কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার ভিতরবন্দ ইউনিয়নের নন্দনপুর দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে একটি উৎসাহজনক সকাল। ১৬ অক্টোবর ২০২৫, বৃহস্পতিবার, সূর্যের প্রথম আলোয় মুখরিত হয়ে উঠলো এক সম্মিলিত প্রয়াস। “ঐক্যবদ্ধ শক্তি দিয়ে ঠেকাবো, এবার বাল্য বিয়ে”– এই স্লোগানকে হৃদয়ে ধারণ করে ভিতরবন্দ ইউনিয়ন যুব সংগঠনের আয়োজনে, চাইল্ড নট ব্রাইড প্রজেক্ট, এমজেএস কেএস ও প্লান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত হলো বাল্যবিবাহ নিরসনে কমিউনিটি পর্যায়ে লাইফ স্কিল প্রশিক্ষণ কর্মশালা। এ যেন একটি নতুন স্বপ্নের সূচনা, যেখানে সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষ একজোট হয়ে অঙ্গীকার করলো একটি অন্ধকার প্রথাকে মুছে ফেলতে।
নন্দনপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এ কে এম হোসেনের সভাপতিত্বে কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন সহকারী শিক্ষক মোঃ আবু তালেব, ৩ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোঃ আবুল হোসেন বেপারী, নিকাহ রেজিস্টার মোঃ মোজাম্মেল হক। তাঁদের কণ্ঠে ছিল দৃঢ় প্রত্যয়, বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে সমাজকে জাগ্রত করার অঙ্গীকার। শিক্ষার্থীদের চোখে-মুখে ফুটে উঠছিল আগামীর আলো, যারা এই লড়াইয়ের সামনের সারির সৈনিক হবে।
কর্মশালায় ভিতরবন্দ ইউনিয়ন যুব সংগঠনের সভাপতি টুম্পা রানী, সহ-সভাপতি মোঃ মাসুম কাওসার, সাধারণ সম্পাদক মোছাঃ ফেরদৌসী, কোষাধ্যক্ষ মোছাঃ শিমু আক্তারের উপস্থিতি যেন এক ঝড়ের মতো উদ্দীপনা ছড়ালো। তাঁদের সঙ্গে যোগ দিলেন ভিতরবন্দ মহিদের এফ এফ মোঃ বাদশা হোসাইন, কালিগঞ্জ মহিদেবের এফ এফ গোবিন্দ মালালা, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, সাংবাদিক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা। এ যেন এক মিলনমেলা, যেখানে সবাই একসঙ্গে স্বপ্ন দেখছে একটি বাল্যবিবাহমুক্ত সমাজের।
বক্তারা তাঁদের বক্তব্যে বাল্যবিবাহের কুফল তুলে ধরলেন। তারা বললেন, এটি কেবল একটি প্রথা নয়, এটি শৈশবের স্বপ্ন চুরি করে, শিক্ষার পথে বাধা সৃষ্টি করে, নারীর ক্ষমতায়নের পথে কাঁটা বিছায়। তাঁদের কণ্ঠে ছিল আবেগ, ছিল আহ্বান—সমাজের প্রতিটি মানুষকে এই লড়াইয়ে শামিল হতে হবে। শিক্ষার্থীদের উৎসাহী মুখগুলো যেন বলছিল, তারা প্রস্তুত, তাদের হাতে থাকবে পরিবর্তনের মশাল।
এই কর্মশালা কেবল একটি আলোচনা নয়, এটি একটি আন্দোলনের সূচনা। নন্দনপুরের মাটিতে বপন করা হলো একটি আশার বীজ, যা একদিন গাছ হয়ে ছায়া দেবে সমাজের প্রতিটি কোণে। ঐক্যবদ্ধ শক্তির এই প্রতিধ্বনি ছড়িয়ে পড়ুক, বাল্যবিবাহের অন্ধকার দূর হোক—এই ছিল সেদিনের প্রতিটি হৃদয়ের অঙ্গীকার।

