মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার আমগ্রাম ইউনিয়নের সিরাজকাঠি গ্রামে ১৩ অক্টোবর সকাল আটটার আলো যেন একটা অদৃশ্য ছায়ায় ঢেকে গিয়েছিল—মিঠুন মল্লিক (৪৫), যাঁর হাসিমুখ ছিল পাড়ার মুদি দোকানের আলোর মতো, কাজের উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আর ফিরে আসেননি, আর পাঁচদিন পেরিয়ে গেলেও তাঁর খোঁজ মেলেনি, যেন একটা ভাঙা স্বপ্নের মতো হারিয়ে গেলেন অন্ধকারের গভীরে। ৫ ফুট ৫ ইঞ্চি উচ্চতার এই শান্তস্বভাবের ব্যবসায়ী, লুঙ্গি আর আকাশী রঙের হাফহাতা শার্ট পরে বের হয়েছিলেন, আজ তাঁর অনুপস্থিতিতে বাড়িটা হয়ে উঠেছে একটা শূন্যতার মন্দির—প্রতিটি ঘরে ভেসে বেড়াচ্ছে উদ্বেগের ছায়া, আর বাতাসে মিশে আছে একটা অশ্রুর ফোঁটার স্বাদ। এ যেন একটা হৃদয়বিদারক রহস্যের কাহিনি, যা সিরাজকাঠির মাটিকে নাড়িয়ে দিয়ে জিজ্ঞাসা করছে: কোথায় হারিয়ে গেলেন মিঠুন, কেন এই নিখোঁজের অন্ধকার এত গভীর?
পুলিশের কথায়, পরিবারের পক্ষ থেকে জিডি হয়েছে, আর সেই সূত্র ধরে তৎপরতা চলছে—কিন্তু পাঁচদিনের এই নীরবতা যেন একটা নির্মম চুপচাপ, যা মিঠুনের বাবা মনোরঞ্জন মল্লিকের মুদি দোকানে বসে ব্যবসা করা ছেলেকে খুঁজে পাচ্ছে না, কৃষির কাজে হাত বাঁধা এই ব্যবসায়ীর খোঁজে মাইকিং আর লিফলেট ছড়িয়ে দিচ্ছে শুধু চিন্তার ঢেউ। ১৪ অক্টোবর রাতে ছোট ভাই মনোতোষ মল্লিক রাজৈর থানায় সাধারণ ডায়েরি করে, কিন্তু এখনও কোনো আলোর রেখা নেই—প্রতিটি মুহূর্ত যেন একটা অন্ধকার রাতের মতো, যা প্রতিবারের বুকে ফুটিয়ে দিচ্ছে কান্নার কাঁটা। নিখোঁজ মিঠুনের মামা, আমগ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য দীনেশ বালা, চোখের জলে ভেঙে পড়ে বললেন, “আমার ভাগনে মিঠুন খুবই শান্তস্বভাবের মানুষ ছিল, কৃষি কাজ আর পাখুল্লা বাজারের বাবার মুদি দোকানে বসে ব্যবসা করতো। কিন্তু অনেক দিন হয়ে গেল খোঁজ না পাওয়ায় আমরা সবাই দুঃখে দিনরাত কাটাচ্ছি। পুলিশ প্রশাসনের কাছে আকুল আবেদন, ভাগনেকে জীবিত উদ্ধার করে ফিরিয়ে দিন—আর কোনো চাওয়া নেই।” তাঁর কণ্ঠে ছিল একটা মায়ের মতো বেদনা, যা গ্রামের প্রতিটি ঘরে ছড়িয়ে পড়ছে আশার অপেক্ষায়।
আরও হৃদয়বিদারক, মিঠুনের ১২ বছরের ছেলে মানব মল্লিকের কান্নায় ভেঙ্গে পড়া কণ্ঠ—তিনি বললেন, “আমি আর দুটো ছোট বোন আছি, বাবাকে খুঁজে পাচ্ছি না। আপনারা বাবাকে ফিরিয়ে দিন, না হলে আমরা কীভাবে বাঁচব?” এই শিশুকণ্ঠের চিৎকার যেন একটা তীরের মতো বিঁধছে আমাদের হৃদয়ে, যা পরিবারের দুঃখকে ছুঁয়ে গেল অসহায়ত্বের ঢেউয়ে—প্রতিটি স্বজনের চোখে জমে আছে অশ্রু, আর বাড়ির চত্বরে ভেসে বেড়াচ্ছে শূন্যতার ছায়া। রাজৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাসুদ হোসেন খান বললেন, “ঘটনায় জিডি হয়েছে, থানা থেকে পুলিশ পাঠিয়েছি বাড়িতে। আমরা পুলিশি কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি।” এই কথাগুলো যেন একটা আশার রশ্মি, কিন্তু পাঁচদিনের নীরবতা যেন প্রশ্ন তুলছে: কখন মিলবে খোঁজ, কখন ফিরবে মিঠুনের হাসিমুখ?
এই নিখোঁজের রহস্য যেন একটা অন্ধকার গহ্বর, যা সিরাজকাঠির মানুষকে জড়িয়ে ধরেছে উদ্বেগের জালে—কিন্তু এর মধ্যে জ্বলে উঠছে একটা অঙ্গীকারের আলো, যা পুলিশ-প্রশাসনকে জাগিয়ে তুলবে দ্রুততর তৎপরতায়। আশা করি, এই অন্ধকার থেকে উঠে আসবে মিঠুনের ফিরে আসার খবর, যাতে তার ছেলে-মেয়েরা আবার বাবার কোলে হাসতে পারে, আর পরিবারের ঘরে ফিরে আসে আলোর উষ্ণতা—কারণ, সত্যের খোঁজ যেন একটা অটুট মশাল, যা চিরকাল অন্ধকারকে জয় করে।

