logo
ads

পোরশার রাতের অন্ধকারে ডাকাতির ছায়া: আতঙ্কের ফাঁদে বন্দি জীবন

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশকাল: ১৮ অক্টোবর ২০২৫, ০১:৩৪ পি.এম
পোরশার রাতের অন্ধকারে ডাকাতির ছায়া: আতঙ্কের ফাঁদে বন্দি জীবন

বর্তমান বাংলা

নওগাঁর পোরশা উপজেলার ধূলিময় সড়কগুলোতে, যেখানে সন্ধ্যার সাথে অন্ধকার নামে, সেখানে রাতের প্রতিটি মুহূর্ত যেন এক অদৃশ্য ভয়ের ছায়ায় ঢাকা পড়ে। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে প্রায় প্রতিরাতে ডাকাতির তাণ্ডব চলছে—যেন এক অগ্নিশিখা, যা গ্রাস করে যাচ্ছে ব্যবসায়ীদের স্বপ্ন, পথিকদের নিরাপত্তা আর সাধারণ মানুষের শান্তি। সারাইগাছী-আড্ডা আঞ্চলিক মহাসড়কের মোশানতলা মোড় থেকে বন্ধুপাড়া পর্যন্ত প্রায় ৭ কিলোমিটারের এই পথটি হয়ে উঠেছে মৃত্যুর ফাঁদ। ডাকাতরা গাছ কেটে পথরোধ করে, অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে যাত্রীদের সর্বস্ব লুট করে নেয়—টাকা, সোনা, মোবাইল, এমনকি জীবনের মূল্যও। এলাকাবাসীরা বলছেন, এই আতঙ্ক যেন এক বিষাক্ত নদী, যা রাতের অন্ধকারে ছড়িয়ে পড়ে, আর প্রশাসনের নীরবতা যেন তার স্রোতকে আরও গভীর করে তোলে। স্থানীয়দের অভিযোগ, পুলিশের ভূমিকা অদৃশ্য—যেন এক নীরব দর্শক, যা ডাকাতির পর এসে শুধু কাগজে লিখে যায়।

গত বুধবার (১৫ অক্টোবর) দিবাগত রাতে এই আতঙ্কের চিত্র আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। সারাইগাছী-আড্ডা সড়কের মোশানতলা মোড় থেকে বন্ধুপাড়া মোড় পর্যন্ত তিনটি স্থানে ডাকাতরা গাছ ফেলে পথ আটকে বিভিন্ন যানবাহন আটকে রেখে লুটতরাজ চালায়। একই রাতে বেজোড়া মোড়ে তিন নাইট গার্ডকে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে জিম্মি করে ১৮টি দোকানের সমস্ত মালামাল—কয়েক লক্ষ টাকার মোবাইল, ইলেকট্রনিক্স, খাদ্যদ্রব্য—সব লুট করে নিয়ে যায়। এই ঘটনায় কোনো আহত নেই, কিন্তু ব্যবসায়ীরা বলছেন, “আমাদের স্বপ্নের দোকান যেন এক রাতে ছাই হয়ে গেল।” এর আগে গত রবিবার (১২ অক্টোবর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে সাড়ে ৮টার মধ্যে মোশানতলা মোড়ে আরেক ডাকাতির ঘটনা ঘটে। গাছ ফেলে উভয় দিকের যানবাহন আটকে রেখে যাত্রীদের অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে টাকা-সোনা-মোবাইল ছিনিয়ে নেয়। দিতে না চাইলে মারধর করে প্রায় ২০ জনকে গুরুতর আহত করে—যারা এখনও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন। এই ঘটনাগুলো যেন এক চক্র, যা প্রতি রাতে পুনরাবৃত্তি হয়।

আরও গভীর হয়ে যায় এই কষ্টের গল্প গত সপ্তাহে ঘাটনগর ইউনিয়নের তাঁতিপাড়া বাজারের মুদিখানা ব্যবসায়ী আলমঙ্গীর হোসেনের। রাত ৮টায় দোকান বন্ধ করে বাড়ি ফেরার পথে পথরোধ করে অস্ত্রের মুখে জিম্মি ও মারধর করে তার কাছে থাকা ৪২ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয় ডাকাতরা। আলমঙ্গীরের কণ্ঠে এখনও কাঁপছে সেই ভয়: “আমার সংসারের সব টাকা ছিল সেটা, এখন কীভাবে চলবে? পুলিশ এলে বলে, ‘জিডিএ করুন’—কিন্তু কে ফিরিয়ে দেবে আমার শান্তি?” এমন ঘটনা পোরশার চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে—বাজারের দোকান লুট, সড়কে যাত্রীদের ছিনতাই। স্থানীয়রা বলছেন, মোশানতলা মোড়ে অনেক দিন ধরে এই তাণ্ডব চলছে, কিন্তু পুলিশ সারাইগাছী বাজারে বসে থাকে—দুই কিলোমিটার দূরে। ডাকাতি শেষ হলে আসে, কিন্তু রোধ করে না। এই অভিযোগগুলো যেন এক অদৃশ্য চিৎকার, যা প্রশাসনের কানে পৌঁছাচ্ছে না।

স্থানীয়দের হতাশা গভীর—বিশেষ করে থানা পুলিশের ভূমিকা দেখে। “আমরা রাতে বাড়ি থেকে বের হতে ভয় পাই, ব্যবসায়ীরা দোকান খুলতে দ্বিধা করে,” বলেন এক ব্যবসায়ী। গত বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) সকালে নওগাঁর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাফিউল সারোয়ার এবং পোরশা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মিন্টু রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। ওসি বলেছেন, “সম্প্রতি কয়েকটি এলাকায় ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। আমরা পাহারা বাড়িয়েছি, গুলি চালানোর নির্দেশ দিয়েছি।” কিন্তু স্থানীয়রা বলছেন, এসব কথা শুধু কথা—কার্যকর পদক্ষেপের অভাবে আতঙ্ক আরও বাড়ছে। এই পরিস্থিতি যেন এক কালো ছায়া, যা পোরশার রাতকে গ্রাস করছে। স্থানীয়রা আহ্বান জানাচ্ছেন: জরুরি পুলিশ প্যাট্রলিং, সিসিটিভি স্থাপন, আর কঠোর আইনি ব্যবস্থা ছাড়া এই অন্ধকার থামবে না। পোরশার এই কান্না যেন একদিন পৌঁছাবে সঠিক কানে—যাতে ফিরে আসে রাতের শান্তি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর

হাইলাইটস

বিশেষ সংবাদ