছে দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এ জেলার প্রশাসনিক কার্যক্রম। এতে জেলার গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণে ব্যাঘাত ঘটছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা এটিকে ‘দুর্ভাগ্যজনক’ বলেও মন্তব্য করেছেন।
সর্বশেষ জেলা প্রশাসক ফরিদা খানমের বদলির পর নতুন জেলা প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় নওগাঁর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়ালকে। গতকাল (সোমবার) পর্যন্ত তিনি চট্টগ্রামে যোগ দেননি। কবে যোগ দেবেন, তাও অনিশ্চিত। বর্তমানে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এলএ) মো. কামরুজ্জামান অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে জেলা প্রশাসনের যাবতীয় কার্যক্রম সামাল দিচ্ছেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ১৮ দিন ধরে ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক দিয়ে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসন চলার নজির তেমন নেই। সুজন চট্টগ্রাম জেলার সম্পাদক অ্যাডভোকেট আকতার কবির আজাদী পত্রিকাকে বলেন, “চট্টগ্রাম একটি বড় ও গুরুত্বপূর্ণ জেলা। এখানে বন্দরসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে। এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ জেলায় ভারপ্রাপ্ত দিয়ে চালানো যায় না। উপযুক্ত লোকের অভাব নেই। ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক অনেক বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না বা নেন না। জনগুরুত্বপূর্ণ অনেক বিষয় নিশ্চয়ই আটকে আছে। সাধারণ মানুষের ভোগান্তি হচ্ছে। কী এমন সংকট হলো যে নিয়োগ পাওয়া জেলা প্রশাসক যোগদান করছেন না? সংশ্লিষ্টদের কাছে আমাদের প্রত্যাশা, দ্রুত জেলা প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হোক।”
সিনিয়র অ্যাডভোকেট ও মানবাধিকারকর্মী জিয়া হাবিব আহসান বলেন, “১৮ দিন ধরে ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক দিয়ে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসন চলছে—এটি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। চট্টগ্রাম এখন অভিভাবকহীন। এ সরকারের আমলে এমনটি আশা করিনি। ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক দিয়ে সবকিছু দেখভাল করা সম্ভব নয়।”
২১ সেপ্টেম্বর নওগাঁর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়ালকে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফরিদা খানমকে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ে উপসচিব হিসেবে বদলি করা হয়। এর ধারাবাহিকতায় ২৫ সেপ্টেম্বর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে বিদায় সংবর্ধনা দেওয়া হয়। সেই হিসেবে ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে গতকাল (১৩ অক্টোবর) পর্যন্ত ১৮ দিন ধরে চট্টগ্রামে জেলা প্রশাসক নেই।
ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মো. কামরুজ্জামান বলেন, “খুব শিগগিরই নতুন জেলা প্রশাসক যোগদান করবেন। তবে সঠিক সময়টি বলতে পারছি না। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনার অপেক্ষায় আছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বিষয়টি দেখছেন।”
‘২৩ দিন আগে নতুন জেলা প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, ১৮ দিন ধরে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকহীন—নিয়োগ স্থগিত বা বাতিল হয়েছে, এমন কোনো খবরও নেই। ঠিক কী কারণে নতুন জেলা প্রশাসক যোগদান করছেন না?’—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষই বলতে পারবেন। আমরা আশা করছি শিগগিরই বিষয়টির সুরাহা হবে।”
তিনি আরও বলেন, “নিয়মিত জেলা প্রশাসক না থাকলেও জেলা প্রশাসনের কাজ থেমে নেই। সব ধরনের কাজ চলমান রয়েছে এবং ভালোভাবেই চলছে।”
নিয়োগ পাওয়ার পর ২৩ দিন পার হলেও এখনো কেন চট্টগ্রামে যোগদান করেননি—এমন প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল গতকাল সন্ধ্যায় বলেন, “এ বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই। আমি বর্তমানে নওগাঁয় আছি।”
শীঘ্রই চট্টগ্রামবাসী তাকে পাবেন কিনা—এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “ইনশাআল্লাহ।”
জানা গেছে, চট্টগ্রাম থেকে বিদায় নেওয়া ফরিদা খানমকে এক সপ্তাহের মধ্যে তিনটি মন্ত্রণালয়ে বদলি করা হয়েছে। ২১ সেপ্টেম্বর প্রথমে তাকে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ে, ২৫ সেপ্টেম্বর সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে এবং ২৮ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বদলি করা হয়। গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর ফরিদা খানম চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব নেন। অন্যদিকে, ওই সময়ের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামানকে অন্যত্র বদলি করা হয়।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সেবা নিতে আসা সাধারণ লোকজন বলেন, “জেলা প্রশাসকের সরাসরি সাক্ষাৎ ছাড়া অনেক কাজ অসম্পূর্ণ থেকে যায়। সকল কাজ ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক করতে চান না, ফলে অনেক ফাইল ও নথিপত্র আটকে আছে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে।”

