নেত্রকোণায় একুশে পদকের মহিমাময় আলোয় আলোকিত বরেণ্য কথাসাহিত্যিক খালেকদাদ চৌধুরীর ৪০তম প্রয়াণদিবসে হৃদয় ছুঁয়ে গেল স্মৃতির ঢেউ। বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) রাতে সাধারণ গ্রন্থাগারের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত স্মরণসভায় বাংলা একাডেমির সম্মানিত এই জাতীয় কবি কাজী নজরুলের ঘনিষ্ঠ সঙ্গী, উত্তরআকাশ পত্রিকার সম্পাদক ও অসংখ্য বইয়ের রচয়িতা খালেকদাদের জীবনকথা উঠে এলো আবেগের জোয়ারে। জন্ম ১৯০৭ সালের ২ ফেব্রুয়ারি চানগাঁওয়ে, মৃত্যু ১৯৮৫ সালের ১৬ অক্টোবর—এই ৭৮ বছরের যাত্রায় তাঁর কথাসাহিত্যের মতোই ছিল লোকসাহিত্য সংগ্রহ, নাটক, উপন্যাস এবং রাজনৈতিক সচেতনতার অমর ছাপ। ২০১৮ সালে একুশে পদক পেয়ে তাঁর অবদান চিরকালীন হয়েছে, যেন নজরুলের বিদ্রোহী আত্মা এখনও বেঁচে আছে বাংলার মাটিতে।
সভাপতিত্বে লেখক-নাট্যকার প্রফেসর ননী গোপাল সরকারের, প্রধান অতিথি জেলা প্রশাসক আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জামানের বক্তব্যে উথলে উঠল খালেকদাদের স্মৃতির সমুদ্র। প্রধান আলোচক জেলা বিএনপির সভাপতি অধ্যাপক ডাঃ মোঃ আনোয়ারুল হক বলেন, তাঁর কথাগুলো ছিল যেন নজরুলের গানের মতো—বিদ্রোহী কিন্তু মানবিক, যা শোষিতের হৃদয়ে আলো জ্বালাত। বিশেষ অতিথি অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সুখময় সরকার ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার স্বজল কুমার সরকারের কথায় মিশে গেল আইনের দৃঢ়তা এবং সাহিত্যের নরমতা। আলোচকদের মধ্যে খালেকদাদের পুত্র, বীর মুক্তিযোদ্ধা হায়দার জাহান চৌধুরীর কণ্ঠে ভেঙে পড়ল স্মৃতির দুয়ার—তাঁর বাবার লেখা বইগুলো যেন এখনও জীবন্ত, প্রতিটি পাতায় লুকিয়ে আছে নজরুলের সঙ্গীতের ছন্দ। জেলা প্রেসক্লাবের সম্পাদক মাহবুবুল কিবরিয়া চৌধুরী হেলিম ও দৈনিক ভোরের জাহানের সম্পাদক মোশাররফ হোসেন খসরুর কথায় ফুটে উঠল উত্তরআকাশ পত্রিকার সেই যুগের সাহিত্যিক ঝড়, যা বাংলাকে সমৃদ্ধ করেছে।
খালেকদাদ চৌধুরী সাহিত্য সংসদের সাধারণ সম্পাদক কবি তানভীর জাহান চৌধুরীর সঞ্চালনায় এই সভা হয়ে উঠল এক জীবন্ত ক্যানভাস, যেখানে বক্তারা তাঁর জীবন ও কর্ম নিয়ে আলোচনা করলেন আবেগের ঝরনায়। নজরুলের ঘনিষ্ঠ সহচর হয়ে তাঁর যে অবদান, তা আজও অনুপ্রেরণার উৎস—লোকসাহিত্যের সংগ্রাহক হয়ে গ্রামের গল্পগুলোকে রাজপথে তুলে আনা, সম্পাদক হয়ে পত্রিকাকে সাহিত্যের আলয় করা। নেত্রকোণায় এই স্মরণসভা শুধু শোক নয়, উদ্দীপনার আহ্বান—তাঁর মতো সাহিত্যিকদের স্মৃতি রক্ষায় নতুন প্রজন্মকে জাগিয়ে তোলার। খালেকদাদের প্রয়াণ যেন শেষ নয়, বরং বাংলা সাহিত্যের চিরন্তন যাত্রার এক নতুন অধ্যায়!

