logo
ads

চাকসু নির্বাচন নিয়ে কিছু বিশ্লেষণ

মো. সিরাজুল মনির, চট্টগ্রাম ব্যুরো

প্রকাশকাল: ১৮ অক্টোবর ২০২৫, ০৩:৩২ পি.এম
চাকসু নির্বাচন নিয়ে কিছু বিশ্লেষণ

বর্তমান বাংলা

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচনে ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতৃত্বে ‘সম্প্রীতির শিক্ষার্থী জোট’-এর বিপুল জয় অনেকের কাছে বিস্ময়কর হলেও অনেকের মতে এটি ছিল ‘সময়ের অনিবার্য’ ফলাফল। শিবিরের এই জয়ের নেপথ্যে কারণ কী? আর দীর্ঘ ঐতিহ্য ও বড় সংগঠন হয়েও কেন এমন ভরাডুবির মুখে পড়লো ছাত্রদল? এই ‘উত্থান-পতনের’ পেছনের কারণগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা যাক।

দীর্ঘমেয়াদি প্রস্তুতি
চবি ক্যাম্পাস আশির দশক থেকেই ছাত্রশিবিরের ঐতিহাসিক ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। আওয়ামী লীগ সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদে ২০০৯ সালের পর বিভিন্ন ক্যাম্পাসে তাদের প্রভাব কমলেও চবিতে তারা ছিল টিকে থাকা শেষ ঘাঁটি— ২০১৫ সালের নভেম্বর পর্যন্ত। এরপর হলে নিয়ন্ত্রণ হারালেও সংগঠনের নেতাকর্মীরা নানাভাবে ক্যাম্পাসে তাদের উপস্থিতি ধরে রাখেন।

জুলাই অভ্যুত্থানের আগ পর্যন্ত শিবিরের প্রকাশ্য কোনো কমিটি না থাকলেও প্রতি বছরই গোপনে কমিটি গঠন করে তারা সাংগঠনিক কাঠামো ধরে রেখেছিল। জুলাই বিপ্লবের পর তারা প্রকাশ্যে আসে এবং ধারাবাহিকভাবে শিক্ষার্থীবান্ধব কর্মসূচি নিতে থাকে। পাশাপাশি ‘নৈতিক আন্দোলনগুলোতেও’ শিবিরের নেতারা উচ্চকণ্ঠ ছিলেন।

অন্যদিকে, জুলাই বিপ্লবের পর ছাত্রদল ইতিবাচক রাজনীতির চেষ্টা করলেও দলে ছিল মারাত্মক সমন্বয়হীনতা। কথিত রয়েছে— পাঁচ নেতা চার ভাগে বিভক্ত ছিলেন। এক বছর পেরিয়ে গেলেও ছাত্রদল পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে পারেনি, যা তাদের সাংগঠনিক সক্ষমতাকে দুর্বল করেছে।

প্রার্থী বাছাইয়ে অদূরদর্শিতা
নির্বাচনের আগে থেকেই ক্যাম্পাসে আলোচনা ছিল— ছাত্রদলের কমিটির পাঁচজনের কেউ নির্বাচনে অংশ নেবেন না এবং ভিপি পদে জালাল সিদ্দিকী হচ্ছেন নিশ্চিত প্রার্থী। কিন্তু প্যানেল ঘোষণার দিন দুপুরে হঠাৎ সিদ্ধান্ত বদলে যায়। নির্ধারিত সময়ের দুই ঘণ্টা পর সংবাদ সম্মেলন হয়, আর এই সময়েই প্রার্থী পরিবর্তন করা হয়েছে— এমন অভিযোগ রয়েছে ব্যাপক।

অন্যদিকে শিবির অনেক আগেই প্যানেলের প্রধান দু’টি পদের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে নির্বাচনকেন্দ্রিক কৌশল সাজাতে শুরু করে। কেন্দ্রীয় ও সাবেক নেতাদেরও ছিল মাঠে সক্রিয় সমন্বয়। বিপরীতে ছাত্রদলের সাবেকরাই শেষ মুহূর্তে বিভক্ত হয়ে পড়েন।

প্রচারণায় কৌশলগত অগ্রাধিকার
শিবির প্যানেল পরিচিতি থেকে ভোটগ্রহণের আগমুহূর্ত পর্যন্ত ধাপে ধাপে পরিকল্পিত প্রচারণা চালায়। হলে হলে দায়িত্ব বণ্টন, নিয়মিত যোগাযোগ এবং অভিযোগের জবাবে ইতিবাচক ব্যাখ্যা— এগুলো শিক্ষার্থীদের আস্থা অর্জনে সাহায্য করে। বিপরীতে ছাত্রদলের প্রচারণায় সমন্বয়ের ঘাটতি ছিল দৃশ্যমান।

ডাকসু-জাকসু প্রভাব ও নারী ভোট
ডাকসু ও জাকসুতে শিবিরপন্থী প্যানেলের সাফল্যের ধারাবাহিকতা চাকসুতেও প্রভাব ফেলে। শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিনের অস্থিরতার পর একটি শৃঙ্খলাপূর্ণ নেতৃত্ব চেয়েছেন এবং সেটাই তারা শিবিরের মধ্যে দেখতে পেয়েছেন। উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নারী ভোটারের অংশগ্রহণ এবং নারীপ্রার্থী তুলে ধরে ইতিবাচক বার্তা দেওয়াও শিবিরের জনপ্রিয়তা বাড়িয়েছে।

সামনে চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা
এখন শিবিরের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হলো— এই জনপ্রিয়তা ধরে রাখা। অন্যদিকে ছাত্রদলসহ অন্য সংগঠনগুলোর জন্য এখন প্রয়োজন— মাঠ সংগঠিত করে কাঠামো পুনর্গঠন করা। তবে চাকসুতে ছাত্রদলের একমাত্র বিজয়ী প্রার্থী আইয়ুবুর রহমান জানিয়েছেন, “আসছে ফাল্গুনে আমরা কিন্তু দ্বিগুণ হবো।”

ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ছাত্রদল মাঠে সরব থাকলেও স্বাধীনভাবে রাজনীতি করার সুযোগ পায়নি। টানা নির্যাতন-নিপীড়নের কারণে তারা সাংগঠনিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে। তবে বর্তমান রাজনৈতিক পরিবেশ তুলনামূলক স্বাভাবিক হওয়ায় ছাত্রদলের মানোন্নয়ন ঘটছে এবং ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারলে ভবিষ্যতে তারা আরও ভালো ফলাফল করতে পারবে— এমনটাই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর

হাইলাইটস

বিশেষ সংবাদ