logo
ads

২৩ ঘণ্টা পেরিয়ে রূপনগরে নেভেনি আগুন

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশকাল: ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ১২:১৭ পি.এম
২৩ ঘণ্টা পেরিয়ে রূপনগরে নেভেনি আগুন

মিরপুরের রাসায়নিক গুদামে ঢোকার প্রস্তুতি ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের

রাজধানীর মিরপুর রূপনগরের শিয়ালবাড়ী এলাকায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ২৩ ঘণ্টা পার হলেও রাসায়নিক গুদামের আগুন এখনো পুরোপুরি নেভানো যায়নি।

মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে যে আগুনের সূত্রপাত, তা বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকে। ধোঁয়ায় ঢেকে গেছে আশপাশের এলাকা, এখনও ছড়াচ্ছে পুড়ে যাওয়া রাসায়নিকের তীব্র দুর্গন্ধ।

ফায়ার সার্ভিসের মিডিয়া সেলের কর্মকর্তা তালহা বিন জসিম জানান, রাসায়নিকের মজুদের কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে দেরি হচ্ছে। “আগুন পুরোপুরি নেভেনি, এখনও কিছু জায়গা থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে। ঠিক কখন নিয়ন্ত্রণে আসবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না,” বলেন তিনি।

একই সময়ে আগুনে পুড়ে যাওয়া গুদামের বিপরীত পাশের চারতলা পোশাক কারখানার আগুন মঙ্গলবারই নিয়ন্ত্রণে আসে। সেখান থেকে এখন পর্যন্ত ১৬ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আগুনে দগ্ধ হয়ে মরদেহগুলো অঙ্গার হয়ে যাওয়ায় তাৎক্ষণিকভাবে কারও পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। নিহতদের মরদেহ পাঠানো হয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে।

রাতভর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগ ও মর্গে ভিড় করেছেন নিখোঁজদের স্বজনরা। কেউ কেউ পুড়ে যাওয়া মরদেহ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন, দাবি করেছেন প্রিয়জনের পরিচয় হিসেবে। তবে প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন, মরদেহগুলোর পরিচয় নিশ্চিত করতে ডিএনএ পরীক্ষার প্রয়োজন হবে।

প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় বাসিন্দা আবদুল জলিল জানান, “প্রথমে রাসায়নিকের গুদাম থেকেই আগুন লাগে। মুহূর্তেই আগুনের লেলিহান শিখা আতশবাজির মতো ওপরের দিকে ছুটে যায়, তারপর পাশের পোশাক কারখানায় গিয়ে পড়ে। আগুন এত দ্রুত ছড়ায় যে ভেতরে থাকা মানুষগুলো বের হতে পারেনি।”

চারতলা ভবনের নিচতলায় ছিল অ্যামব্রয়ডারি কারখানা, দ্বিতীয় তলায় কাপড়ে স্ক্রিনপ্রিন্টের কাজ, তৃতীয় তলায় পোশাক তৈরির ইউনিট এবং চতুর্থ তলায় গার্মেন্টসের গুদাম। আগুনের সময় ভবনটিতে কর্মরত ছিলেন অন্তত ৩০-৩৫ জন শ্রমিক বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা।

এদিকে রাসায়নিক গুদামের মালিক শাহ আলম ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছেন। স্থানীয়দের দাবি, রূপনগর এলাকায় তার একাধিক অবৈধ রাসায়নিকের গুদাম রয়েছে, যা কোনো অনুমোদন ছাড়াই পরিচালিত হচ্ছিল।

ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রাসায়নিক মজুদের কারণে বিস্ফোরণের ঝুঁকি থেকে যায়, ফলে তারা খুব সতর্কতার সঙ্গে কাজ করছেন। স্থানীয় প্রশাসন ঘটনাস্থলে সাময়িকভাবে সব ধরনের চলাচল বন্ধ রেখেছে।

উদ্ধারকাজে অংশ নেওয়া এক ফায়ারম্যান বলেন, “রাসায়নিকের আগুন ভয়ংকর। আগুন নেভে আবার জ্বলে ওঠে। ভবনটিতে ঢোকাও সম্ভব হচ্ছে না, ভেতরে তাপমাত্রা এখনো ভয়াবহ।”

আগুনের কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির সঠিক পরিমাণ এখনো জানা যায়নি। তবে স্থানীয়রা বলছেন, এই অগ্নিকাণ্ড শুধু একটি গুদাম বা কারখানাকে নয়—হারিয়েছে বহু শ্রমজীবী পরিবারের স্বপ্ন, রুটিরুজি ও প্রিয়জনদের জীবন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর

হাইলাইটস

বিশেষ সংবাদ