logo
ads

ভারতের গ্রামীণ অঞ্চলে এআই প্রশিক্ষণ: নতুন কর্মসংস্থানের দিগন্ত খুলছে, বাংলাদেশও নিতে পারে উদ্ভাবনী উদ্যোগ

প্রযুক্তি প্রতিবেদক

প্রকাশকাল: ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ১০:৫২ এ.এম
ভারতের গ্রামীণ অঞ্চলে এআই প্রশিক্ষণ: নতুন কর্মসংস্থানের দিগন্ত খুলছে, বাংলাদেশও নিতে পারে উদ্ভাবনী উদ্যোগ

সংগৃহীত ছবি

ভারতের দক্ষিণ-পূর্বের বিরুধুনাগর শহর, যার হাজার বছরের প্রাচীন মন্দিরগুলি বিখ্যাত, বর্তমানে আরেকটি আধুনিক কার্যক্রমের কেন্দ্র হয়ে উঠেছে—কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) প্রশিক্ষণ ও ডেটা লেবেলিং।

স্থানীয় প্রযুক্তি কর্মী মোহন কুমার জানান, “আমি AI অ্যানোটেশনে কাজ করি। বিভিন্ন উৎস থেকে ডেটা সংগ্রহ করি, লেবেল করি এবং মডেলকে প্রশিক্ষণ দিই যাতে এটি জিনিস চিনতে ও পূর্বাভাস দিতে পারে। সময়ের সাথে সাথে মডেলগুলি স্বয়ংক্রিয়ভাবে সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হয়।”

ভারত বহু বছর ধরে আউটসোর্সিং ও আইটি সাপোর্টের জন্য পরিচিত, যেখানে বেঙ্গালুরু ও চেন্নাই মূল কেন্দ্র। তবে সম্প্রতি অনেক প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ও ছোট শহরে কাজ স্থানান্তর করছে, যেখানে কর্মী ও স্থান খরচ কম। এই প্রবণতাকে বলা হয় “ক্লাউড ফার্মিং”, যা এআই-এর প্রসারের সাথে আরও ত্বরান্বিত হয়েছে।

ডেসিক্রু ও নেক্সটওয়েলথ এই খাতে অগ্রণী প্রতিষ্ঠান। ডেসিক্রু প্রধান নির্বাহী মন্নিভান্নান জে কে বলেন, “আমরা বুঝতে পেরেছি যে মানুষকে শহরে আসতে বাধ্য করার বদলে আমরা তাদের নিজ গৃহে কাজের সুযোগ দিতে পারি। গ্রামীণ যুবকদের জন্য এই কর্মসংস্থান তাদের জীবনযাত্রায় বড় পরিবর্তন আনছে।”

ডেসিক্রুর কর্মীর প্রায় ৭০% নারী, যারা প্রথমবারের মতো বেতনভিত্তিক চাকরি পাচ্ছেন। অনুরূপভাবে, নেক্সটওয়েলথের ৬০% কর্মীও নারী। প্রতিষ্ঠানটির সহ-প্রতিষ্ঠাতা মিথিলি রমেশ বলেন, “ছোট শহরগুলো থেকে স্নাতকের সংখ্যা ৬০% হলেও, অধিকাংশ IT কোম্পানি মেট্রো শহর থেকেই নিয়োগ নেয়। আমাদের লক্ষ্য হলো এই অপ্রচলিত প্রতিভাকে কাজে লাগানো।”

এই প্রতিষ্ঠানগুলি মূলত ডেটা ট্রান্সক্রিপশন, অ্যানোটেশন ও ভ্যালিডেশন-এ নিয়োজিত। এই কাজগুলো AI মডেলকে ভাষা, ডায়ালেক্ট ও প্রসঙ্গে দক্ষ করে তোলে।

বিশেষজ্ঞ কেএস বিশ্বনাথন বলেন, “সিলিকন ভ্যালি AI ইঞ্জিন তৈরি করছে, কিন্তু দিন-প্রতি-দিনের কার্যক্রম যা সেই ইঞ্জিনকে নির্ভরযোগ্য রাখে, তা ভারতের ক্লাউড ফার্মিং শিল্প থেকে আসে। ছোট শহর ভারত আবারও IT-এর জন্য বিশ্ব কেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে।”

যদিও এই উদ্যোগে ইন্টারনেট ও ডেটা নিরাপত্তা বড় চ্যালেঞ্জ, সফলতার ক্ষেত্রে বিশ্বস্ততা ও দক্ষতা প্রমাণ করাই মূল বিষয়। ডানালক্ষ্মী বিজয় নামের কর্মী জানান, “আমরা AI মডেলকে শিখাই যাতে গ্রাহকের অনলাইন শপিং অভিজ্ঞতা আরও সহজ ও নির্ভুল হয়। আমাদের কাজ সরাসরি ব্যবহারকারীর সুবিধার জন্য।”

 বাংলাদেশের গ্রামীণ এলাকাগুলোর উচ্চ শিক্ষিত তরুণ সংখ্যা বাড়ছে, তবে শহরের বাইরে প্রযুক্তি ও আইটি কাজের সুযোগ সীমিত। ভারতের উদাহরণ অনুসরণ করে বাংলাদেশ গ্রামীণ এআই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন: জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে এআই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে।

ক্লাউড ফার্মিং উদ্যোগ: দেশের ছোট শহরে বা গ্রামে ডেটা লেবেলিং, ট্রান্সক্রিপশন ও মডেল প্রশিক্ষণ কাজ আনা যেতে পারে।

নারী ও তরুণদের অন্তর্ভুক্তি: স্থানীয় যুবকদের চাকরি দান করে আয় বৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়।

বেসরকারি-সরকারি সহযোগিতা: আন্তর্জাতিক ক্লায়েন্টদের সঙ্গে কাজের মাধ্যমে দক্ষতা ও আয়ের সুযোগ তৈরি করা যেতে পারে।

এই উদ্যোগ বাংলাদেশের ডিজিটাল অর্থনীতি ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করতে পারে, একই সঙ্গে গ্রামীণ অঞ্চলের যুবসমাজকে প্রযুক্তি ক্ষেত্রে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে।

সূত্র: BBC Technology.

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর

হাইলাইটস

বিশেষ সংবাদ