logo
ads

চীন টিকটক চুক্তিকে বলছে ‘জয়’

আন্তর্জাতিক ডেস্ক ॥

প্রকাশকাল: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০১:৪৯ পি.এম
চীন টিকটক চুক্তিকে বলছে ‘জয়’

সংগৃহীত

টিকটকের মার্কিন অপারেশনের মালিকানা স্থানান্তরের প্রস্তাবিত কাঠামোগত চুক্তিকে ‘উইন-উইন’ বা দুই পক্ষের জন্যই লাভজনক বলে ঘোষণা করেছে চীনের সরকার ও রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দীর্ঘদিনের বাণিজ্যিক উত্তেজনার ভেতরে এই সমঝোতাকে তারা একটি বিরল অগ্রগতি হিসেবে দেখছে। তবে বিশ্লেষকদের মতে, এতে মূল কৌশলগত জয়টা আসলে বেইজিংয়ের হাতেই গেছে।

চীনের সাইবারস্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের ডেপুটি ডিরেক্টর ওয়াং জিংতাও এক বিবৃতিতে বলেন, এই চুক্তির মাধ্যমে টিকটকের অ্যালগরিদম ও বৌদ্ধিক সম্পত্তি (আইপি) সম্পূর্ণ হস্তান্তর করা হচ্ছে না। বরং লাইসেন্সিংয়ের মাধ্যমে মার্কিন পক্ষ ব্যবহার করতে পারবে, তবে নিয়ন্ত্রণ থাকবে বাইটড্যান্সের হাতে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি চীনের প্রযুক্তি ও প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা রক্ষার জন্য বড় সুরক্ষা বলেই বিবেচিত।

এ সমঝোতার ফলে টিকটক যুক্তরাষ্ট্রের বিশাল বাজারে টিকে থাকতে পারবে। বর্তমানে দেশটিতে অ্যাপটির সক্রিয় ব্যবহারকারী প্রায় ১৭০ মিলিয়ন। ২০২৪ সালে বাইটড্যান্সের মোট আয়ের অর্ধেক এসেছে সেখান থেকে, যা প্রায় ৩০ বিলিয়ন ডলার। ব্যান হলে এই রাজস্ব হারানোর ঝুঁকি ছিল।

শুধু প্রযুক্তি ও বাজার রক্ষা নয়, চুক্তিকে বাণিজ্য আলোচনার হাতিয়ার হিসেবেও দেখছে বেইজিং। বিশ্লেষকদের মতে, এই কাঠামো সময় কিনে দিলো চীনকে। মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে শুল্ক কমানো, বিনিয়োগ বাড়ানো ও কৃষি আমদানি নিয়ে নতুন করে দর-কষাকষির সুযোগ পাবে তারা। সাবেক বিশ্বব্যাংক কর্মকর্তা বার্ট হোফম্যান মন্তব্য করেছেন, “চীন যে এই আলোচনাকে গভীর ও গঠনমূলক বলছে, সেটাই তাদের সন্তুষ্টির ইঙ্গিত।”

একই সঙ্গে টিকটকের এই চুক্তি ভবিষ্যতে অন্যান্য চীনা কোম্পানির জন্য ‘টেমপ্লেট’ হতে পারে বলে মনে করছেন টেক বিশেষজ্ঞরা। ইলেকট্রিক গাড়ি নির্মাতা বিওয়াইডি বা ব্যাটারি উৎপাদক সিএটিএল-এর মতো প্রতিষ্ঠানও এ ধরনের লাইসেন্সিং মডেল ব্যবহার করে মার্কিন বাজারে প্রযুক্তি রপ্তানির পথ খুঁজে পেতে পারে।

তবে ঝুঁকিও রয়ে গেছে। চুক্তি বাস্তবায়নের আগে মার্কিন কংগ্রেসের অনুমোদন প্রয়োজন। রিপাবলিকান আইনপ্রণেতারা অভিযোগ তুলেছেন, লাইসেন্সিংয়ের আড়ালে চীনা প্রভাব টিকটকের ওপর বহাল থাকতে পারে। এ নিয়ে আগামী ৩০ থেকে ৪৫ দিনের মধ্যে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা।

বিশ্লেষকরা বলছেন, মার্কিন সংস্করণ কিছুটা সীমিত বা ‘স্ট্রিপড-ডাউন’ হতে পারে, যাতে ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা কম বৈচিত্র্যময় হয়। কিন্তু টিকটকের মূল প্রযুক্তি—যা ‘ক্রাউন জুয়েল’ হিসেবে পরিচিত—সেটি বেইজিংয়ের কাছেই থাকবে।

সব মিলিয়ে, চীনের কাছে টিকটক চুক্তি শুধু একটি অ্যাপ রক্ষার সাফল্য নয়; বরং প্রযুক্তি সুরক্ষা, অর্থনৈতিক স্বার্থ সংরক্ষণ ও কূটনৈতিক লিভারেজের বড় কৌশলগত বিজয়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর

হাইলাইটস

বিশেষ সংবাদ