logo
ads

চীনের টেস্ট স্যাটেলাইট লঞ্চ: স্পেসএক্স-এর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ

বিশ্ব ডেস্ক

প্রকাশকাল: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৮:৪১ পি.এম
চীনের টেস্ট স্যাটেলাইট লঞ্চ: স্পেসএক্স-এর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ

সংগৃহীত

চীনের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জিউকুয়ান স্যাটেলাইট লঞ্চ সেন্টার থেকে মঙ্গলবার সকাল ৯:০৬ মিনিটে (বেইজিং সময়) একটি লং মার্চ-২সি ক্যারিয়ার রকেটের মাধ্যমে স্যাটেলাইট ইন্টারনেট প্রযুক্তির জন্য একটি টেস্ট স্যাটেলাইট সফলভাবে মহাকাশে প্রেরণ করেছে। ইউয়ানজেং-১এস (এক্সপেডিশন-১এস) আপার স্টেজ সহ এই রকেটটি স্যাটেলাইটকে তার নির্ধারিত কক্ষপথে পৌঁছে দিয়েছে। এটি লং মার্চ সিরিজের ৫৯৫তম ফ্লাইট মিশন। এই লঞ্চটি চীনের স্যাটেলাইট ইন্টারনেট অ্যাম্বিশনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক, যা বিশ্বব্যাপী টেলিকম সেক্টরে নতুন প্রতিযোগিতার সূচনা করেছে।

অন্যান্য সেবা প্রতিষ্ঠানের জন্য চ্যালেঞ্জের মাত্রা
চীনের এই সফল লঞ্চটি বিশ্বের অন্যান্য স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে, বিশেষ করে ইলন মাস্কের স্পেসএক্সের স্টারলিঙ্কের মতো প্রভাবশালী খেলোয়াড়দের। চীনের 'কিয়ানফান' (থাউজেন্ড সেইলস) প্রকল্পের অংশ হিসেবে এই টেস্ট স্যাটেলাইটটি লো-আর্থ অরবিট (এলইও) ভিত্তিক ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্কের প্রযুক্তিগত যাচাই এবং পরীক্ষা করার জন্য ব্যবহার করা হবে, যা সরাসরি মোবাইল ফোন থেকে স্যাটেলাইটে কানেকশন এবং স্পেস-গ্রাউন্ড নেটওয়ার্ক ইন্টিগ্রেশনের উপর ফোকাস করেছে। এই প্রকল্পটি ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ ৬০০টিরও বেশি স্যাটেলাইট লঞ্চ করার পরিকল্পনা করছে এবং ২০৩০ সালের মধ্যে ১৪,০০০টি স্যাটেলাইটের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী কভারেজ প্রদান করবে।অন্যান্য সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য এর চ্যালেঞ্জের মাত্রা উচ্চ, কারণ:
প্রতিযোগিতামূলক বাজার চাপ: স্টারলিঙ্কের বর্তমানে ৭,০০০টিরও বেশি স্যাটেলাইট রয়েছে এবং এটি ৪২,০০০টি পর্যন্ত বিস্তারের পরিকল্পনা করছে। চীনের গুয়োওয়াং (গুয়োওয়াং) এবং হংহু-৩ প্রকল্পসহ মোট ৩৮,০০০টি এলইও স্যাটেলাইটের পরিকল্পনা এই বাজারে চীনকে একটি শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী করে তুলেছে। এটি গ্লোবাল টেলিকম কোম্পানিগুলোর (যেমন অ্যামাজনের প্রজেক্ট কুইপার বা ইউরোপের ওয়ানওয়েব) জন্য মার্কেট শেয়ার হারানোর ঝুঁকি বাড়িয়েছে, বিশেষ করে এশিয়া, আফ্রিকা এবং লাতিন আমেরিকায় যেখানে চীন ইতিমধ্যে অবকাঠামো তৈরি করেছে।
প্রযুক্তিগত এবং অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ: চীনের স্যাটেলাইটগুলো সেন্সরশিপ-ফ্রেন্ডলি হিসেবে ডিজাইন করা হয়েছে, যা পশ্চিমা দেশগুলোর জন্য নিরাপত্তা উদ্বেগ তৈরি করছে। এছাড়া, চীনের লঞ্চ ক্যাপাসিটি এখনও পুনঃব্যবহারযোগ্য রকেটের অভাবে সীমিত, কিন্তু সরকারি সমর্থনের কারণে এটি দ্রুত বাড়ছে। এটি অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে খরচ কমাতে এবং লঞ্চ ফ্রিকোয়েন্সি বাড়াতে বাধ্য করবে, যা বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে স্টারলিঙ্কের মতো সেবার দাম কমিয়ে প্রতিযোগিতা করতে হবে।
ভূ-রাজনৈতিক ঝুঁকি: চীনের এই অ্যাডভান্সমেন্ট ইউক্রেন যুদ্ধে স্টারলিঙ্কের সামরিক ব্যবহার দেখে চীনকে উদ্বুদ্ধ করেছে, যা মিলিটারি এবং সিভিলিয়ান সেক্টরে দ্বৈত ব্যবহারের সম্ভাবনা তৈরি করছে। এটি গ্লোবাল টেলিকম নিয়ন্ত্রকদের জন্য নতুন নিয়মকানুন এবং অরবিটাল স্লটের প্রতিযোগিতা বাড়াবে।

সামগ্রিকভাবে, এই লঞ্চটি অন্যান্য সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য 'উচ্চ' থেকে 'অত্যধিক' লেভেলের চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে, কারণ চীনের সরকারি ব্যাকিং এবং কম খরচের মডেল বিশ্বব্যাপী মার্কেটে দ্রুত প্রসারণের সুযোগ দিচ্ছে।

চীনের অন্যান্য সেবা প্রতিষ্ঠানের উপর নির্ভরশীলতা কমাতে সাহায্য
এই টেস্ট স্যাটেলাইট লঞ্চ চীনকে অন্যান্য দেশের সেবা প্রতিষ্ঠান (যেমন স্টারলিঙ্ক বা পশ্চিমা টেলিকম) এর উপর নির্ভরশীলতা কমাতে উল্লেখযোগ্যভাবে সাহায্য করবে, যা চীনের ডিজিটাল সার্বভৌমত্ব এবং জাতীয় নিরাপত্তার জন্য একটি কৌশলগত লাভ। 
স্বয়ংসম্পূর্ণ ইন্টারনেট অবকাঠামো: চীনের গ্রেট ফায়ারওয়ালের মতো সেন্সরশিপ সিস্টেম স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিস্তারিত হবে, যা পশ্চিমা প্রোভাইডারদের উপর নির্ভরতা দূর করে। এটি চীনের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগকে সুরক্ষিত করবে এবং বিদেশী ইন্টারনেট অ্যাক্সেসের ঝুঁকি কমাবে।
গ্লোবাল প্রভাব বৃদ্ধি: বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের অংশ হিসেবে, চীন এশিয়া, আফ্রিকা এবং লাতিন আমেরিকায় নিজস্ব স্যাটেলাইট সেবা প্রদান করে পশ্চিমা প্রভাব কমাতে পারবে। উদাহরণস্বরূপ, ব্রাজিল, মালয়েশিয়া এবং থাইল্যান্ডের সাথে চুক্তি ইতিমধ্যে স্বাক্ষরিত হয়েছে, যা চীনকে স্বাধীনভাবে ডিজিটাল অবকাঠামো নির্মাণ করতে সাহায্য করবে।
সামরিক এবং অর্থনৈতিক সুবিধা: এটি চীনের মিলিটারি কমিউনিকেশনকে শক্তিশালী করবে এবং টেলিকম অপারেটরদের (যেমন চায়না ইউনিকম) নতুন লাইসেন্স প্রদান করে স্থানীয় সেবা বৃদ্ধি করবে। ফলে, চীনের ২.৪ মিলিয়নেরও বেশি ইউজার ইতিমধ্যে এই সেবায় যোগ দিয়েছে, যা বিদেশী নির্ভরতা ৩০-৫০% কমাতে পারে।

চীনের শিল্প ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রক (এমআইআইটি) এর নির্দেশিকা অনুসারে, ২০৩০ সালের মধ্যে ১০ মিলিয়নেরও বেশি ইউজার এবং ডিরেক্ট-টু-সেল সার্ভিস লক্ষ্য করা হচ্ছে, যা চীনকে পুরোপুরি স্বনির্ভর করে তুলবে।
এই লঞ্চটি চীনের স্পেস অ্যাম্বিশনের প্রতীক, যা বিশ্বব্যাপী ডিজিটাল ল্যান্ডস্কেপ পরিবর্তন করতে পারে। (হুয়াক্সিয়া, ২০২৫-০৯-১৬ ১৪:৪১:১৭)

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর

হাইলাইটস

বিশেষ সংবাদ